পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিরামের টিকার চালান আটকে দেয়ার পর এবার তরল অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করেছে দেশটি। গত ৪ দিনে কোনো অক্সিজেনবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল একটি অক্সিজেনবাহী ট্যাংঙ্কার খালাশ হয় বেনাপোল বন্দরে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অন্যতম প্রধান উপাদান অক্সিজেন। দেশের বর্তমান অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে আমদানিকৃত অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। এই পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় দেশে ভয়াবহ অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এমনকি অক্সিজেনের অভাবে বাড়তে পারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। যা সময়স্বপেক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধ ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কোভিড-১৯ রোগীদের সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতে জরুরি সভা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। গতকাল মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খান, যুগ্মসচিব উম্মে সালমা তানজিয়া, অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এইচএসএম) ডা. মো. খুরশীদ আলম, মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন এবং অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার সহকারী পরিচালক ডা. হাবিব ইসমাইল ভ‚ইয়া এই সভায় সংযুক্ত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী অথবা স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, ভারত অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করলেও করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দেশে অক্সিজেনের সঙ্কট হবে না। তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে সে জন্যও সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশাকরি করোনা না বাড়লে অক্সিজেনের সঙ্কট হবে না। তিনি বলেন, আমরা লিকুইড অক্সিজেন আমদানি করি। আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বেশি করে লিকুইড অক্সিজেন নেয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে গ্যাসের ব্যবহার শুরু করেছি। গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, কারণ গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের কোনো কমতি নেই। তাই এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছি। একই সঙ্গে ছোট ছোট ইউনিট আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া শিল্পখাতে ৪০/৫০ টন অক্সিজেনের ব্যাবহার হয়। প্রয়োজনে সেখান থেকেও হাসপাতালে ব্যবহার করা হবে। তাই আশা করছি সবকিছু ঠিক থাকলে দেশে অক্সিজেনের সঙ্কট হবে না।
এর আগে গত বুধবার দেশে যে কোনো সময় অক্সিজেনের ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কায় সভা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই সভায় জানানো হয়, দেশে বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা ১৫০ টন। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে এটা যে কোনো সময় বাড়তে পারে। এর মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ সরবরাহ করছে ৮০ টন এবং স্প্রেক্টা অক্সিজেন লিমিটেড ৩৮ টন। সব মিলিয়ে ১১৮ টন। এছাড়া অধিদফর ৩টি নতুন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব উৎস থেকে পাওয়া যাবে মোট ৭৫ টন। তবে বর্তমানে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৩৫ টন অক্সিজেন দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লি. দৈনিক ৭ টন, ইসলাম অক্সিজেন ২০ টন এবং এ কে অক্সিজেন লি. ৮ টন সরবরাহ করতে পারবে।
যদিও লিন্ডে বাংলাদেশের মুখপাত্র সাইকা মাজেদ ইনকিলাবকে বলেন, লিন্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে সরবরাহ করছে ৯০ টন। তাদের উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, ভারত থেকে প্রতি মাসে কয়েক টন অক্সিজেন আমদানি করতে হতো। এখন ভারত অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করলেও সমস্যা হবে না। কারণ লিন্ডে দেশের শিল্পখাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যা এখন পুরোপুরি বন্ধ রেখে শুধু মেডিক্যালখাতে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। এছাড়া ভারত রফতানি বন্ধ করলেও লিন্ডে বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ায় হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে, যা বর্তমানে ১৫০ টনে পৌঁছেছে। এই চাহিদা আরো বাড়তে পারে।
গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে পরিচালক হাসপাতাল, লাইন ডিরেক্টর হাসপাতাল ও সরকারের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। সেখানে তারা তাদের সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরেন।
অন্যদিকে স্প্রেক্টা অক্সিজেন লি. প্রতিদিন ৩৮ টন অক্সিজেন সরবরাহ করছে। তারা স্থানীয়ভাবে ২০ টন এবং ভারত থেকে ১৮ টন আমদানি করছে। সেখানে আরো বলা হয়, ভারত থেকে লিকুইড অক্সিজেন আনা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবহণ বন্ধ থাকায় অক্সিজেনের সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এদিকে গত এক সপ্তাহে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৮১৫ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। যার আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ১৬৫ মার্কিন ডলার। ২৯ টি ট্যাঙ্কারে এই তরল অক্সিজেন বাংলাদেশে আমদানি হয়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, দেশের চিকিৎসা খাতে অক্সিজেনের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতি মাসে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়ে থাকে। করোনাকালীন সময়ে আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে সম্প্রতি এ অক্সিজেনের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। হঠাৎ করে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে চিকিৎসা খাতও বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়লো।
ভারতীয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান’র প্রতিনিধি বিশ্বজিত দাস জানান, ভারত থেকে সাময়িকভাবে অক্সিজেন রফতানি বন্ধ রয়েছে। ভারতে ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা ভেবে বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
অক্সিজেন আমদানিকারকের প্রতিনিধি ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে ভয়াবহভাবে। এতে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। কোভিড-১৯ রোগিদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ভারত আপাতত অক্সিজেন রফতানি বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সোহার্দ্য-সম্প্রতি ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে তরল অক্সিজেন দিবে আশা রাখি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মুস্তফিজুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, দেশের বর্তমান অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে দুটি কোম্পানি উৎপাদন করছে। ভারত থেকে তরলীকৃত অক্সিজেন আমদানি করা হতো। কিন্তু ইতিমধ্যে দেশটি রফতানি বন্ধ করেছে। তবে আমাদের হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণে আমরা তিনটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু তাদের তরল অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক কম, যা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে না। সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাপ্ত অক্সিজেনের সুসম বণ্টন নিশ্চিত করা হবে।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন উৎস খুঁজতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নতুন উৎস হিসাবে যে তিনটি কোম্পানির সঙ্গে অধিদফতরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেগুলো হলো- আবুল খায়ের স্টিল মিল লি., যাদের দৈনিক মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০ টন। তবে তরলীকৃত অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষমতা মাত্র ১৫ টন। প্রতিষ্ঠানটি মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তবে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর তাদের সাময়িক অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ইসলাম অক্সিজেন। যাদের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৭০ টন। যার মধ্যে তরলীকৃত অক্সিজেনের পরিমাণ ৪০ টন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের এ কে অক্সিজেন (প্রা.) লিমিটেড। যারা দৈনিক ২০ টন তরল অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষম। এই দুটি প্রতিষ্ঠানও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন প্রাপ্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে কোভিড চিকিৎসা দেয় (সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে) এমন হাসপাতালগুলোয় ১০৩৭টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে। শুধু এই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ৬৪ মিলিয়ন লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। এ ছাড়া আইসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হয়। পাশাপাশি সাধারণ শয্যায় চিকিৎসাধীন অনেক রোগীরও অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। এর পাশাপাশি সারা দেশে সাধারণ হাসপাতালে (যেগুলো দিয়ে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়) প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগীর অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। তাদেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এমনকি দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে অবস্থাপন্ন অনেক ব্যক্তি ও পরিবার বাসাবাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে শুরু করেন।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এই মুহ‚র্তে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর চেয়েও জরুরি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোয় কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।