বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যে পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলামের মূল ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত তন্মধ্যে রোজা অন্যতম। রোজা শব্দের আরবি শব্দ হলো সওম। সওম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় পানাহার এবং স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাকার নাম সওম। আল কোরআনে সাওমের বিধান এভাবে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরের হালতে থাকবে, সে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে পারবে। আর রোজা পালন করা যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীন কে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি আনন্দের সাথে সৎকর্ম করে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি রোজা পালন কর তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর হবে, যদি তা তোমরা অনুধাবন করতে পার।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৩, ১৮৪)।
উল্লিখিত দু’টি আয়াতে রোজার ফরজিয়ত হতে শুরু করে বিশেষ বিশেষ দিকগুলোর কথা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। রোজা রাখতে হবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্ব থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। রোজার নিয়তে একাধারে বিরত থাকলেই তা’ রোজা বলে পরিগণিত হবে। সূর্যাস্তের এক সেকেন্ড আগেও যদি কোনো কিছু ভক্ষণ করে, পান করে কিংবা সঙ্গমে লিপ্ত হয়, তাহলে রোজা হবে না।
অনুরূপভাবে সবকিছু থেকে বিরত থাকার পরও যদি রোজার নিয়ত না থাকে, তাহলেও রোজা হবে না। রোজার হুকুম শুধু মাত্র উম্মতে মোহাম্মাদীর ওপরই ফরজ করা হয়নি, বরং পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও রোজা ফরজ ছিল। রোজা একটি কষ্টকর ইবাদত। এই ইবাদত পূর্ববর্তী সকল উম্মতই পালন করেছে। তবে, পূর্ববর্তী উম্মতদের রোজার প্রকৃতি ও দিন-ক্ষণ উম্মতে মোহাম্মাদীর ওপর আরোপিত রোজা হতে কিছুটা ভিন্ন ছিল। সওম ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ রূপ উম্মতে মোহাম্মাদীর উপরই আরোপ করা হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত সাওম ইবাদতের রূপ রেখা ও হুকুম-আহকামের কোনো পরিবর্তন হবে না।
রোজা ফরজ করার পেছনে যে হেকমতটি নিহিত রয়েছে, তা হলো তাকওয়া ও পরহেজগারীর শক্তি অর্জন করা। যাবতীয় পানাহার, কামাচার, পাপাচার হতে বিরত থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার। অথচ রোজাদারের জন্য তা’কঠিন বলে বিবেচিত হয় না। কারণ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দৈহিক তাড়নাকে প্রশমিত করা ও প্রবৃত্তির চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে এক বিশেষ শক্তি অর্জিত হয়। এই শক্তিই তাকওয়া ও পরহেজগারীর ভিত্তিকে মজবুত করে গড়ে তোলে।
তবে যারা অসুস্থ, রোজা রাখতে যাদের কষ্ট হয়, অথবা রোগ ও অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, তবে তারা সে দিনের রোজা পরবর্তী দিনে কাযা আদায় করতে পারবে। অনুরূপভাবে বয়বৃদ্ধ ব্যক্তির যার রোজা পালন করা নেহায়েত কষ্টের, সে ফেদিয়াস্বরূপ একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। তার রোজা কাযা আদায় করতে হবে না।
আর মুসাফিরের বেলায় রোজা না রাখার হুকুম তখন প্রযোজ্য হবে যখন শরীয়ত গ্রাহ্য দূরত্ব অতিক্রম করার লক্ষ্যে গৃহ হতে বের হবে। এছাড়া যদি গৃহ হতে বের হয়ে থাকে, তাহলে মুসাফির হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এবং রোজা না রাখার হুকুম তার ওপর আরোপিত হবে না। বরং তাকে রোজা পালন করতেই হবে। কেবল যারা প্রকৃতই মুসাফির তারা সফরের হালতে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে এর কাযা আদায় করতে পারবে।
প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে, একটি রোজার ফেদিয়া হলো অর্ধ সা’ গম বা তার মূল্য। আশি তোলা সের হিসেবে অর্ধ সা’ এক সের সাড়ে বার ছটাক হয়। এই পরিমাণ গম অথবা এর মূল্য কোনো মিসকীনকে দান করে দিলেই একটি রোজার ফেদিয়া আদায় হয়ে যাবে। ফেদিয়া কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা বা কোনো ব্যক্তির পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া যায়েজ নয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিকভাবে রোজা পালনের তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।