করোনা মহামারির ভয়াবহতার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতি এখনো জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বৃদ্ধি করছে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য বিভাগও চরম দুঃশ্চিন্তায়। টানা ১৪ মাস ধরে করোনার সাথে লড়াই করার মধ্যেই ডায়রিয়া মহামারি নিয়েও গোটা দক্ষিণাঞ্চলে স্বাস্থ্য বিভাগের দূর্ভাবনা বাড়াচ্ছে। সরকারী হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৫ দিনে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এসময়ে ভোলা ও পটুয়াখালীতে মারা গেছেন দুজন। এই প্রথম দ্বীপজেলাটিতে কোন ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু হল। ইতোমধ্যে ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার অতিক্রম করে আরো ১৯২ জন যুক্ত হয়েছে। যা দক্ষিনাঞ্চলের সর্বোচ্চ। সোমবার পটুয়াখালীর বাউফলে পিয়রা বেগম নামে ৩৫ বছরের এক নারী ডায়রিয়ায় মারা গেছে। এনিয়ে জেলাটিতে ডায়রিয়ায় ৫ জনের মৃত্যু হল । আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ১০১ জন।
মঞ্জুরীকৃত পদের মাত্র ৪৫ ভাগ চিকিৎসক ও ৫৫ ভাগের মত চিকিৎসা কর্মী নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলে স্বাস্থ্য বিভাগ যেখানে কোন মতে সেবা কার্যক্রমের জানান দিচ্ছে, সেখানে করোনা আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী এখনো সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তারমধ্যে ডায়রিয়ার ভয়াবহ বিস্তার গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনস্বাস্থ্যকে বড় ধরনের ঝুকির মধ্যে ফেলছে।
আর সরকারী হিসেবে এঅঞ্চলে গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৫৬৫ জনে। মারা গেছেন ১৪ জন। যারমধ্যে বরিশাল ও পটুয়াখালীতে ৫ জন করে এবং বরগুনায় ৩ ও ভোলাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এখনো দক্ষিনঞ্চলের প্রায় সব সরকারী হাসপাতালে প্রতদিনই উপচে পড়ছে ডায়রিয়া রোগী। ৪ শয্যার বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই অন্তত ৩০ জন করে রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। এর বাইরে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগেও বিপুল সংখ্যক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন ।
এখনো যেসব আক্রান্ত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা গ্রহন করছেন, তাদের কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। তবে সে সংখ্যাটা সরকারী হিসেবের কয়েকগুন বলে জানা গেছে। আর গত এক মাসেই দক্ষিণাঞ্চলে ২৮ হাজার ৪৬১ জন ডায়রিয়া অক্রান্ত হয়েছেন। আর এ যে ১৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে তার সবই গত একমাসে। তবে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও এসময়ে মারা গেছেন ৩ জন।
আক্রন্ত ছিল ৬ হাজার ৬৫৮।
দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলার মধ্যে ভোলা ও পটুয়াখালীর অবস্থা বেশী ঝুকিপূর্ণ। গত ৫ দিনে দ্বীপজেলা ভোলাতেই নতুন করে ১ হাজার ১৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবারে মারা গেছেন ১ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ১৯২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত বলে সরকারীভাবে নথিভ’ক্ত করা হয়েছে। পটুয়াখালীতেও এসময়ে নতুন করে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৪ জন। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ৫ জন ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ১০১। পিরোজপুরেও গত ৫ দিনে আরো ৬৯৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারী হিসেবে জেলাটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৫৭ হলেও কোন মৃত্যু সংবাদ নেই।
বরগুনাতেও গত ৫দিনে আরো ৬৩৭ জন সহ মোট ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৫২০ জন। জেলাটিতে এপর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন।
বরগুনা ও পটুয়াখালীর বেশীরভাগ খালের পানিতে ডায়রিয়ার জীবানুর সন্ধান পেয়েছে ঢাকার আইইডিসিআর-এর কারিগরি পর্যবেক্ষক দল। পাশাপাশি সাগরের লবনাক্ত পানিতে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদী ও খালÑবিলের পানিও দুষিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি লাগাতার অনাবৃষ্টি আর নজিরবিহীন দাবদাহে ডায়রিয়া আক্রান্তরা দ্রুত পানি শূণ্যতার কবলে পড়ছে বলে চিকিৎসকগন আক্রান্ত হবার সাথে সাথে খাবার স্যালাইন সহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন।
ঝালকাঠীতে গত ৫ দিনে আরো ৪২৮ জন সহ এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৭০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।
মহানগরী সহ বরিশাল জেলায় গত ৫ দিনে প্রায় পাঁচ শতাধীক নারী-পুুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। জেলাটিতে এপর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ৬ হাজার ৪২৫ জন বলে জানা গেছে। মারা গেছেন ৫জন। যাদের সকলেই বাকেরগঞ্জ উপজেলার বলে জানা গেছে।
তবে ডায়রিয়া আক্রান্তদের সরকারী হাসপাতাল সমুহে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করনে দক্ষিণাঞ্চলে আইভি স্যালাইনের মজুদ এখনো যথেষ্ঠ সন্তোষজনক বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলাÑউপজেলাতে ১ হাজার সিসি ও ৫শ সিসি’র প্রায় ১ লাখ ব্যাগ আইভি স্যলাইনের মজুদ রয়েছে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।