Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুনিয়ার লাশ উদ্ধার নিয়ে বাড়ছে রহস্য

হত্যা নাকি আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৩৭ পিএম | আপডেট : ১০:৪৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২১

অপরাধী যে-ই হোক, আইনের মুখোমুখি হতে হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার নিয়ে রহস্য বেড়েই চলছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেই প্রশ্ন উঠেছে। পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, মুনিয়াকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য সিলিং ফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াও পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করছেন। বাসা থেকে ফুটপ্রিন্টসহ সব ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে, বিষয়টি ক্লিয়ার হতে কিছু সময় লাগবে।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গুলশানে কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় করা আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, যেই অপরাধী হোক না কেন তাকে আইন ও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটা তদন্তাধীন। তদন্তের পর আমরা বলতে পারব।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে অনেক কিছুই ক্লিয়ার হবে। এছাড়া ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ভিসেরা পরীক্ষাসহ সবকিছুই করা হচ্ছে। আত্মহত্যা করে থাকলে মেয়েটি কেন আত্মহত্যা করলো তার কারণও জানার চেষ্টা চলছে। আসামিকে ধরতে এ পর্যন্ত কোনো অভিযান চালানো হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতারে এখনও কোনো অভিযান চালানো হয়নি। সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। এখানে হুটহাট করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণ হাতে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে। তা না হলে আসামি মামলা থেকে স্কিপ করার সুযোগ পেয়ে যাবে। এজন্য ফরেনসিক পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুনিয়ার মোবাইল ফোনসহ অনেক কিছুই ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। মুনিয়ার ডায়েরির লেখাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মুনিয়ার মৃত্যু রহস্যের সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামের এক হুইপের ছেলের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রæপের এমডি সায়েম সোবহানের মেয়ে ঘটিত বিষয় নিয়ে দ্ব›দ্ব ছিল। এছাড়া ৫০ লাখ টাকা পাওয়া নিয়ে সায়েম সোবহান ও মুনিয়ার একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয়েও আমরা অনুসন্ধান করছি। তদন্ত শেষে বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ডায়েরিতে সুখ-দুঃখের স্মৃতি:
মুনিয়ার ঘর থেকে বড় ফ্রেমে টাঙানো আনভীর ও তার দুটি কাপল (দম্পতি) ছবি জব্দ করা হয়েছে। সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে হাতে লেখা ৬টি ডায়েরি। ডায়েরিগুলোতে গত ২ বছরের বেশ কয়েকটি ঘটনা তারিখসহ লেখা আছে। ডায়েরির বেশ কয়েকটি অংশে আনভীরের নাম ও তার সঙ্গে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া এবং প্রেমের দিনগুলোর বিষয়ে লিখেছেন মুনিয়া। ডায়েরির লেখাগুলোর শেষের দিকে মুনিয়া লিখেছেন ‘জীবনের চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি’। মুনিয়ার বোন নুসরাত বলেছেন, এটাই তার ‘সুইসাইড নোট’।
এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, মুনিয়ার ফোনটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। মোবাইল থেকে কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে কি না সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই ভবনের প্রবেশমুখ ও করিডোরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েও যাচাই করছে পুলিশ।



 

Show all comments
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম says : 0
    একটি লাশ উদ্ধারের পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে নয় ছয় করতে হয় না,এইটা অবশ্যই উপর থেকে নিষেধ করা হয়েছে,কুমিল্লার তনু হত্যার মতো হবে।একটি লাশ এক ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সামান্য কিচু রিপোর্ট পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে বিচার নাই বললেই চলে,দেখেন কি বলতেছে রহস্য,মনে হয় রহস্যের ভিতরে কয়েক দিন শেষ হবে,তার পর রহস্য রহস্যের মধ্যেই থেকে যাবে,কারন এই নির্দেশ উপরের,সেটা আর বোঝার বাকী নেই,যাদের টাকা পয়সা আছে তাদের আবার কিসের বিচার ,বিচার যদি হইবার আশা থাকতে লাশ পরীক্ষা নিরীক্ষা একদিনের ভিতরে করতে পারে,বাংলাদেশে বর্তমানে বিচার নেই এবং নিশ্চিত কিছু হবে না,টাকার কাছে সবাই গোলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • আশরাফিয়া টেলিকম ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এ দেশে আইন দুই রকম। একটা আইন হল গরীবদের জন্য এবং আরেকটা আইন হল ধনীদের জন্য। দেখা যাক এবারে গরীবদের আইন ধনীদের স্পর্শ করতে পারে কি-না "
    Total Reply(0) Reply
  • Raju Ahmmed ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    শুনে শুনে মুখস্ত হয়ে গেছে.... ১.আইনের আওতায় আনা হবে। ২.জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ৩.অপরাধী যে দলেরই হোক পার পাবে না। ৪.৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৫. অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় নেই,অপরাধী অপরাধীই। ৬.কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে। (বিঃদ্রঃ) এগুলো বীজগণিতের সূত্র!! ফ্যাক্ট:- নতুন আলোচিত হত্যা
    Total Reply(0) Reply
  • Younus Foridy ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
    ৪৮ঘন্টা পার হতে চললো আসামী গ্রেফতার হয়নি,, অথচ বিরোধী পক্ষ কোথায় মিটিং করছে, কোথায় আছে ৫মিনিটে বের করে ৭২টিভিতে প্রচার করেন, এসব নোংরা খেলার বিচার বাংলার মাটিতে একদিন বিচার হবে! ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
    আসামী দরিদ্র লোক হলে বিবাহের প্ররোচনায় ধর্ষন আরেকটি মামলা হত।
    Total Reply(0) Reply
  • Ghorar Deem ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
    আপনাদের আইন সাধারণ মানুষের জন্য এক রকম। আর আপনাদের দলের লোকদের জন্য আরেক রকম।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Bin Rahaman ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
    এগুলো স্রেফ বলার জন্য বলা! নিজ ঘরানা শিল্পপতিদের আইনের আওতায় আনবেন ! এটা কল্পনা ও করা যায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • ক্ষণিকের মুসাফির ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
    আইনের মুখোমুখি তো হাজী সেলিমের ছেলেকেও করা হয়েছিলো ফুলের গলা মালাই দিয়ে বের হয়েছ আপন জুয়েলার্সের ছেলেকেও করা হয়েছিলো ফলাফল সেই তো মজাই আছে এমন মুখোমুখি করে লাভ কি
    Total Reply(0) Reply
  • Shahed Parvez ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
    ময়না তদন্তের রিপোর্ট বসুন্ধরার অনুকূলে ! যখন মামলা হয় আত্মহত্যার প্ররোচনা তখন বুঝা যায় এখানে ভিকটিমের পরিবারের সাথে টাকার খেলা চলবে। মামলা তো এমন হতে পারতো হত্যা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ! বাকি দায়িত্ব পুলিশের হত্যা না আত্মহত্যা !
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ismail Bye BD ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    মা বাবা হীন একজন তরুণী প্রলোভনের শিকার হয়ে ভুল পথে চলে যেতে পারে, কিন্তু একজন বিবাহিত ও বিশাল বড় কোম্পানির এমডি হয়ে, একজন এতিম মেয়েকে লোভ দেখিয়ে নষ্ট করে মৃত্যুর কোলে ঢেলে দিতে পারে না, আমরা এর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি??
    Total Reply(0) Reply
  • Mashrafe Ahmad ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৫৭ এএম says : 0
    হত্যা না আত্মহত্যা? ফ্ল্যাটটি চাবি দিয়ে বন্ধ ছিল নাকি সিটকিনি আঁটা ছিল। বাড়ির মালিকের কাছে ডুপ্লিকেট চাবি ছিল না বলে মালিক জানিয়েছে। আর কারো কাছে কি ডুপ্লিকেট চাবি ছিল? মুনিয়ার চাবিটি কোথায় ছিল?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ