Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল

জাটকা আহরন নিষিদ্ধ ৩০ জুন পর্যন্ত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০২১, ১:৫১ পিএম

দেশের ৬টি অভয়াশ্রমেই ইলিশ সহ সব ধরনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞা ১ মে রাতের প্রথম প্রহরে উঠে গেলেও আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে জাটকা আহরন নিষিদ্ধ থাকছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপরিশের আলোকে সরকার গত ১ নভেম্বর থেকে জাটকা আহরনে এ নিষেধাজ্ঞা জারী করে । মূল প্রজনন মৌসুম হিসেবে গণ্য করে গত বছর ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ৪ নভেম্বর রাতের প্রথম প্রহর পর্যন্ত উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে প্রধান প্রজননস্থলে সব ধরনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সারা দেশেই ইলিশের আহরন,পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ ছিল। ঐ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ১ নভেম্বর থেকে জাটকা আহরনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। পাশাপাশি দেশের ৬টি অভয়াশ্রমের ৪৩২ কিলোমিটার এলাকায় সব ধররের মৎস্য আহরনে জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ইলিশ ও জাটকা আহরনে গত দু দশক ধরে নানা ধরনের বিধি নিষেধের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন ও আহরন প্রায় তিন গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার ফলে দক্ষিনাঞ্চলের বেকার জেলেরা যথেষ্ঠ খুশি। গত দু দিন বাজারে ইলিশ সহ সব ধরনের মাছের সরবারহও বেড়েছে। গত অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ৩৫ টনের কাছে পৌছেছে। যার ৬৬% বা ৩.৬৩ লাখ টন আহরন হয়েছে দক্ষিনাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও উপক’লীয় নদ-নদী ও সাগর মোহনায়।
তবে এবারো জাটকা আহরন বন্ধ সহ অভয়াশ্রমগুলোতে নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে আইন অমান্যের প্রবনতা যথেষ্ঠ বেশী লক্ষ্য করা গেছে । এমনকি দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাটকা আহরনে বাধা দেয়ায় আইনÑশৃংখলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। তারপরেও সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে যা কিছু করণীয় তাই করবে বলে মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে ৮ হাজার ১৫৬টি অভিযান ছাড়াও প্রায় দেড় হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২ কোটি ৯৫ লাখ মিটার কারেন্ট জাল সহ বিভিন্ন ধরনের আহরন নিষিদ্ধ জাল আটকা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় দেড়শ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ এবং প্রায় ২৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এসময় ৭৫৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। পাশাপাশি অভিযান পরিচালনাকালে ৮৯৩টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
আগামী দুমাস জাটকা আহরন নিষিদ্ধকালীন সময়েও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি নৌবহিনী, কোষ্ট গার্ড ও র‌্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনী অভ্যন্তরীন ও উপকূলীয় নদ-নদীতে নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশে কারেন্ট জাল, বেহুন্দী জাল সহ অন্যান্য ক্ষতিকর জালের নাহায্যেপ্রতিবছর যে পরিমান জাটকা অঅহরন হচ্ছে,তার এক-দশমাংশও যদি রক্ষা করা হয়, তবে দেশে আরো ১ লাখ টন ইলিশের বাড়তি উৎপাদন সম্ভব।
এদিকে দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লের ৬টি জেলায় জাটকা আহরনে নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলোকে আহরন নিষিদ্ধকালীন সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে সরকার ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত দু দফায় প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার টন চাল বিনামূল্যে বিতরন করেছে। এরমধ্যে ফেব্রুয়ারীÑমার্চে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলার ২ লাখ ১ হাজার ৭৯ জেলে পরিবারকে ১৬ হাজার ৮৬ টন এবং এপ্রিলÑমে মাসে ২ লাখ ৩২ হাজার ৭১ হাজার জেলেকে আরো ১৮ হাজার ৫৬৫ টন চাল বিতরন করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলে পরিবার মাসে ৪০ কেজি করে চাল পাচ্ছে ।
মৎস্য বিজ্ঞানীগনের সুপারিশে সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনাÑজাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করে অভয়াশম ঘোষনা করা হয়েছে। চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এলাকা এবং বরিশালের হিজলা, মেহদিগঞ্জ ও সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকার ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমে মার্চÑএপ্রিল মাসে সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ছিল। এছাড়া পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকায়ও জানুয়ারীÑফেব্রুয়ারী মাসে ইলিশ সহ সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ থাকায় প্রতি বছরই আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০১৯-এর ২৬জুন থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অঅমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% এখন বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ