Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা

রাজধানীর মার্র্কেট-শপিংমলে ভিড় বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সারাদেশে আছড়ে পড়ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত-মৃত্যু ঘটছে। পাশের দেশ ভারতে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় সীমান্ত বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশের শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট-শপিং মলে কেনাকাটার নির্দেশনা দেয়া হলেও বাস্তবে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

বিশেষজ্ঞ বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে করোনার ভারতের ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে বিস্তারের শঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সরকার আদের্শ-নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব পালন করছে; আর মার্কেটগুলোতে কেনাকাটায় ভিড় উপচে পড়ছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, কেনাকাটা করতে ক্রেতাদের মার্কেট শপিংমলে যেতেও ‘মুভমেন্ট পাস’ নিতে হবে। কিন্তু কয়েকটি মার্কেট ঘুরে কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ মুভমেন্ট পাস নেননি। এ পাস নিয়ে কেনাকাটা করার নির্র্দেশনা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রয়োজনে মার্কেট বন্ধ রাখুন। অবাস্তব সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দেবেন না।
করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত চলমান কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বিধিনিষেধ আগামী ৫ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে এ সময়ে দোকানপাট ও শপিংমলগুলো খোলা রাখা যাবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এ নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সরকার। তবে এসময়ে আগের ধারাবাহিকতায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখা হবে।

গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘করোনা ভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধের সময়সীমা বর্ধিতকরণ’ বিষয়ক এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট বাজার সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান বিধিনিষেধ আরো এক সপ্তাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকবে। এর আগে চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করে গত ২৫ এপ্রিল রোববার থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে জানায়।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে জানানো হয়। এর আগে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

কিন্তু গত দুদিন রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, ইস্টার্ন মল্লিকাসহ আশপাশের মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং মল ও টোকিও স্কয়ার ঘুরে দেখা গেছে, মধ্য রমজানে কেনাকাটা জমে উঠেছে। বিক্রেতা, ক্রেতা দারুণ ব্যস্ত। কিন্তু কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। নিউমার্কেট এলাকার দৃশ্য দেখে মনে হলো এলাকাটি লোকে লোকারণ্য। নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এখানকার ফুটপাতে আগের মতোই পোশাক-পরিচ্ছদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। আর এসব পোশাক কিনতে ক্রেতারও কোনো কমতি নেই।

দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ঈদের আগে মার্কেট ও শপিং মল খুলে দেয়া হয়েছে। শর্ত ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা হবে। কিন্তু সরেজমিনে সে স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা চোখে পড়েনি। গাউছিয়া ও চাঁদনি চক মার্কেটের মূল ফটকে বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায়, টানেলটি অকেজো। এছাড়া ফটকের সামনে দাঁড়ানো নিরাপত্তা কর্মীর হাতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার দেখা গেলেও মার্কেটে ঢুকছে এমন ক্রেতাদের তা দেয়া হচ্ছে না।

নিরাপত্তাকর্মীর জানান, যারা মার্কেটে প্রবেশ করেন এবং কেনাকাটা করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, এমন ক্রেতাদের হ্যান্ডস্যানিটাইজার দেন। কিন্তু মার্কেটের ভিতরে বিক্রেতা ও ক্রেতা অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। গাদাগাদি করে অনেক দোকানে বিক্রেতা ভিড় করছেন। তবে নিউ মার্কেটে ক্রেতা বিক্রেতাদের অনেকেই মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই ছিল না।
মার্কেটের বিক্রেতাদের কাছে সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারই আন্তরিক নয়। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের কী করার রয়েছে। তবে কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব বুঝলেও তা মানতে পারছেন না বলে জানান।

তবে রাজধানীর বড় বড় কিছু মার্কেটে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ লেখা রয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার দুরবস্থার চিত্র। মার্কেটটিতে মধ্যবিত্ত ক্রেতার সংখ্যা বেশি। বেশির ভাগ ক্রেতাই মাস্ক মুখে দিলেও বিক্রেতা ক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা হচ্ছে না। এছাড়া কিছু কিছু মার্কেটে সামাজিক দূরত্ব পালনের সুযোগই নেই।

তবে দোকান মালিকদের দাবি, মার্কেটগুলোতে ৮০ শতাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা মাস্ক পরা অবস্থায় কেনাকাটা করছে। প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরেননি। আবার অনেকে মাস্ক পরলেও তা সঠিক জায়গায় পরেননি। মাস্ক ব্যবহার করছেন না এমন ব্যক্তিদের বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী।

রাজধানীসহ সারাদেশের শপিংমল ও দোকান খোলার অনুমতি দিলেও সরকারি নির্দেশনা ছিল- শপিংমলে যেতেও ‘মুভমেন্ট পাস’ নিতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী থেকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, তারা কোনো মুভমেন্ট পাস নেননি। আসার পথে পুলিশ বা প্রশাসনের কারো মুখোমুখিও হতে হয়নি। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মার্কেটে আসতে হচ্ছে।

নিউ মার্কেটে আসা এক ব্যক্তি বললেন, সরকার আদেশ নির্দেশ দিয়েই খালাস। মুভমেন্ট পাস নিয়ে মার্কেট আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা তো বাস্তবতা বিবর্জিত। মার্কেটে আসতে না দিলে আপনি মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। মার্কেট খোলা রাখবেন আবার মুভমেন্ট পাস নিয়ে ক্রেতাদের আসতে বলবেন এটা কেমন কথা?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ