Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই

চিকিৎসাসেবা উদ্বোধনকালে ডা. জাফরুল্লাহ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, করোনার মহামারির এখন ভয়াবহ অবস্থা চলছে। এই দু:সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ শুরু করলে ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে এর ইতিবাচক ফল দৃশ্যমান হবে। সরকারের কাছে কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়ার চেয়েও বড় প্রত্যাশা হলো কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যাতে তৈরি করা না হয়। গতকাল ‘গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ করোনা চিকিৎসাসেবা’র উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে বাড়ি বাড়ি যাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোভিড-১৯ চিকিৎসক দল। করোনা রোগীর বাসা থেকে ফোন করলেই হাসপাতাল সুবিধা সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সসহ সেখানে চলে যাবেন গণস্বাস্থ্যের চিকিৎসক দল। ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে ‘গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ করোনা চিকিৎসাসেবা’র উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই কর্মস‚চি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে নতুন এই উদ্যোগ বিষয়ে ব্রিফ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা সবার আগে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট তৈরি করেও অনুমোদন পাইনি। স্বল্পমূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতে চেয়েছি, সেখানেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করছি, সেখানে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। প্লাজমা সেন্টার করেছি, সেখানে কোনো সহযোগিতা পাইনি। কাজেই মহামারিকালে সরকারের কাছে সহযোগিতার চেয়েও কোনো ধরনের অসহযোগিতা না করার প্রত্যাশা থাকবে। আমাদেরকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেওয়া হোক। আমরা দেশের জনমানুষের জন্যে কাজ করছি। আমাদের কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নেই। আমাদের উদ্দেশ্য বৈষম্য দূর করে চিকিৎসা সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। সবাইকে সেবা দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর বাসা থেকে ফোন করলেই সেখানে চলে যাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোভিড-১৯ চিকিৎসক দল। আজ থেকেই ঢাকার ভেতরে এই সেবা দেওয়া হবে। যেমন কেউ একজন রাজধানীর কলাবাগান থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফোন করল কিংবা অ্যাপসের মাধ্যমে জানাল, তার বাড়িতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গাড়ি যাবে। সেই গাড়িতে এক্সরে ও ইসিজি মেশিন, ভ্যান্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় সব থাকবে। চিকিৎসক দল প্রথমে পরীক্ষার জন্য রোগীর রক্তসহ প্রয়োজনীয় নমুনা নিয়ে চলে আসবে। আগে যদি পরীক্ষায় রোগীর করোনা পজিটিভ থাকে, তাহলে তার বাড়ি গিয়ে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া, বুকের এক্স-রে, ইসিজিসহ যেসব টেস্ট করানো প্রয়োজন, সবই করা হবে। মোট কথা একজন করোনা রোগীর বাড়িতে একটা হাসপাতাল চলে যাবে।

তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্যের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম যে ওষুধ দেবে, তার জন্যে কোনো টাকা নেবে না। এ ছাড়া, করোনা পরীক্ষাসহ অন্যান্য যেসব পরীক্ষা করা হবে, সেগুলোর প্রায় অর্ধেক মূল্য নেবে তারা। যেমন, বিভিন্ন পরীক্ষায় খরচ হলো ১০ হাজার টাকা, রোগীর পরিশোধ করতে হবে ছয় হাজার টাকা। একইসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত রোগীর বাড়ির একজন লোককে গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে তিনি করোনা রোগীর দেখাশোনা করতে পারে। গত ২৩ এপ্রিল থেকেই এই কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা। এই প্রশিক্ষণ নিতে কোনো খরচ নেই। এর জন্যে বাড়িতে থার্মোমিটার, পালস অক্সিমিটার ও ব্লাড প্রেসার মেশিন থাকতে হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এ ছাড়াও এখন যে কেউই গণস্বাস্থ্যের হাসপাতালে এসে করোনার চিকিৎসা নিতে পারবেন। ৪০ শয্যার একটা ইউনিট করেছি আমরা। পাঁচটি করোনা আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, কার্ডিয়াক মনিটর, ভ্যান্টিলেটর, ইসিজিসহ সব সুবিধা নিয়ে করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে। ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এগুলো করা হয়েছে। তারপর করোনা আইসোলেশন সেন্টারও করা হয়েছে। এখানে এখনই যেকোনো লোক এসে ভর্তি হতে পারবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রথমে এই সেবা দেওয়ার জন্যে ঢাকার ধানমন্ডি, কলাবাগান, পুরান ঢাকা ও মিরপুর এলাকাকে নির্বাচন করা হয়েছে। আপাতত সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সেবা দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে তিনটি দল এই সেবা প্রদান করবে। আইসিইউ সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রতিটি দলে থাকবে সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসক, নার্স, প্যাথলজি টেকনোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবক। দলটির সঙ্গে যাবে একটি মোটরসাইকেল এবং পোর্টেবল এক্সরে মেশিন। সরাসরি রোগী বা তার পরিবার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে থেকে ফোন পেলে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দলটি উপস্থিত হবে নির্দিষ্ট বাসায়। করোনার নমুনা সংগ্রহ ও এক্সরে করে ক্যাসেট নিয়ে মোটরসাইকেল বাহক ফিরে যাবেন হাসপাতালে। চিকিৎসক রোগের উপসর্গ বিবেচনা করে রোগীদেরকে চারটি ভাগে ভাগ করবেন। মৃদু, সহনীয়, সহনীয় উপসর্গের সঙ্গে সহরোগ যেমন: ডায়াবেটিস, হার্ট বা কিডনি ডিজিজ, স্ট্রোক, হাঁপানি ইত্যাদি ও তীব্র করোনা রোগী।

চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানানো হয়েছে, প্রথম তিন ধরনের রোগীকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। মোবাইলে পাওয়া এক্সরের ছবি দেখে চিকিৎসক তাদের জন্যে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ দিবেন। টেকনিশিয়ান প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবে। করা হবে ইসিজিও। নার্স রোগী ও রোগীর লোকজনকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পালস অক্সিমিটারের ব্যবহার শিখিয়ে দিবেন। প্রয়োজন হলে প্লাজমারও ব্যবস্থা করবেন এবং তা বাসাতেই দেওয়া হবে। তীব্র করোনা রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। সরবরাহ করা ওষুধ ও পরামর্শের জন্যে কোনো অর্থ দিতে হবে না। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ বিল করা হবে। তবে, সেটিও প্রায় অর্ধেক। গণস্বাস্থ্যের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের চিকিৎসাসেবা পেতে ০১৭০৯-৬৬৩৯৯৪ ও ০৯৬০২১১১৯৪০ এই দুটি নম্বরে ফোন করতে হবে। এ ছাড়াও, ‘সিওডিসিরেড এসওএস’ (ঈড়ফপজবফ ঝঙঝ) অ্যাপসের মাধ্যমেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ