Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দখল-দূষণে হারাচ্ছে কুমার নদ

ওবায়দুল আলম সম্রাট, ভাংগা (ফরিদপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

দখল ও দূষণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার প্রমত্তা কুমার নদ। অথচ, এক সময়ের প্রবল খরস্রোতা ছিল কুমার নদ। যা ভাংগা উপজেলা সদরকে তিনভাগে বিভক্ত করেছে, যাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠেছিল এখানকার হাট বাজার আর নগর সভ্যতা। তবে, আজ মানুষের দখল ও মানুষ সৃষ্ঠ দূষণে মৃত প্রায় এ নদ।

জানা যায়, একদা এই নদকে ঘিরেই গড়ে ওঠেছিল কুমারগঞ্জ নামক নগর সভ্যতা। পরবর্তীতে যা ভাংগা নামক জনপদ হিসেবে পরিচিতি পায়। নদটি দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে অত্র এলাকার সাথে নৌ পথে যোগাযোগ করা হত। ঢাকা, খুলনা ও ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন এখানে নিয়মিত লঞ্চ আসতো আবার সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঢাকা ও খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। এছাড়া বড় বড় মালবাহী জাহাজ করেও আসতো বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। বর্তমানে নদের দুই পাড়ের বাসিন্দারা যে যার ইচ্ছামতো নিজেদের ঘর বাড়ি বা স্থাপনা নদের মধ্যে করে বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ মূল জলধারার মধ্যেই পাকা দালান তুলছে। ফলে মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে নদের স্বাভাবিক গতিধারা। খোদ পৌর এলাকার মধ্যেই এরূপ দখলবাজি চললেও দেখার নেই কেউ। এছাড়া নদীর দুই পাড়ের হাট বাজারের সকল মানুষ সৃষ্ঠ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদতে। ফলে আবর্জনায় নদীটুকু পরিণত হয়েছে বিশাল এক ভাগাড়ে।

২০১৯ সালে সরকার ঐতিহ্যবাহী ও অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কুমার নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ভাংগার চৌকিঘাটা থেকে মুনসুরাবাদ পর্যন্ত নদ পথ ড্রেজিং এর জন্য প্রায় শত কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। নদ খনন কার্যক্রম শুরু করার সাথে সাথেই দুই পাড়ের সুবিধাভোগী দখলদাররা আপত্তি তুলে যে, ড্রেজিং এর ফলে নদেরপাড় ভেঙে পড়ে তাদের সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, এতে খনন কাজ বন্ধ করে হয়ে যায়। পড়ে ড্রেজার তাদের সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে গিয়ে একই জায়গায় খনন করে প্রচুর বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন বালু ব্যবসায়ী ও সুযোগ সন্ধানীদের কাছে লাখ লাখ টাকায় বালু বিক্রি করতে থাকে। এভাবেই শেষ হয়ে যায় কুমার নদ পুঃনখনন প্রক্রিয়ার কাজ। বর্তমানে শুষ্ক মৌশুমে গতিশীল নদটি গতি ও নাব্যতা হারিয়ে একেবারে মৃত প্রায়। দূষণের ফলে এর পানিও সাধারণের ব্যবহারের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যার কারণে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের জীবন হয়ে পড়েছে দূর্বিষহ।

উপজেলার কোর্টপাড়স্থ নদীতীরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, এক সময় এই নদের পানি খুব স্বচ্ছ ছিল। আজ এ নদ মৃত প্রায়। এখন নদের পানির দুর্গন্ধে পানিতে নামা যায় না।

এ ব্যাপারে ভাংগা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, বিগত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নদটির দুইপাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, এরআগে নদের দুই তীরের সিমানা চিহ্নিত করাটা জরুরি। আমরা অচিরেই এই কাজটি শুরু করবো।

ভাংগায় নিযুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী অনিক হোসেন জানান, কুমার নদের দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ৮ এপ্রিল থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কার্যক্রমটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ