Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগ-বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মুখোমুখি

কে হবেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি পদ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা পূর্বতন সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনকে বারের সভাপতি ঘোষণা করেছেন। এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর ইন্তেকালে পদটি শূন্য হয়। শূণ্যতা পূরণে নির্বাচিত ব্যক্তি নাকি মনোনীত ব্যক্তিকে এ পদে বসানো হবে-এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন দুই রাজনৈতিক মেরুতে অবস্থানরত আইনজীবীরা।
বারের নির্বাচিত বিএনপিপন্থি সদস্যরা বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই সম্পাদক রূহুল কুদ্দুস কাজল মঙ্গলবারের বিশেষ সাধারণ সভা স্থগিত করেন। কোনো ধরণের আলোচনা বা সেখানে সভাপতি পদে কোনো নির্বাচন হয়নি। অন্যদিকে সমিতির আওয়ামীপন্থি অংশ দাবি করেছে, গণতান্ত্রিকভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতি মনোনীত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি পদ পূরণের বিধান রয়েছে। সে লক্ষ্যে উক্ত পদ পূরণের জন্য করণীয় ঠিক করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৪ মে সমিতির অডিটোরিয়ামে বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ওই সভায় সভাপতির অনুপস্থিতিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন সভাপতিত্ব করবেন এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমিতির অপর সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজেকে বিশেষ সাধারণ সভার সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। উপস্থিত সদস্যরা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব কে করবেন বিষয়টি সুরাহা করে সভা শুরুর জন্য সম্পাদককে অনুরোধ জানান। এ পর্যায়ে সভাপতিত্ব কে করবেন এ বিষয় নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সভার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস বলেন, কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভার কাজ মুলতবি করা হয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সভা মুলতবি করার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সম্পাদকসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতির পদ পূরণ করব।

তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম, কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা পরবর্তী সময়ে অতি উৎসাহী হয়ে সমিতির সভাপতির কক্ষে নিজেই সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতিকে (এ এম আমিন উদ্দিন, বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেল) ২০২১-২২ সালের বাকি মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। যা সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী।

বিএনপিপন্থি এ আইনজীবীদের এই নেতা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই বিশেষ সাধারণ সভা সম্পাদক স্থগিত করেছেন। কোনো ধরণের আলোচনা কিংবা সেখানে সভাপতি পদে কোনো নির্বাচন হয়নি। এছাড়া বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছিল সভাপতি পদ পূরণে করণীয় নির্ধারণের জন্য, নির্বাচনের জন্য নয়। এ সময় বিএনপির প্যানেল থেকে নির্বাচিত আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির পাঁচ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এর পরই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতির আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা। তিনি বলেন, বারের গঠনতন্ত্র ১৬ ধারা অনুযায়ী সভাপতি পদে যেভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে তা যথাযথ। বিশেষ সাধারণ সভায় এ এম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করা হয়। সেখানে অন্য কারও নাম উচ্চারণ না হওয়ায় তিনি সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

সভাপতি পদে নতুন করে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরাসরি এ পর্যায়ে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সুযোগ গঠনতন্ত্রে নেই। এ সময় আওয়ামীপন্থি প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমিতির ৬ জন কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে এ পদ পূরণে করণীয় ঠিক করতে গত ৪ মে বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়। কিন্তু কে হবেন বিশেষ ওই সাধারণ সভার সভাপতি এই বিতর্কে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মাঝে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোল থেকে ধাক্কাধাক্কি। এতে পন্ড হয়ে যায় সুপ্রিম কোর্ট বারের আহূত বিশেষ সাধারণ সভা।

সভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা দাবি করেন, সাধারণ সভায় কণ্ঠভোটে এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক বিএনপি সমর্থিত ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, হট্টগোলের কারণে বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল বেলা ২টায় আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল বিতন্ডা শুরু হয়। সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব কে করবেন তা নিয়েই সূচনা হট্টগোলের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে সভাপতি নির্বাচনের করণীয় ঠিক করতে বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়। সভার শুরুতে সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন যে, বারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি সভা পরিচালনা করবেন। তখন একপক্ষ বিরোধীতা শুরু করলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন তিনি সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এ সময় কাজল বলেন, ওনাকে সভাপতিত্ব করার কোনো কার্যবিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহ-সভাপতি রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম কোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ