Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে করোনার থাবার মধ্যে ডায়রিয়ার ভয়াবহ বিস্তার

সরকারি হিসেবেই ৮ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩২ হাজারের বেশী

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৪২ পিএম

করোনা ভাইরাসের মরণ ছোবলের মধ্যেই ‘মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ’ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার ব্যাপক বিস্তার জনস্বাস্থ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। চিকিৎসক সহ জনবলের মারাত্মক সংকট নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে পারছে না। সেখানে করোনার মত মরণব্যাধীর সাথে ডায়রিয়ার ভয়াবহ বিস্তার পরিস্থিতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। সরকারি হিসেবে গত ১৩ মাসে যেখানে ১৩ হাজার ৫০৩ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছে, সেখানে গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করেছে। মারা গেছেন ৮ জন। এ সংখ্যাটা শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীদের। বেসরকারি মতে আক্রান্তের সংখ্যাটা অনেক বেশী। পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বিভাগের দুুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বৃদ্ধি করছে। বরিশাল মহানগরি ও সন্নিহিত এলাকায়ও ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমবনতি অব্যাহত রয়েছে। অথচ এ বিভাগীয় সদরের দুুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট অপ্রতুল। এ ব্যাপারে নগর প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ এখনো লক্ষ্য করা যায়নি।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হলেও বয়স্কদের সেখানে ভর্তি দূরের কথা কোন ধরনের পরামর্শও প্রদান করা হচ্ছে না। মাস কয়েক আগে এ হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সদর হাসপাতালে যাবার পথে এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। আর জেনারেল হাসপাতালটিতে মাত্র ৪টি শয্যা রয়েছে ডায়ারিয়া রোগীদের জন্য। মঙ্গলবার সেখানে ডায়রিয়া রোগী ছিল ৪৬ জন। রোববারে সংখ্যাটা ছিল ৬০-এর উর্ধ্বে। ফলে ইতোমধ্যে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে তাবু খাটিয়ে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলার ১৮টি ইতোমধ্যে ডায়রিয়া উপদ্রুত। ইতিমধ্যে বরিশালে ৪ জন, পটুয়াখালীতে দুজন ও বরগুনাতেও আরো ২ জন ডায়রিয়া রোগী মারা গেছেন। মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় পটুয়াখালী সদরের শংকরপাশা গ্রামের ৬০ বছর বয়স্কা পিয়ারা বেগম ও বাউফলের কেশবপুরের খাদিজার (২৭) মৃত্যু হয়েছে। ইতিপূর্বে বরিশালের বাকেরগঞ্জেই ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরগুনায় মারা গেছেন আরো দুজন।
গত ২৪ ঘন্টাই দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ১ হাজার ৫১২ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ভোলাতেই সর্বোচ্চ ৩২৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। এরপরে পটুয়াখালীতে ৩২১, বরগুনায় ২৫৬, বরিশালে ২৪৭, ঝালকাঠীতে ২৩৯ ও পিরোজপুরে ১২৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
গত এক সপ্তাহেই এ অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ২০ জন। আর একমাসে আক্রান্তের সংখ্যাটা ১৭ হাজার ৬৭২। তবে শুধুমাত্র যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ডায়রিয়ার রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন, তাদের সংখ্যাটাই স্বাস্থ্য বিভাগ নথিভূক্ত হচ্ছে। মূলত সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও সিংহভাগ রোগী সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার সহ নিজস্ব ব্যবস্থায় ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এসব রোগীদের কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় ডায়রিয়ায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগের পরে এ রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটতে শুরু করে। ইতিপূর্বে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার অবস্থা অপেক্ষোকৃত খারাপ থাকলেও এখন সবগুলো জেলার অবস্থাই খারাপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানানো হলেও এসব টিমের কোনটিতেই চিকিৎসক নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দু-তিনটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া প্রতিটি টিমে একজন করে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ‘সেকমো’ বা পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা কাজ করছেন। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সহ আইভি ফ্লুইড-এর সরবরাহ রয়েছে বলেও দাবী করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। তবে খোলা বাজারে স্যালাইন সংকট সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী দ্বীপ জেলা ভোলাতে, ৮ হাজার ৯০ বলে সরকারিভাবে জানান হয়েছে। পটুয়াখালীতেও ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া বরগুনাতে ৪ হাজার ৮৪৯, বরিশালে ৪ হাজার ৩৬৯, পিরোজপুরে ৪ হাজার দুজন ও ঝালকাঠীতেও সাড়ে ৩ হাজারের বেশী ডায়রিয়া আক্রান্ত বলে জানা গেছে। গতবছরও একই সময়ে বরগুনায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্তের পাশাপাশি অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল ।
এ ব্যাপরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার সাহা জানান, বৃষ্টির অভাবের সাথে দুঃসহ গরমের পাশাপশি খাবার-দাবারে অসতর্কতার জন্য মৌসুমের এসময় ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া দেখা দেয়। তবে এবার সংখ্যাটা যথেষ্ঠ বেশী। তিনি সকলকে পানি সহ সবধরনের খাবারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দেন। যেকোন ধরনের পেটের পীড়া সহ উপসর্গ দেখা দিলে সরকারি হাসপাতাল সহ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবারও পরামর্শ দেন তিনি। হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান পরিচালক।

 



 

Show all comments
  • শওকত আকবর ২০ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৫৯ পিএম says : 0
    ভয়াবহ এক কঠিন সময় পাড় করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ