রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা মহারশী নদী এখন মরা খাল। বেদখল হয়ে গেছে মহারশী নদীর দু’পাড়ের শত শত একর জমি। নদীটি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। ফলে গোটা ঝিনাইগাতী হয়ে পড়েছে মৎস্য শূন্য। শেরপুর গারোপাহাড়ের নদী-নালা, খাল-বিলকে ইতোপূর্বে বলা হতো মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। দেশের মাছের চাহিদার বিরাট অংশ জোগান হতো মহারশী নদীসহ গারোপাহাড়ের অপরাপর নদী-নালা, খাল-বিল থেকে। কিন্তু কালের বিবর্তনে মহারশীসহ আশপাশের নদী-নালা, খাল-বিলগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও অপরিকল্পিতভাবে মাছ আহরণ এবং অত্যাধিক রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি কারণে দেশিয় প্রজাতির মাছ হাট-বাজারে এখন আর চোখেই পড়ে না। অবশ্য প্রাকৃতিক মাছের বংশবিস্তার বিপর্যয়ের আরো নানা কারণ রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তণের ফলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না থাকা, নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় মহারশী নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। অথচ মাত্র দুই দশক আগেও ভাটি এলাকার অনেক লোক পালতোলা নৌকায় এই নদী পথেই ঝিনাইগাতীতে হাট-বাজার করা ছাড়াও বৌ-ঝিরা নায়র করতো। যে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়েনা।
এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তিগণ জানান, সাধারণত মে-জুনে বেশির ভাগ মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়তো মহারশীসহ স্থানীয় নদী-নালা, খাল-বিলে। আর এই ডিম ফুটতো জুলাই-আগস্ট মাসে। পোনা মাছ আকারে এই সময়টায় বড় হতো। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাবে জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত বলতে গেলে কোন বৃষ্টিই হয়নি। আবার উচ্চ তাপমাত্রার কারণে অনেক মাছের ডিম শুকিয়ে গেছে মাছের পেটেই। জুলাই এর শেষের দিকে সামান্য বৃষ্টির পানি এলেও প্রাকৃতিক মাছ কৈ, মাগুর, সিং, টেংড়া, পুটি, দারকিনা, মলা, চেলা, ঢেলা, চিংড়ি ইত্যাদি ছোট মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত এখানে। কিন্তুু কালক্রমে চলছে দেশিয় প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। ফলে এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক মৎস্যজীবী বেকার। যেখানে সেই আদিকাল থেকেই গারোপাহাড়ি এলাকায় আহোরিত মাছ এখানকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও চলে যেত। কিন্তু এখন ঝিনাইগাতীতেই মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইগাতীর প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুছ ছালাম, আলহাজ রেজাউর রহমান মাস্টার, মকবুল হেসেন মাস্টার, আবদুর রহমান মাস্টার, সরোয়ারদী দুদু মন্ডল প্রমুখ ব্যক্তিগণ জানান, মাত্র ১০/১২ বছর আগেও মহারশী নদীতে ১০/১৫ কেজি ওজনের শোল, গজার, বোয়াল, আইর, চিতল ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত। পাওয়া যেত প্রচুর ছোট মাছ। এমন কোন মাছ ছিলনা যা এখানকার নদী-নালা-খাল-বিলে না পাওয়া যেত। অথচ এসব কথা এখন নতুন প্রজন্মের কাছে শুধুই কল্পকাহিনী। বর্তমানে পানি না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে নদীর দুই পােেড়র ইরি-বোরো চাষাবাদ। অনাবাদি হয়ে পড়ছে ফসলি জমি।
কৃষক নেতা সরোয়ারদী দুদু মন্ডল, সেনা সার্জেন্ট (অব.) আনোয়ার হোসেন, আরফান আলী প্রমুখ জানান, ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা মহারশী একটি খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। ফলে প্রতিবছর বর্ষায় পাহড়ি ঢলের বালুতে মহারশী নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। আর তলদেশের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদীটির পানি ধারণ ক্ষমতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। গত ২/৩ দশক আগেও মহারশী নদীর গভীরতা ছিল অনেক। কৃষকরা জানান, মহারশী নদীর দু’পাড়ের কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন মহারশী নদীর পানি সেচের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তুু প্রায় এক যুগ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীটিকে প্রায় মরা খালে পরিনত করে ফেলেছে। ফলে পানির অভাবে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ইরি-বোরো চাষাবাদ।
নদীর নাব্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কোন মাথা ব্যথা। যে টুকু পানি রয়েছে তাতেই সেচ দিয়ে আবাদ করা যেত, যদি সেচের মাধ্যমে অনবরত বালুসমেতো পানি তোলা না হতো এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন নদীটি খনন করতে পারলে কৃষকের জন্য বিরাট উপকার হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদ জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিস্ট দেয়া হয়েছে। সম্ভবত খনন কাজ হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।