Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে

হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তাররা

ভোলা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৩ পিএম

ভোলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তরা। ভোলায় গত এক মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।প্রচন্ড গরমে গত এক মাসে জেলায় মোট ৫৭৮৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেলার সাত উপজেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫ শত ৪৪ জন রোগী। গত শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত এক দিনে জেলার সাতটি উপজেলায় ভর্তি নিয়ে চিকিৎসাকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩৮ জন।আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৭৬ টি মিডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। একসঙ্গে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে একদিকে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। অন্যদিকে শয্যা সঙ্কটে ভর্তি হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের বারান্দার ও মেঝেতে।
ভোলার সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেলার সাত উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫শত ৪৪ জন রোগী। এর মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬২ জন, দৌলতখানে ১৭২ জন, বোরহানউদ্দিনে ৪৭১ জন, তজুমদ্দিন ১৫২জন, লালমোহনে ৩০১ জন, চরফ্যাশনে ৪৭৪ জন ও মনপুরায় ১১৩জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ৩৩৮ জন।ভোলা সদর হাসপাতাল সুত্রে জানা যায় যায়, ভোলা সদরের ১০০ শয্যার পুরোনো ভবনের পুরোটা জুড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। বারান্দার দুই পাশে মেঝেতে আছে শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু। ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে থেকে শুরু করে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝের দুই সারিতে শুয়ে আছেন ডায়রিয়া রোগী। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে রোগী আনা নেয়ার ট্রলিতে থেকেই নিচ্ছেন চিকিৎসা। রোগী ও স্বজনদের ভিড়ে হাসপাতালের বারন্দায় সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর এতসব রোগীর সেবা দিচ্ছেন মাত্র কয়েক জন নার্স। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।জনৈক সাংবাদিকের অসুস্থ হয়ে পরলে সে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে রোগীর সংখ্যা ও চিকিৎসা নিয়ে আলাপকালে জানান ভোলায় এখন করোনার চেয়েও ভয়াবহ রুপ নিয়েছে ডায়রিয়া রোগী। তিনি বলেন রোগীর সংখ্যার তুলনায় একদিকে বেড সংকট, চিকিৎসক, নার্স সহ অনেক সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতাল রোগীর অবস্থা। হাসপাতালের ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজনরা রোগীর সাথে এসে রোগী হয়ে পরছে।রোগীর সংখ্যা এতই বেশী যে শয্যা সংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের মেঝেতে,বারান্দায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।রোগীর সাথে আসা
আবুল কালাম বলেন, তার মা জুলেখা বেগম গত ৫ দিন ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত। প্রথমে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু এখানে সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা
ভোলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিনুর জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে প্রতি শিফটে মাত্র দুই জন নার্স দেয়া হয়। দুই জন নার্স নতুন রোগী ভর্তি, তাদের ওষুধ, স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড কম থাকায় রোগীদের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: সিরাজুল ইসলাম জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধীক এর বেশী রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে ডায়রিয়া ও করোনা ওয়ার্ডের জন্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন আরো ১০ জন নার্স সদর হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ডায়রিয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে ১০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন আনা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে আরো ৪ হাজার ব্যাগের চাহিদা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।লালমোহন হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মহসিন জানান লালমোহন হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এত বেশী আসতেছে যে তারা চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছে। লালমোহন হাসপাতালের বারান্দায় কোন জায়গা নেই।কিছু রোগী স্যালাইন পুশ করে বাড়ি চলে যাচ্ছে।গত এক মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০ জন করে রোগী চিকিৎসা নেয়। কোন কোন সময় একশোর ও বেশী রোগী আসে।সেক্ষেত্রে রাতদিন কাজ করেও আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়।তিনি রবিবার
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম ইনকিলাব সংবাদদাতাকে বলেন, গত এক মাসে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭৮৯ জন এক সপ্তাহে ২৫৪৫ জন, ২৪ ঘন্টায় ৩৩৮ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৭৬ টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ-স্যালাইল সরবরাহ রয়েছে। যা দিয়ে আগামী ১০ - ১৫ দিন চলবে। তবে রোগী বেড়ে যাওয়ায় আইভি স্যালাইন, ওষধের স্বপ্লতা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন প্রচন্ড গরম, বৃস্টি না হওয়া,অপরিস্কার কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে।জেলার প্রতিটি হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স সাধ্যানুযায়ী রাত দিন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ