বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে ৩৪ জন নিহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রানালয়ের তদন্ত কমিটি। এতে এমভি এসকেএল-৩ নামক পণবাহী কার্গোর চালকের বেপরোয়া গতিকে দায়ী করেছেন নৌপরবিহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি৷ একই সাথে কয়লাঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুটির নির্মাণ কার্যক্রমে ত্রুটির কথাও উল্লেখ রয়েছে কমিটির জমা দেওয়া ২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে৷ গত সোমবার (১২ এপ্রিল) জমা দেওয়া এই প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি৷
গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা পাঁচটা ছাপ্পান্ন মিনিটে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যায় এম এল সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চটি। আনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর অদূরে এম ভি এসকেএল-৩ (রেজিস্ট্রেশন নং: এম ০১-২৬৪৩) নামে একটি কার্গোজাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে। সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চটিকে ঠেলে অন্তত ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেয় কার্গোজাহাজটি। এর মধ্যেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, রাতেই অন্তত ৩০ যাত্রী সাঁতরে জীবিত অবস্থায় নদী পার হতে সক্ষম হন। প্রাণ হারান ৩৪ জন যাত্রী। নিহতদের মধ্যে ৭ শিশু, ১৩ পুরুষ ও ১৪ নারী।
লঞ্চডুবির এই ঘটনায় গঠিত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন যুগ্ম সচিব আব্দুল ছাত্তার শেখ৷ কমিটি নৌসচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দীন চৌধুরীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, পণ্যবাহী জাহাজটির বেপরোয়া গতি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ৷ একই সাথে শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর পিলার নদীর মধ্যে স্থাপন করায় এবং নৌপথে প্রতিবন্ধকতামূলক নির্মাণসামগ্রী রাখায় নৌপথ সরু হয়ে যাওয়া দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ৷ তবে কার্গো জাহাজে প্রথম শ্রেণির সনদধারী চালক ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিবেদনে, সেতুর পিলার সরিয়ে নদীর প্রশস্ততা বাড়ানো, ছোট আকারের সানকেন ডেকবিশিষ্ট লঞ্চ ক্রমান্বয়ে সরিয়ে দেওয়া, অলস জাহাজ যততত্র পার্কিং বন্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে৷
তদন্ত কমিটি ২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এসকেএল-৩ নামক পণ্যবাহী জাহাজের মাস্টার, ড্রাইভারের জবানবন্দি, ডুবে যাওয়া লঞ্চ সাবিত আল হাসানের বেঁচে যাওয়া মাস্টার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রায় তিন পৃষ্ঠাজুড়ে রয়েছে সুপারিশ ও দুই পৃষ্ঠায় রয়েছে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের নাম ও দায়িত্ব।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেঁধে দেওয়া সাত কর্মদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাজটি প্রথম শ্রেণির মাস্টার ওয়াহিদুজ্জামান চালাচ্ছিলেন। অপর দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চে তৃতীয় শ্রেণির চালক জাকির হোসেন ছিলেন। কার্গো জাহাজের চালকের বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে জাহাজটির রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) থাকলেও সার্ভে রিপোর্ট ছিল না বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সার্ভে রিপোর্ট ছাড়া চলাচল করে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ-১৯৭৬ এর সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘন করেছে জাহাজটি
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর অনেক স্থাপনা নদীর মধ্যে থাকায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। নদীর ভেতরে কয়েকটি পিলার বসানো হয়েছে। এতে নৌপথটি সরু হয়ে গেছে। এটিও নৌ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রতিবেদনে সেতুর পিলার ও নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নদীর প্রশস্ততা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। দুদিক থেকে নৌযান যাতে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে-সেই সুপারিশও করা হয়। এছাড়া চালকদের অদক্ষতা ও অবহেলার বিষয়ে সচেতন করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, সার্ভেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো, ঘটনাস্থল থেকে খেয়াঘাট সরানোর এবং যত্রতত্র অলস জাহাজ যাতে নোঙর না করতে পারে সেই পদক্ষেপ নেওয়াসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।
এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় হত্যার উদ্দেশ্যে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী জাহাজ চালিয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবিয়ে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ ছিল না। এমনকি জাহাজের নাম ও নম্বরও উল্লেখ ছিল না মামলায়। মামলাটি তদন্ত করছে নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা পুলিশ।
তবে গত ৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া কোস্টগার্ড স্টেশনের ৫শ মিটার দূরে নোঙর করা অবস্থায় পণ্যবাহী এসকেএল-৩ জাহাজটিকে আটক করা হয়৷ এ সময় ঘাতক জাহাজের মাস্টার, সুকানি, গ্রিজারসহ ১৪ স্টাফকেও গ্রেফতার করা হয়৷ আসামিদের মধ্যে মাস্টার, চালকসহ ৫ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে নৌ পুলিশ৷ পণ্যবাহী জাহাজটি বাগেরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের মালিকানাধীন শেখ লজিস্টিকস নামক প্রতিষ্ঠানের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।