Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ট্যাম্পাকো ফয়েল কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২৬, আহত শতাধিক

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা : টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকার ট্যাম্পাকো কুটিংস লি: ফয়েল ও র‌্যাপিং কারখানায় স্মরণ কালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে ২৩ জনের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর আরো ৩ জন মারা যায় বলে জানা গেছে। এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাড়ায় ২৬ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক শ্রমিক। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কারখানার ভেতরে আরো অনেকে আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ভোর ৫টা ৫৫মিনিটে বয়লার বিস্ফোরণে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ধ্বসে পড়া ৫ তলা বিশিষ্ট কারখানার ভেতরের দিকে আগুন দাউ দাউ কওে জ্বলছিল। ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানায়, কারখানার ৭টি বয়লার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ৫ তলা ভবন ধ্বসে পড়ায় উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় স্বেচ্ছাশ্রম কর্মীদের খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, কারখানায় রাতের শিফটে কর্মরত ছিল মোট ৩৭৫ জন শ্রমিক কর্মচারী। অগ্নিকান্ড ঘটে শিফট পরিবর্তনের সময়ে। ফলে সকালের শিফটেরও অনেক শ্রমিক কারখানায় এসে পৌছায়। যার ফলে অগ্নিকাণ্ডে মোট কতজন শ্রমিক কর্মকর্তা ভেতরে আটকা পড়েছে তা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না।
উদ্ধারকৃত নিহতরা হল-ইদ্রিস (২৫), আল-মামুন (৪০), কুমিল্লা জেলার নয়ন (৩০), জাহিদুল (৫০), সভাস (৪০), রিক্সা চালক রাজিব (২৫), জাহাঙ্গীর (৫০), নিরাপত্তা কর্মী হান্নান মিয়া (৪০), জয়নাল আবেদিনি (অপারেটর), আনোয়ার হোসেন (অপারেটর), শংকর (ক্লিনার), রেদোয়ান (দারোয়ান), রফিকুল ইসলাম (শ্রমিক), আব্দুল বাছেদ, ইমান হোসেন, মোঃ আলম, পথচারী আসমা আক্তার, দেলোয়ার হোসেন, প্রিন্টিং হেলপার রফিকুল ইসলাম। নিহত অন্যদের নাম পরিচয় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। এদিকে উত্তরা ফায়ার বি.গ্রেডের আমিনুল ইসলাম ৭টা ২৯ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হন।
ফায়ার সার্ভিসের ডিডি আক্তারুজ্জামান জানান, আজ শনিবার ভোর ৫টা ৫৫মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের পর খবর পেয়ে তা নেভাতে প্রথমে টঙ্গী, জয়দেবপুরসহ আশে-পাশের ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি বলেন, আগুনের ভয়াবহতা দেখে পর পর সদর দফতরসহ জয়দেবপুর, কুর্মিটোলা, মিরপুর, উত্তরা, ঢাকা ক্যান্টনম্যানসহ প্রায় সব খবর ফায়ারকে জানানো হয়। এরপর ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারখানার ৫তলা ভবনটি উপরের ছাঁদ ধ্বসে পরে বিসিকের রাস্তার ওপর সোনালী ব্যাংকের পিছনের অংশে এবং কাসেম মাতবরের বাড়ীর এবং সেলিমের গোডাউনের ওপর গিয়ে পড়ে। ওই রাস্তায় চলাচলকারী রিক্সারোহী মহিলা যাত্রীসহ ৩জন নিহত হয়। এদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে টঙ্গীর কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। শনিবার দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি জানান, এই দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিসিক শিল্প নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ডিআইজি আব্দুস সালাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, জেলা পুলিশ সুপার হারুনর রশিদ, ফায়ার সার্ভিসের জয়েন্ট সেক্রেটারি এডমিন আনিস মাহমুদ, মহাপরিচালক লে. কর্নেল মোশারফ, ফায়ার হেড কোয়াটারের স্টেশন অফিসার সারোয়ার এ খান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সুপার সোয়েব আহম্মেদ পিপিএম। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান খান কিরন, সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার ডিজিএম একে এম রফিকুল ইসলাম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ আফজাল, টঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ তালুকদারসহ স্থানীয় রাজণীতিক ও সামাজিক নেতৃবর্গ। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল্লাহ সেলিম জানান, তার গোডাউনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাল ছিল। কাসেম মাতবরের জামাতা মিলন মিয়া জানান, আমরা কোন রকম প্রাণ নিয়ে সবকিছু ছেড়ে দৌড় দিয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু আমাদের সবকিছু শেষ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। আশপাশ এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ