পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন চলছে। সরকার ঘোষিত এই লকডাউনের গতকাল ছিল শেষ দিন। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন আসছে। কঠোর লকডাউনের খবরে রাজধানীর মানুষের মধ্যে গ্রামের বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়ে গেছে। অথচ দূর পাল্লার সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউনে রাজধানীতে সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সড়কে গণপরিবহনসহ সবধরণের যানবাহনই চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে দূরপাল্লার সকল বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারের সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউন অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে পালন করেছে দেশের জনমানুষ। এতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমেনি। বরং গতকালও করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৮ জন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে আবারও সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে যাওয়ার কথা রয়েছে। আসন্ন এই লকডাউনটি কঠোরভাবে কার্যকর করার বিষয়ে ভাবছে সরকার। সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে ঢাকাসহ দেশের সকল সিটি করপোরেশন এলাকার গণপরিবহনসহ সব ধরণের যানবাহনের চলাচল করলেও দূরপাল্লার সব পরিবহন লকডাউনে বন্ধ।
গতকাল রোববার রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালি ও গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শত শত বাস দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দূরপাল্লার সব পরিবহন বন্ধ। প্রতিটি কাউন্টারের গেটেও ঝুলতে দেখা গেছে তালা। তবে পরিবহনগুলোর চালক হেলপার ও সুপারভাইজাররা বাসের সঙ্গে টার্মিনালেই অবস্থান করছেন। এদিকে কঠোর লকডাউনের খবর শুনে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তারা ব্যাগ নিয়ে বাস কাউন্টারে এসে দাঁড়াচ্ছেন। তবে কোনো প্রকার দুরপাল্লার পরিবহন চলছে না বলে কেউ খোলা ট্রাকে আবার কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেটকার ভাড়া করে বাড়ির পথে রওয়ানা হতে শুরু করেছেন। অনেককে দেখা গেল মাইক্রোবাস ভাড়া করে গ্রামের পথে ছুটছেন।
সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালের সব কাউন্টার বন্ধ থাকায় সেখানে যাত্রীদের কোনো ভিড় নেই। তবে টার্মিনালের বাইরে সড়কে যাত্রীদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। বাড়ি যাওযার এই সব যাত্রীদের বেশিভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা রাজধানীতে হকারি, ফল বিক্রেতা, লেবারসহ বিভিন্ন দিনমজুরের কাজ করতেন। করোনায় রাজধানীর সব বন্ধ থাকালে তাদের কাজও বন্ধ থাকবে। এই জন্য তারা বাড়ি ফিরতে চাইছেন।
আফিল আহমেদ একজন হকার। পাড়ামহল্লায় ঘুরে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি বিক্রি কবরেন। রোববার সকাল থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। সঙ্গে তার পরিবারের আরও দুই সদস্য রয়েছেন। তারা যাবেন সিলেট। তবে দূরপাল্লার কোনো পরিবহনের চলাচল না থাকায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন অফিল ও তার পরিবার। তিনি বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে যদি লকডাউন শুরু হয়। তবে সব কিছুই বন্ধ থাকবে। ঢাকায় থেকে কোনো কাজও করতে পারবো না। তাই পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সেখানে অনেকটা নিরাপদে থাকতে পারবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবহণ শ্রমিকরা বাস বন্ধ থাকলেও বাড়তি আয়ের জন্য মাইক্রো ভাড়া করে যাত্রীদের বেশি ভাড়ায় বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দিচ্ছেন। রাজদানী সিটি থেকে যেসব মাইক্রো বাইরের জেলাগুলোতে যায় সেগুলো ভাড়াও চায় অনেক বেশি। গাবতলী থেকে সিলেট যেতে জনপ্রতি ভাড়া চাচ্ছে ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। এদিকে গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ ফেরিঘাট পর্জন্ত প্রাইভেট কারও যাচ্ছে। তবে তাদের তিন হাজার টাকা ভাড়া। এত টাকা ভাড়া দিয়েই মানুষ যাচ্ছেন। অনেকেই শেয়ারে প্রাইভেটকার ভাড়া করে ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ঠিক একই চিত্র। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় অনেকেই সিএনজি বা সিটি বাসে করে যাচ্ছেন আব্দুল্লাহপুর। সেখান থেকে বাসে করে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি। শরিফ মিয়া নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। লকডাউনে সব বন্ধ থাকলে তার কাজও বন্ধ থাকবে। তাই তিনি বাড়ি চলে যাবেন। তার সঙ্গে রয়েছে আরো তিনজন। মহাখালী বাস টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করছিলেন। তিনি বলেন, বাস বন্ধ থাকলেই কি, এখন আমাদের বাড়ি যেতেই হবে। ময়মনসিংহ যাবো ভেঙে ভেঙেই যেতে হবে। এখান থেকে আব্দুল্লাহপুর যাবো। সেখান থেকে বাসে গাজীপুর তারপর আবার অন্য বাসে করে ময়মনসিংহ যাওয়া যাবে। আর কোনো ট্রাক পাইলে চলে যাবো। বাড়ি আমাদের যেতেই হবে।
এদিকে মহাখালী বাস ট্রার্মিনালে গত এক সপ্তাহ ধরে বসস্ত বাস বন্ধ রয়েছে। বাসের চালক হেলপার ও সুপারভাইজাররা টার্মিনালের ভেতরেই বাসের আনুসাংঙ্গিক মেরামত কাজ করছেন। কেউ টার্মিনালের ভেতরে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। সবার একটাই প্রশ্ন- কবে থেকে চালু হবে বাস।
মহাখালী বাস টার্মিনালে থাকা শ্রমিকদের খাওয়া দাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছেন মহাখালী টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়ন। এ বিষয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া বলেন, এখানে প্রতিদিনই প্রায় ৭ থেকে ৮শ শ্রমিকের জন্য রান্না করা হচ্ছে। আমরা তাদের জন্য খিচুড়ি রান্না করছি। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
গতকাল টিকাটুলির মেয়র মো: হানিফ ফ্লাইওয়ারের প্রান্তে দেখা গেল মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এখান থেকে কুমিল্লায় রুটে বাস যাতায়াত করতো। হেমায়েত নামেই এক পরিবহণ শ্রমিক জানালেন, দূর পাল্লার বাস না চলায় মানুষ মাইক্রোভাড়া করে কুমিল্লা যাচ্ছেন। প্রতিজন যাত্রীর কাছে ৭ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।