পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হচ্ছে না। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে আরো নতুন নাম। গত ৪৮ ঘণ্টায় আরো আড়াই হাজার আক্রান্ত হয়েছে। এসময় পটুয়াখালীর বাউফলে ৫ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারের কাছে পৌঁছল। সরকারি হিসেবে এসময়ে মারা গেছেন ১১ জন। তবে বেসরকারি মতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অন্তত তিনগুণ।
বরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানে আইইডিসিআরের সমীক্ষা দল জরিপ চালিয়ে খালের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্মের সন্ধান পেয়েছে। জরিপের মতে, ওই এলাকার ৯৪% মানুষ নলক‚পের পানি পান করলেও ৭১% দৈনন্দিন কাজে সরাসরি খালের পানি ব্যবহার করে থাকে। সমীক্ষায় মাত্র ২০% বাড়িতে ব্যবহারযোগ্য নলক‚প বিদ্যমান আছে বলেও জানানো হয়। বরিশাল ও বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের রেক্টাম সোয়াবে কলেরার জীবানু পাওয়া গেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলে গত ৪৮ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২ হাজার ৪৮৫ জনের মধ্যে বরগুনাতে ৪৩৯ জন। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ৬ হাজার ২১২ জন ডায়রিয়া রোগী। মারা গেছেন দু’জন। পটুয়াখালীতেও ৩৯৩ জন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাউফলের বগা এলাকায় তালহা নামে ৫ মাস বয়সের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েেেছ। এ পর্যন্ত মোট প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন।
ঝালকাঠিতে আরো ৩৪১ জন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৫৩ জন। বরিশালে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৩২০। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৩১২ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের সবাই বাকেরগঞ্জ উপজেলার। পিরোজপুরে আরো ২৮৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ নিয়ে জেলাটিতে মোট নিবন্ধিত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৭১৯ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার সাহা সকলকে নিরাপদ পানি পান ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন। যেকোন সমস্যায় স্থানীয় হাসপাতালসহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। ডায়রিয়া চিকিৎসায় বিভিন্ন জেলায় ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে জানিয়ে আইভি স্যালাইনের মজুদ পর্যাপ্ত বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ভোলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা। ভোলায় গত এক মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। প্রচন্ড গরমে গত এক মাসে জেলায় মোট ৫৭৮৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেলার সাত উপজেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫৪৪ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সাত উপজেলায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩৮ জন। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৭৬টি মিডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। একসঙ্গে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে একদিকে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা, অন্যদিকে শয্যা সঙ্কটে ভর্তি হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে।
ভোলার সিভিল সার্জন দফতর সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেলার সাত উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫৪৪ জন রোগী। এর মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬২, দৌলতখানে ১৭২, বোরহানউদ্দিনে ৪৭১, তজুমদ্দিন ১৫২, লালমোহনে ৩০১, চরফ্যাশনে ৪৭৪ ও মনপুরায় ১১৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৩৩৮ জন।
ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদরের ১০০ শয্যার পুরোনো ভবনের পুরোটা জুড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। বারান্দার দুই পাশে মেঝেতে আছে শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু। ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে থেকে শুরু করে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝের দুই সারিতে শুয়ে আছেন ডায়রিয়া রোগী। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে রোগী আনা নেয়ার ট্রলিতে থেকেই নিচ্ছেন চিকিৎসা। রোগী ও স্বজনদের ভিড়ে হাসপাতালের বারন্দায় সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর এসব রোগীর সেবা দিচ্ছেন মাত্র কয়েক জন নার্স। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে ডায়রিয়া ও করোনা ওয়ার্ডের জন্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন আরো ১০ জন নার্স সদর হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ডায়রিয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে ১০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন আনা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে আরো ৪ হাজার ব্যাগের চাহিদা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
গতকাল ভোলার সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, গত এক মাসে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭৮৯ জন আর এক সপ্তাহে ২৫৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৮ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৭৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।