পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ সংলগ্ন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে তাকে থানা পুলিশ ও ডিবির একটি দল গ্রেফতার করে।
প্রথমে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসির কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় তেজগাঁও থানায় এবং পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় মিন্টু রোডে নেয়া হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর-রশিদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় তদন্তে সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতেই হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় হামলা ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। আমরা মামলাটি তদন্ত করছিলাম, তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে মানুনুলকে গ্রেফতারের বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নতুন পুরাতন বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামুমুলকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে। তাকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় ছাত্রদের একটি গ্রুপ তার মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ করে। মামুনুলকে নিয়ে আসার পরও তাদের বিক্ষোভ অব্যহত থাকে। তবে পুলিশের অতিরিক্ত পাহারার কারতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ডিসি হারুন অর রশীদ আরো বলেন, সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপনারা বেশ কিছুদিন ধরে সারা দেশে হেফাজতের তান্ডব দেখেছেন। পল্টন থানাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও ভাংচুরের ঘটনায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলা মামুনুল হককে এজহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্যও দিয়েছে। তার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পরে আমরা তাকে নজরদারিতে রেখেছিলাম। এখন সব ঘটনার বিষয়ে ও মোহাম্মদপুর থানায় করা মামলার বিষয়ে স্পষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, আমরা শুনেছি তাকে সেসব মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, মামুনুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। তার রিমান্ড চাওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে মামুনুলকে গ্রেফতারের পর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। মূল সড়ক থেকে মাদরাসা গেটে প্রবেশের রাস্তার মুখে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে মাদরাসা গেটের ঠিক সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য মাদরাসার প্রবেশ পথের কাছে আলী অ্যান্ড নূর রিয়েল স্টেট মোড়ে সামনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
দায়িত্বরত মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক দেবাশীষ মুদক বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে মাদরাসা গেটের সামনের দিকে অবস্থান নিয়েছি। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা অদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা তৎপর রয়েছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রায় শতাধিক সদস্য সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।
ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মামুনুলের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,সহ দেশের বিভিন্নস্থানে নাশকতা ও তান্ডব চালানানোর অভিযোগে মামলা রয়েছে। এসব মামলা তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। প্রথমে তাকে পল্টন থানায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হবে।
গত ৩ এপ্রিল দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে ওঠেন মামুনুল। ওই সময় স্থানীয় লোকজন তাকে অবরুদ্ধ করলে হেফাজত কর্মীরা ছাড়িয়ে নেন। ওই ঘটনার পরবর্তীতে তার বেশ কয়েকটি অডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নতুন করে আলোচনায় আসেন মামুনুল।
যেভাবে গ্রেফতার করা হয়
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টকান্ডের পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল। তিনি ওই মাদরাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ ও তেজগাঁও বিভাগের শতাধিক পুলিশ প্রথমে ওই মাদরাসাটা ঘিরে ফেলে। এ সময় মাদরাসার ভেতরে দেড় শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। পুলিশের অভিযানে প্রথমে তারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত পুলিশ দেখে হাল ছেড়ে দেন। পরে মামুনুল হককে দোতলার ওই কক্ষ থেকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। প্রথমে তাকে মিরপুর সড়কে পুলিশের তেজগাঁও ডিভিশনের ডিসি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মামুনুলকে গ্রফতারে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর-রশীদসহ কয়েকজন মাদরাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে মামুনুল হককে বলা হয়, আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। পরে মামুনুল হক স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাদরাসা থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে এসময় মামুনুলের হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি। তার সঙ্গে মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষককে হেঁটে আসতে দেখা যায়। এসময় মামুনুল স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যান। মাদরাসা থেকে বের হওয়ার পর একটি গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিসি হারুনের কার্যালয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।