Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিকলে বাঁধা এক যুগ

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রায় এক যুগ ধরে শিকলবন্দি জীবন পার করছে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর আল্পনা আক্তার (২০) নামে এক তরুণী। দরিদ্রতার কারণে আল্পনার সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে না পারায় অসুস্থ জীবন-যাপন করছে আল্পনা। চিকিৎসার অভাবে সুস্থ না হতে পেরে স্কুলে আর যাওয়া হয়নি আল্পনার। এখন প্রায় ১২ বছর ধরে তার জীবন কাটছে শিকলবন্দি অবস্থায়। আল্পনা উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামের ছিদ্দিক আলী ওরফে চাক্কু মিয়া এবং আছিয়া বেগম দম্পতির মেয়ে।

জানা যায়, আল্পনার বাবা ছিদ্দিক আলীর এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে আল্পনা তৃতীয়। ২০০১ সালে আল্পনার জন্ম হয়। ২০০৮ সালে ৩য় শ্রেণিতে পড়াবস্থায় ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যায় আল্পনা। সেখানে হঠাৎ করেই জ্বর উঠে তার শরীরে। এরপর থেকেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এই মেয়ের। এরপর তাকে নানা স্থানে চিকিৎসা করালেও তেমন কোনো ফল মেলেনি, বরং বাড়তেই থাকে অসুখ। ২০০৯ সাল থেকে আল্পনাকে শিকলে বন্দি করে রাখে পরিবার। দরিদ্রতার কারণে উন্নত চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারেনি বাবা-মা। আল্পনার বাবা ছিদ্দিক আলী ওরফে চাক্কু মিয়া একজন ভ‚মিহীন দরিদ্র মানুষ। শারীরিকভাবে তিনিও অসুস্থ। তাদের থাকার একটি ঘর পর্যন্ত ছিল না। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপহার দুর্যোগসহনীয় একটি ঘর পেয়েছেন ছিদ্দিক আলী। ওই ঘরের একটি কক্ষেই শিকলে বন্দি হয়ে থাকছে আল্পনা। বাবা ছিদ্দিক আলী অসুস্থ থাকায় মা আছিয়া পরের বাড়ি থেকে চেয়ে-চিন্তে সাহায্য তুলে সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন অনেক কষ্টে। ঘরবন্দি থাকার পর আল্পনা অনেক সময় শিকলসহ যখন বেরিয়ে আসে, তখন স্থানীয়দের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়। তাকে নিয়ে তার পরিবারটি বেশ কষ্টে আছে। অথচ সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো হতে পারে আল্পনা। ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। আল্পনার বাবা সিদ্দিক আলী বলেন, ‘আমি আমার মেয়েডারে চিকিৎসা করাইতে অনেক টেহা খরচ করছি। এখন আর হাতে টেহা নাই। মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাইতে আমি ১০ শতাংশ জমি, পাঁচটা গরু বিক্রি করেছি। ২০ হাজার টেহা ঋণও করেছি। আমার ইচ্ছা থাকার পরও টেহার অভাবে মেয়েকে ভালা কোনো ডাক্তার দেহাইতে পারতেছি না’।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, শিকলবন্দি থাকার বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ‘আমরা আল্পনার পরিবারের কথা শুনে সরকার থেকে একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়েছি। কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাতা এখনো পায়নি। আমরা শিগগিরই আল্পনার জন্য মাসে মাসে ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়ার চেষ্টা করছি। ওর মা’র নামে কোন কার্ড দেয়া যায় কি না তা ভেবে দেখছি। এছাড়া আমরা আল্পনাকে বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবো। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন বলেন, কাউকে শিকলবন্দি করে রাখা খুবই অমানবিক কাজ। মানসিক সমস্যার চিকিৎসা তো আছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আল্পনার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে বাড়িতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম পরিদর্শন করে এসেছে। আমরা আল্পনাকে বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ