পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস থেকে নিরাপত্তার অন্যতম উপায় টিকা। দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সরকার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজের চুক্তি করে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ৭০ লাখের পর আর কোন টিকা দিতে পারেনি সিরাম। ফলে এই টিকা নিয়ে একরকম অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে টিকা না পেলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সরবরাহ সংকটের কারণে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারছেন না প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি। যদিও সিরামকে নিয়েই বসে নেই সরকার। করোনার টিকা সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ করেছে। ইতোমধ্যে রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-ভি’ এবং চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি কোভ্যাক্স এবং ফাইজারের টিকা আনার বিষয়েও অগ্রগতি রয়েছে। এছাড়া চীনের উপহারের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা ঈদের আগেই দেশে আসছে। যদিও চীন থেকে টিকা কেনার দরকষাকষি এখনো শেষ হয়নি। ফলে কেনা টিকা কবে নাগাদ এসে পৌঁছাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এদিকে চীন এবং রাশিয়ার টিকা দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা আছে এবং এগুলো হলো ইনসেপ্টা, হেলথ কেয়ার ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা কাঁচামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে টিকা উৎপাদন করা সম্ভব। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলে মাসে দেড় কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা উৎপাদন করার সু-খবর দিয়েছে সিরাম। ইতোমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট টিকা তৈরির বিষয়ে বাংলাদেশে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সিড বা বাল্ক এনে টিকা তৈরির বিষয়ে দেশের বাইরে যোগাযোগ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেছেন, চীনের টিকা সিনোফার্মের টিকা দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে ইনসেপ্টার সাথে যোগাযোগ হবে। চীনা ও রাশানরা এসে দেখবেন। তারা এসেস করবেন। এরপর তাদের মধ্যে সমঝোতা হবে টিকা উৎপাদনের জন্য। মাহবুবুর রহমান বলেন, ইনসেপ্টার একাই প্রতি মাসে ৮ মিলিয়ন টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। চীনা টিকা আসার পর এক হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তার সেফটিসহ আনুষঙ্গিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র মতে, দেশের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। আর গুটিকয়েক যে কয়টি প্রতিষ্ঠান দেশেই টিকা উৎপাদন ও সরবরাহ করতে সক্ষম, ইনসেপ্টা সেগুলোর মধ্যেও এগিয়ে। মাসে তিন-চারদিনের উৎপাদন কার্যক্রম দিয়েই চাহিদা পূরণ করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে তাদের সক্ষমতার ৯০ শতাংশই পড়ে থাকছে অব্যবহৃত। অব্যবহৃত এ সক্ষমতা করোনার টিকা উৎপাদনে ব্যবহার করা সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে করোনার টিকা উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে দেশের আরো দুটি প্রতিষ্ঠান পপুলার ও হেলথকেয়ারের। ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসÑএ তিন প্রতিষ্ঠান মাসে দেড় কোটি ডোজ করোনার টিকা উৎপাদনে সক্ষম।
খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনার-পূর্ব পরিস্থিতিতে বছরে টিকার বাজার ছিল ২০০-২৫০ কোটি টাকার। দেশে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতায় ভিন্নতা রয়েছে। এর একটির প্রক্রিয়া শুরু হয় স্থানীয়ভাবে উৎপাদন পর্যায় থেকে। আর অন্যগুলোর ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর, যারা ফিলিং ও টেস্টিংয়ের পর টিকা বাজারজাত করতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন করে বাজারজাতের সক্ষমতা রয়েছে শুধু ইনসেপ্টার। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস টিকা সরবরাহ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনের ধাপ শুরু হয় ফিলিং থেকে। পরের ধাপে টেস্টিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে তাদের। সর্বশেষ গত বছর টিকা সক্ষমতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শেষ করেছে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
স্থানীয়ভাবে টিকার পূর্ণ উৎপাদন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, আমরা সেই চেষ্টা করেছি। সরকারও আমাদের জন্য লিখেছে, আমরাও লিখছি। এখন পর্যন্ত সেটা হয়নি। এখনই দুটি বা তিনটি কোম্পানি তাতে সম্মতি দিলেও সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনে যেতে পারছি না। টিকা উৎপাদন শুরু করতে সময় লাগবে দু-তিন মাস। এরপর টিকা পরীক্ষা করে ছাড় প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম ১৪-১৫ দিন সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০-২১ দিন পর্যন্তও সময় লাগতে পারে। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন মাস বা চার মাস যদি সময় লাগে।
বর্তমানে হেপাটাইটিস-বি, টিটেনাস, অ্যান্টি-রেবিসসহ কয়েকটি টিকা উৎপাদন ও বাজারজাত করছে সক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা প্রতিরোধী টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা মাসে দেড় কোটি ডোজ। এর মধ্যে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৮০ লাখ ডোজ উপাদন করতে পারবে। হেলথকেয়ার পারবে ৫০ লাখ ডোজ। আর মাসে ২০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পারবে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস।
বর্তমানে উৎপাদন অব্যাহত রাখার পরও প্রতি মাসে ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডোজ উৎপাদন করতে পারব। পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা পেলে তা ৫০ লাখে নেয়া সম্ভব। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার টিকা উৎপাদনে গেলে চলমান উৎপাদন ব্যাহত হবে না।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পারবে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে জানিয়েছে। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ টিকার সক্ষমতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর ন্যূনতম দুই বছর আগে টিকা উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে হেলথকেয়ারের টিটি ও হেপাটাইটিস-বি টিকা বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বাপি) ট্রেজারার মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, টিকার বিষয়টি দেখভাল করছে সরকার। সরকার চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
টিকা উৎপাদনে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারদের সঙ্গে আলোচনায় তারা জানিয়েছেন, টিকা নিশ্চিত করতে জোর চেষ্টা করছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে অনুমোদিত টিকার অংশীদার খোঁজ করতে। সেই চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেয়া হয়। সিরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুটনিক-ভি ও ২৯ এপ্রিল চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্টের উৎপাদিত সিনোফার্মের টিকাকে জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব টিকা আমদানির পাশাপাশি সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের বিষয়ে পরিকল্পনা করছে। সরকার স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে ডেভেলপারদের সহায়তা দিতে অথবা টিকা উদ্ভাবকদের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনে যাবে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।