বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গ-ামারায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর গুলি বর্ষণে অন্তত ৫ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় পুরো এলাকায় ধরপাকড় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় শনিবার রাতে বাঁশখালী থানায় শ্রমিক ও এলাকাবাসীসহ সাড়ে তিন হাজার মানুষের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ গ্রেফতার অভিযানে নামে। স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ ঘরে ঘরে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পবিত্র রমজানে মানুষ বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। হতাহতদের পরিবারে আহাজারির পাশাপাশি চলছে গ্রেফতার আতঙ্ক। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের ঘটনায় বাঁশখালী থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল রাতে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারজনকে আসামি করা হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের চিফ কো–অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৪০ থেকে ১ হাজার ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
এদিকে গুলিতে আহত অন্তত ৩০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের কয়েক জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিকেরা হলেন আমিনুল ইসলাম (২৫), মো. আমির (২৪), মো. দিদার (২১), মো. বিল্লাল (২৬), মো. আযাদ (১৮), মো. কামরুল (২৬), শিমুল (২৮), শাকিল (২৩), মোরাদ (২৫), মিজান (১৮), রাহাত (২৮), হাবিবুল্লাহ (১৮), হাসান (৪০) ও অভি (২০)। একই হাসপাতাল ভর্তি হওয়া আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন মো. ইয়াসির (২৪), আহমদ কবির (২৬) ও আসদুজ্জামান।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) শীলাব্রত বড়ুয়া বলেন, শ্রমিকেরা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আর পুলিশ সদস্যদের জখম ইট ও পাথরের আঘাতে। নিহত পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে।
গতকাল সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন ছয় পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। গতকাল বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি বর্ষণ করতে থাকে। গুলিতে ৫ জন নিহত হন। আহতদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ। আহত শ্রমিকেরা বলছেন কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ সরাসরি গুলি করেছে। তবে পুলিশের দাবি তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি বর্ষণ করেন।
বাঁশখালী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে উপকূলবর্তী এলাকায় এস আলমের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে। এখানে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। পবিত্র রমজান মাসে শ্রমিকদের ইফতারি ও নামাজের সময় না দেওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চরমে উঠে। আগে থেকে নানা বঞ্চনার অভিযোগ ছিলো।
গতকাল ঘটনার তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।