Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার সেবা নেননি একজন রোগীও

বসুন্ধরা ও ডিএনসিসি আইসোলেশন সেন্টার প্রতি মাসে বসুন্ধরা সেন্টারকে ভাড়া দিতে হতো ৬০ লাখ টাকা খরচ বাঁচাতেই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে প্রথম মহামারী করোনাভাইরাস দেখা দেয়। পরে তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ২২ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে ‘নভেল করোনাভাইরাস, নতুন রোগের ঝুঁকি’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে একই বছরের ৮ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানায়। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে সরকার। বিশেষত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও করোনা নিয়ন্ত্রণে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে। প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে ছিল উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য না থাকা, গুজব, কোন ওষুধ বা টিকা না থাকা সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে এ রোগের চিকিৎসা সেবায় যুক্ত করে সরকার।

দেশে নতুন মহামারীর প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের সামনের খালি জায়গায় ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করে ১৭ মে ২ হাজার শয্যার অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ওই দিন এ আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন। অস্থায়ী হাসপাতালের কাঠামো ও তাবু ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেন্টারটিতে আইসিইউ ইউনিট ও ভেন্টিলেশন সুবিধা সংযোজন করা হয়নি। শুধু বসানো হয়েছে শয্যা ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি। অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারটি পরিচালনার জন্য পরিচালক হিসেবে ডা. তানভির আহমেদকে নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। দৈনিক আট ঘণ্টা করে তিন ধাপে দায়িত্ব পালনের জন্য ৩১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৬৩০ জন মেডিকেল অফিসার, ১২৬০ জন সিনিয়র নার্স ও ২৫২০ জন স্টাফ নার্সের ব্যবস্থাও করা হয়। যারা দীর্ঘদিন কর্মহীন ছিলো।

দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস আইসোলেশন সেন্টারটি চালু রাখলেও কোনও রোগী ভর্তি হয়নি। দীর্ঘদিন রোগী ভর্তি না হলেও প্রতিমাসে সরকার বসুন্ধরাকে ৬০ লাখ টাকা ভাড়া দিতে হতো। পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হতো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং সরকারকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার ১২টি হাসপাতাল বন্ধের উদ্যোগ নেয়। তার মধ্যে বসুন্ধরা কোভিড আইসোলেশন সেন্টারও ছিল। একই সঙ্গে ওই সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারকও বাতিল করা হয়। বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সব চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ফেরত এনে বদলি বা পদায়ন করা হয় বিভিন্ন হাসপাতালে। সেখানে থাকা ২ হাজার ৩১টি জেনারেল বেডের যাবতীয় আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ফেরত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অস্থায়ী হাসপাতালটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, তিনটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে ২ হাজার ১৩টি শয্যা বসানো হয়েছিল।

তথ্য মতে, বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারের মতোই মহাখালীতে অবস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গত ৭ বছর ধরে অব্যবহৃত শপিং কমপ্লেক্সকে করোনা চিকিৎসায় আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিনের পরিত্যাক্ত ভবনকে নতুন করে ৭০০-৮০০ শয্যার ব্যবস্থা করতে রুম তৈরি, টয়লেট নির্মাণ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করাসহ ব্যবহারের উপযোগী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। দীর্ঘদিন এই আইসোলেশন সেন্টারটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিলো। পাশাপাশি করোনায় সংক্রমিত চিকিৎসক ও নার্সদের চিকিৎসার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একই ভবনের অপর একটি ফ্লোরে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ২০০ বেডের একটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। যদিও পুরো কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করে একজন রোগীও সেবা নিতে আসেনি। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সদের আস্তে আস্তে সরিয়ে নেয় এবং শপিং কমপ্লেক্সের ফ্লোরগুলোতে ভেকসিনেশন সেন্টার এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়। আর গত মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করোনা মহামারী আবার ভয়াবহভাবে বিস্তার শুরু করলে এবং অন্যান্য হাসপাতালে রোগী সংকুলান না হওয়ায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ভবনটির নিচের ফ্লোরে আইসোলশন সেন্টারের ব্যবস্থা করা এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপরের আংশিক সম্পন্ন ফ্লোরকে ২০০ বেডের একটি আইসিইউ সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করে। যা বাংলাদেশের বৃহৎ আইসিইউ সেন্টার হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রথম দিকে অজানা এই ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, শনাক্ত বৃদ্ধি, হাসপাতালে রোগীর স্থান সংকুলান হচ্ছিলো না, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা ছিলো না। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খুব কম সময়ে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারকে আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তর করি। পরে রোগী না আসায় উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে সরকারি খরচ বাঁচাতেই বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারকে ছেড়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি সেখানে থাকা চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। মহাখালীতে অবস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অব্যবহৃত শপিং কমপ্লেক্সের আইসোলেশন সেন্টারের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এটার কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই রোগীর চাপ কমে যায়। তাই চিকিৎসক-নার্সদের আস্তে আস্তে সরিয়ে নেই এবং শপিং কমপ্লেক্সের ফ্লোরগুলোতে ভেকসিনেশন সেন্টার এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করি। পাশাপাশি ওই সময়ে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ২০০ বেডের আংশিক সম্পন্ন হাসপাতালকেই এখন আইসিইউ সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সরকার প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রথম দুই মাস দৈনিক করোনা শনাক্তের সংখ্যা তিন অঙ্কের মধ্যে থাকলেও জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফলতা দেখায়। নভেম্বরে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা ওপরে উঠলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত পড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নীচে নেমে আসে, দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিনশ’ জনেরও কম। কিন্তু মার্চ মাসের শুরু থেকে করোনা আবার ভয়াবহতা ছড়াতে শুরু করে। শনাক্ত ও মৃত্যু প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। শনাক্ত গত কিছুদিন থেকেই ৭ হাজারের ওপরে। গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের। #



 

Show all comments
  • Omor Faruk ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
    The patient disappeared at the hospital before arriving
    Total Reply(0) Reply
  • Sohan Rahman ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    সাবাস চোরের দল সাবাস।
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir Hosen ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    বিকেলে সংবাদে বলল হাসপাতাল উধাও হওয়ার ঘটনাটি মিথ্যে। এখন শুনি অারেক খবর ।সত্যি বলতে তারা দেশের সবকিছু লোটেপোটে খাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rashed Ome ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    এটাকে জায়ে্য করবার জন্য বহু কথা জাতী শুনতে পাবে। এই ছোট্ট কথাখানি ডেলীভারী দিতে এতো লেট হলো কেনো কাকু?????
    Total Reply(0) Reply
  • Hasibul Islam Sadi ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    দেশ মইরা যাক ওগো ব্যবসা আগে।।টাকা ফেরত দিতে বলেন যেহুতু কোনো কামেই লাগে নাই।।পাব্লিক এর টাকা এমনে কইরাই বাশ দেই।দেশের এই অবস্থা উল্টা এইসব গ্রুপ আগাইয়া আসবে সব ফ্রি কইরা দিবো তা না প্রতি মাসে উল্টা বাড়া নিছে।।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mamun ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    চোরে মায়ের বড় গলা কথা বলে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack+Ali ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৬:০২ পিএম says : 0
    O'Bangladesh people why liberated our country from barbarian Pak Army??? they why our ruler become more barbarian than pakistani Army because you Muslim don't want Quranic Law... we will suffer in their hand more and more every second.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ