Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুন্দরবন উজার করে গোলপাতা আহরন

বাওয়ালীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বনরক্ষীদের ঘুষ আদায়

শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০২১, ২:৪৪ পিএম

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বনরক্ষীরা এ বছর গোলপাতার মৌসুমে বাওয়ালীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় চার কেটি টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পারমিটধারী প্রায় দুইশত নৌকা থেকে দুই কিস্তিতে এ ঘুষ আদায় করা হয় বলে বাওয়ালীদের অভিযোগ।
যার কারনে বাওয়ালীরা বন উজার করে ঠেকপাতা ও জালানি কেটে পারমিটের অতিরিক্ত গোলপাতা বোঝাই করে নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ী এ বছর লোকসানে পড়ে তাদের ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষনা দিয়েছেন। বনরক্ষীদের হয়রানির ভয়ে মৌসুম শেষে শুক্রবার (৩০) এপ্রিল বাওয়ালীরা সাংবাদিকদের কাছে এসব অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।
শরণখোলা উপজেলার গোলপাতা ব্যবসায়ী মোঃ তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার, ফুল মিয়া আড়ৎদার, সেলিম বেপারী, মতিয়ার রহমান, জাকির হোসেন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও তারা চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে ২৮ জানুয়ারী ও ২৮ ফেব্রুয়ারী দুই কিস্তিতে দুই মাসের গোলপাতার পারমিট করেন। চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল হক ২নম্বর কুপ কর্মকর্তা হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এই সুযোগে তিনি স্টেশন থেকে পারমিট দেয়ার সময় প্রতিটি নৌকা থেকে ২৮ হাজার, কুপে চেক করার নামে ২৬ হাজার, ঘের দেয়ার নামে ১৫ হাজার, বিএলসি বাবদ পাঁচ হাজার, ঘাট চেক পাঁচ হাজার, সিটি কাটানো (পারমিট হস্থান্তর) বাবদ দুই হাজার টাকাসহ বিভিন্ন অজুহাতে আরো ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ৯৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ আদায় করেছেন। এভাবে দুইশত নৌকা থেকে দুই কিস্তিতে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কুপকর্মকর্তা। অথচ পারমিট ও বিএলসিতে সরকারি রাজস্ব মাত্র পাঁচ হাজার সাতশত টাকা। ওই ঘুষের টাকা তিনি স্টেশন অফিসের বোর্ডম্যান মিজানুর রহমানকে দিয়ে আদায় করেছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সরকারি রাজস্বের অতিরিক্ত ঘুষ দিতে গিয়ে ব্যপক লোকসানে পড়ার কারনে অনেকেই আর সুন্দরবনের ব্যবসা করবেন না বলে তারা জানান।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অনেক বাওয়ালী ক্ষতি পোষাতে পাঁচশত মন নৌকার পারমিট করে অতিরিক্ত তক্তা জুড়ে দিয়ে দুই থেকে তিন হাজার মন গোলপাতা কেটে নিয়ে এসেছে। কেউ কেউ পাতা না পেয়ে গোলঝাড়ের ঠেকপাতা ও জালানি কেটে নিয়েছে। সুন্দরবনের ২নম্বর কুপের যেসব এলাকার বন উজার করে গোলপাতা কাটা হয়েছে তার মধ্যে বেড়ির খাল, নন্দবালা, সিংড়াবুনিয়া, তাম্বলবুনিয়ার আগা, শান্তির খাল, কলামুলা, চানমিয়ার খাল, আলকির খাল অন্যতম।
পামিটের প্রথম কিস্তিতেই চাদপাঁই রেঞ্জের গোলপাতা সাবার করে দিয়েছেন কুপ কর্মকর্তা ওবায়দুল হক। এরপর দ্বিতীয় কিস্তিতে তিনি গোপনে শরণখোলা রেঞ্জের বড় কৈয়া, ছোট কৈয়া, চেডুয়া, লাঠিমারার ভাড়ানী, হরিণটানার বাউন্ডারী, খালা-বুনজির খাল, পাঙ্গাশিয়া, মরাভোলার টাকার খাল, পয়সার খাল, জহুরমনি, তেতুলবাড়িয়ার সব খালে বন উজার করে গোলপাতা কাটার সুযোগ করে দেন বাওয়ালীদের। এসব এলাকা পরিদর্শন করলে ঠেকপাতাসহ গোলপাতা কাটার দৃশ্য চোখে পড়বে বলে বাওয়ালীরা জানান। অথচ অভয়ারণ্যের কারনে গত পাঁচ বছর ধরে শরণখোলায় গোলপাতার পারমিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মোঃ এনামুল হক বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলি মৌখিকভাবে শুনেছি তবে কেউ লিখিতভাবে জানায়নি। লিখিত পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, গোলপাতার কুপ চলাকালীন অবস্থায় এ ব্যপারে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া যেত। যেহেতু কুপ শেষ হয়ে গেছে তাই তদন্ত করলে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ