পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের ঘোষণা অনুসারে লকডাউন চলছে। তা সত্তে¡ও গতকাল রাজধানীর রাস্তায় দেখা গেছে চিরচেনা রূপ। সড়কে যানবাহন ও পথচারীদের দেখে লকডাউন বুঝার উপায় নেই। সড়কে তীব্র যানজট। সকাল পেরিয়ে দুপুর, এমনকি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল ঢাকার বিভিন্ন সড়কের। মূল সড়কে দিনভর পিঁপড়ার গতিতে চলেছে যানবাহন। ট্রাফিক সিগন্যালে থেমেছে সেই গতিও। সিগন্যালে, যানজটে আটকা পড়ে বারবার সাইরেন বাজিয়েও সুবিধা করতে পারেনি অ্যাম্বুলেন্সগুলোও। চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশুরা।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার প্রথমে গত ৫ এপ্রিল গণপরিবহন ও অফিস-আদালত চালু রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন দেয়া হয় দেশব্যাপী। এরপর ২২ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পরবর্তীতে আরো এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানো হয়। আগামী ৫ মে পর্যন্ত চলবে। তবে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ কেউই মানছে না।
গতকাল রাজধানীর শ্যামলি, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও বাংলামটর, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলছে। মোহাম্মদপুর থেকে পল্টন অফিসে আসতে প্রায় ৫০ মিনিট সময় লেগেছে উজ্জল মিয়া নামের এক ব্যক্তির। কারওয়ান বাজার হয়ে আসতে তাকে সিগনালে পড়তে হয়েছে তিনবার। যানজটের কারণে কারওয়ান বাজারের মোড় পার হতে আরও দুবার সিগনালে পড়তে হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গতকাল পুরান ঢাকার সড়কগুলোতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধে বাস বন্ধ থাকায় রিকশার দখলে ছিল সড়কগুলো। সরেজমিনে দেখা যায়, সিক্কটুলী লেন, নাজিরাবাজার, বংশাল, চকবাজার, চিত্তরঞ্জন এভিনিউ, তাঁতীবাজার মোড়, নবাবপুর রোড, জনসন রোড, ইংলিশ রোড, সূত্রাপুর বাজার রোড, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়কে রিকশা চলাচল বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। তবে সড়কে রিকশা চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছেন। এছাড়া সড়কে অল্পসংখ্যক প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
রিকশাচালক মো. রহিম বলেন, ‘লকডাউনে’ রিকশাই বেশি চলছে। তবে সকাল থেকে বেশি আয় করতে পারিনি। মানুষ ভাড়া শুনেই চলে যায়, রিকশায় ওঠে না। ভাড়া কম বলে। ভাড়া যেটা সেটাই বলি, বেশি ভাড়া চাই না। সদরঘাট থেকে মালিবাগ যাবেন মো. সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ব্যবসার কাজের জন্যে বের হয়েছি। গাড়ি পাচ্ছি না। রিকশাওয়ালারা ভাড়া বেশি চায়। তাই মোটরসাইকেলের জন্য অপেক্ষা করছি।
এছাড়াও রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, মগবাজার এসব জায়গার রাস্তায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, রিকশা, ঠেলাগাড়ির ছিল দীর্ঘ লাইন। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচলও ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে মার্কেটমুখি মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে, এদিকে চেকপোস্টগুলোতে শুরুর দিকে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত হলেও এখন তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। আর কোথাও কোথাও তো চেকপোস্টই গায়েব হয়ে গেছে। ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বিধিনিষেধের শুরুতে যে কড়াকড়ি ছিল, তা এখন আলোচনা থেকে বহু দূরে। এখন ‘মুভমেন্ট পাস’ চেক করতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও চলছে মুভমেন্ট পাস চেকিং। কিন্তু পিক-আওয়ারে সব গাড়িকে একসঙ্গে ধরে চেক করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, দুইদিন ছুটির পর সপ্তাহের প্রথমদিনে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়ক ছিল ব্যস্ত। যানবাহন মুক্ত ছিল না এক মিনিটও। কোথাও কোথাও দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকায় রিকশা ও অটোরিকশার যাত্রীরা গরমে হাঁসপাঁস করেছেন। রাস্তায় মানুষের চলাচলেও ছিল গাছাড়া ভাব। অনেককে দেখে মনে হয়েছে, দেশে যেন করোনা বলতে কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেকে। মাস্ক পরা ও দুরত্ব বজায় রাখার বালাই ছিলনা। মাস্ক না পরা এক পথচারীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করে পাশ কাটিয়ে চলে যান।
মার্কেট মুখি জনগণের চাপ বেশি জানিয়ে রিকশাচালক হাসেম মিয়া বলেন, এখন বেশিরভাগ যাত্রী পাচ্ছি যারা ইদের কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন মার্কেটে যাচ্ছেন। এখন আমাদের ইনকামও মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে লকডাউনের মধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে সব মার্কেট। কথা ছিল মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথবাবে কার্যকর করবেন। কিন্ত মার্কেটমুখি মানুষের সংখ্য বেড়েই চলেছে। যার ফলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সকাল থেকে রাজধানীর রামপুরা বাড্ডা আবুল হোটেল ও কাকরাইল এলাকা যানজটে পরিপূর্ণ ছিল। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, চন্দ্রিমা উদ্যান, বিজয় সরণী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহাখালী ও বাড্ডা এলাকায় সড়কেও প্রাইভেটকার, কর্ভাডভ্যান, সিএনজিসহ সব ধরনের গাড়ির চলাচল ছিল প্রচুর। রাজধানীতে বেশিরভাগ পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়িগুলোর দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বেলা ১১টা থেকে ১২টার দিকে দিকে রাজধানীর মহাখালী, নাবিস্কো, সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, বেইলি রোড, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও পল্টন মোড় এলাকার বেশিরভাগ পয়েন্টে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তিন রাস্তা এবং চৌরাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে দীর্ঘ গাড়ির লাইন। কয়েকটি স্থানে ছিল তীব্র যানজট।
রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেটকারসহ ছোট ছোট যানবাহনের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনেকে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চা দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে অনেকে। আবার কেউ কেউ রিকশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজধানীতে গণপরিবহন না থাকায় অনেকেই নিজস্ব পরিবহনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আবার খোলা পিকআপ ভ্যানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন। সরকারি অফিস-আদালত ও কলকারখানা এবং ঈদের আগে মার্কেট খোলা থাকার কারণেই এই যানজটের কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।