Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তালতলীতে সরকারি খালে মাছের ঘের, লবন পানিতে দেড়শ একর জমির ফসলের ক্ষতি

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৪:০৪ পিএম

বরগুনার তালতলী উপজেলার শারিকখালীতে আবাদি জমিতে লবন পানি প্রবেশ করায় ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে দেড়শ একর জমির ধান। স্থানীয়দের অভিযোগ এক প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি খাল দখল করে মাছের ঘেরে পানি উঠানোয় লবন পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার কৃষকের ধানের ক্ষেত। আর যেসব ক্ষেত পানিতে তলায়নি সেসব ক্ষেতের কয়েকশ একর জমির ধান মিঠা পানির অভাবে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

বরগুনার তালতলী উপজেলার শারিকখালী এলাকার কৃষকরা জানান, প্রচন্ড তাপ আর ক্ষেত ভরা লবন পানি পুরো স্বপ্নটাই ভেঙে দিয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অনেকেই হাইব্রিড ইরি জাতের ধানের চাষ করেছিলেন। গত ১০ এপ্রিল গভীর রাতে উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের সাত খালের বাঁধ কেটে মাছের ঘেরে লবন পানি ঢুকায় একই এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নাসির মুন্সি। সেই পানিতেই তলিয়ে এছে এলাকাবাসীর স্বপ্ন।
এলাকার কৃষকরা বলছেন, সরকারি খাল দখল করে পুরো খালটিকে মাছের ঘের করেছেন ব্যবসায়ী নাসির মুন্সি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, নাসির মুন্সীর বিরুদ্ধে কথা বললইে তাদের দেয়া হয় হুমকি, করে মারধর। তার ভয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করেনা। নাসির মুন্সীর কারণে হাজার হাজার কৃষক নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই কৃষিকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

কৃষকরা জানান, নাসির মুন্সি বাঁধ কেটে সাত খালে লবন পানি ঢুকানোর কয়েক দিনের মধ্যে মরে গেছে ধান গাছ। এরপর বন্ধ করে দেয় পানি দেয়া। এখন যেসব ক্ষেতে পানি দিতে পারেনি সেসব ধানেও পুষ্টি পাচ্ছেনা। মিষ্টি পানির অভাবে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। আবার লবন পানি দিলেও গাছ মরে যাচ্ছে। নিরূপায় ঐএলাকার হাজারাধিক কৃষক।

শারিকখালী ইউনিয়নের সাত বাধেঁর খাল সংলগ্ন বাদুরগাছিয়া এলাকার একাধিক কৃষক বলেন, প্রতি বছর এই একই কাজ করে নাসির মুন্সি। এবারও সে বাঁধ কেটে লবন পানি ঢুকিয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান কেটে ফেলছেন তারা। নয়তো ক্ষেতেই সব চিটা হয়ে পরে থাকবে। তিন ফসলি জমি এখন দু’ফসলি জমিতে পরিনত হতে যাচ্ছে। এমন লবন পানি প্রতিনিয়ত আসলে এ জমিতে চাষাবাদ করারই সুযোগ থাকবে না বলে জানান তারা।
তালতলী কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ বলেন, একজন মানুষের এহেন কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারও কৃষক। এমনিতেই প্রচন্ড তাপদাহ, তারপরে আবার বৃষ্টিও হয়নি। তারমধ্যে যদি লবন পানি এভাবে ক্ষেতে থাকে তবে কৃষকদের পথে বসতে হবে।
এ বিষয়ে অভযিুক্ত নাসির মুন্সী বলেন, খালটি এমনিতেই পরে আছে, তাই তিনি অল্প জায়গায় মাছ চাষ করছেন। কিন্তু বাঁধ কাটা ও কৃষকদের ক্ষতির ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি।
তালতলী উপজলো কৃষি কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, কৃষকরা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে চাষের সুবিধার জন্য বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে খালটিতে মিঠা পানি আসার পরে সাত খালের মাথায় বাঁধ দিয়ে রাখে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তিনি। নাসির মুন্সি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ না দিলে তার বিরুদ্ধে কৃষকরা মামলা করবে। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস কৃষকদের সহায়তা করবেন।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরচিালক এসএম বদরুল আলম বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে সব জেনেছেন তিনি। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি প্রনোদনার ব্যবস্থা করবো।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ওই খালটির মালিক সরকার। হাজার হাজার কৃষক যেন খালটি ব্যবহার করে দেশের শষ্য ভান্ডারে চাহিদার যোগান দিতে পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা দেয়া হবে কৃষকদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ