Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাইলেই বের হওয়া যাবে না ঘর থেকে

কেমন হবে এবারের লকডাউন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

মানুষ ইচ্ছে হলেই ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসতে পারবে না কেউ। এটা যেকোনও মূল্যে নিশ্চিত করা হবে। এরকম কঠোর বিধিনিষেধসহ আগামী বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে আপাতত সাত দিনের জন্য সারাদেশে সার্বাত্মক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই মুহূর্তে আর কোনও উপায় না দেখে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কাঙ্খিত ফল না পাওয়া না গেলে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। এ সময় সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মানতে হবে। এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সরকারের ওপরমহল থেকে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সূত্র জানিয়েছে, মেহনতি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে কড়া লকডাউন দিতে চায়নি সরকার। কিন্তু একদিকে করোনার বেপরোয়া সংক্রমণ ও মৃত্যু, অপরদিকে এই সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেওয়া নিয়মনীতি মানার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চরম অবহেলা কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। এবারের এক সপ্তাহের লকডাউনকে বলা হচ্ছে কমপ্লিট বা ফুল লকডাউন। মানুষ চাইলেই ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে আসতে বা ঘোরাঘুরি করতে দেওয়া হবে না। যেকোনও মূল্যে ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করা হবে।

সরকারের ওপর মহলের সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ অন্যান্য বিধিনিষেধের প্রতি জনসাধারণের অবহেলায় খুবই ক্ষুব্ধ সরকারের নীতিনির্ধারকরা। গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া ১৮ দফা নির্দেশনা জনসাধারণ মানেনি। নানাভাবে আনুনয় বিনয়ের পরেও মুখে মাস্ক পরানো যায়নি। ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ এখনও মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখেন। পুলিশ দেখলে মুখে তোলেন। ১৮ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে পারলে সংক্রমণের হার নিচের দিকে নামতো। বাধ্য হয়ে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রেখে অফিস আদালত সীমিত পরিসরে খোলা রেখে কঠোর নির্দেশনা বা আংশিক লকডাউন দিতে বাধ্য হয়। তবে এই ১০ দফা নির্দেশনা বা আংশিক লকডাউন দেওয়ার দুই দিন যেতে না যেতেই বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে বাধ্য হয় সরকার।

শুরুতে গণপরিবহন চালু করা হলো। এক্ষেত্রে দেওয়া ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায় ছাড়া কোনও শর্তই বাস্তবায়ন হয়নি গণপরিবহনে। পরের দিন নৌপথে চলাচলের জন্য নৌযান খুলে দেওয়া হলো। সেখানেও বাড়তি ভাড়া আদায় ছাড়া কার্যকর হয়নি কোনও শর্ত। এরপর জোর দাবি ও বিক্ষোভের মুখে খুলে দেওয়া হলো শপিংমল ও দোকান পাট। রাস্তায় নামলো সাধারণ মানুষের ঢল। মোবাইলের কভার পরিবর্তন, ঈদের জন্য জামা-কাপড়ের নতুন ডিজাইন দেখতে, বাজারের অবস্থা বুঝতে মানুষ ছুটতে লাগলো মার্কেট-শপিংমলের দিকে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। একদিকে রাস্তায় মানুষের ঢল, অপরদিকে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রতিযোগিতা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাধ্য হয়ে গত সোমবার ১৪ এপ্রিল থেকে আপাতত সাত দিনের জন্য কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশানুরূপ ফল না মিললে সময়সীমা বাড়বে- এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের সাত দিনের লকডাউনে মানুষ যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকবেন। কেউ কোনও অজুহাতেই এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারবেন না। সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্বসাশিত, আধা স্বায়ত্বশাসিত সব ধরনের অফিস-আদালত ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। চলবে না কোনও গণপরিবহন। বন্ধ থাকবে প্রাইভেট গাড়ি, লঞ্চ, ট্রলার জাহাজসহ সব রকম যানবাহন। এমনকি রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা ইত্যাদিও বন্ধ রাখার পরিকল্পনা চলছে। এই সময় বন্ধ রাখতে হবে সব রকমের নির্মাণ কাজ। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ওষুধ সংগ্রহ বা রোগী হাসপাতালে নেওয়া ছাড়া সাধারণ মানুষের ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে লাশ দাফন বা সৎকারে থাকবে না কোনও বিধিনিষেধ। জরুরি প্রয়োজনে নদীতে চালু রাখা হবে ফেরি চলাচল।

সেবাদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান যেমন ফায়ার সার্ভিস খোলা থাকবে। খোলা থাকবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ওষুধের দোকান। দিনে খুবই সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে কাঁচাবাজার। তবে সেখানে মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। লাইন ধরে তিনফুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে হবে। পুরোপুরি বন্ধ থাকবে সব ধরনের শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস। সব কিছুই লকডাউনের আওতায় থাকবে। সংক্রমণ রোধে প্রত্যেক মানুষকে এই লকডাউন মানতে হবে।

সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ রোববার বিকাল নাগাদ জারি করা আদেশে জানা যাবে পুরো বিধিনিষেধ। এবারের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কঠোর থাকবে প্রশাসন। মাঠে নামানো হতে পারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বা সেনাবাহিনীর সদস্যদের। এর আগে কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সরকারের সব সিনিয়র সচিব, সচিবসহ তিন বাহিনী প্রধানদের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান বা প্রতিনিধি, পুলিশ, বিজিবি, আনসার প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকতারা জুমে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেই সাত দিনের কঠোর লকডাউনের নিধিনিষেধ চূড়ান্ত করা হবে। এর পরই জারি করা হবে প্রজ্ঞাপন। আগামী ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন দিতে যাচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে গত শুক্রবার আগাম ইঙ্গিত দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একই সুরে কথা বলেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তারা জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য সারাদেশে কঠোর লকডাউন দেওয়া হবে। ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোনও উপায় নাই। যে কোনোভাবেই হোক মানুষকে ঘরে রাখতে হবে। সরকার এই লকডাউন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, অফিসিয়াল আদেশ বা নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। রোববার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিবদের সমন্বয় মিটিং হবে। সেখানেই অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত হবে।



 

Show all comments
  • NJ Keya ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
    কঠোর লকডাউন এ এবার সবাই হেঁটে হেঁটে মিছিল করতে করতে গ্রামের বাড়ি রওনা হবে।আহা,লকডাউন!
    Total Reply(0) Reply
  • Uttam Kumar Mahanta ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    মৃত্যুর ভয় সবারই আছে।বাংলাদেশের মানুষের কাছে সংখ্যা কেবলি একটি সংখ্যাই মাত্র।করোনা নিয়ে সচেতন তখনি হবে যদি গণমাধ্যমে দৈনিক ভিত্তিক দু চারটি বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে করোনায় মৃত ব্যাক্তির পরিচয় প্রচার করা হয়। ক্রমিক নং,নাম,গ্রাম,ইউনিয়ন, থানা, জেলা ইত্যাদি লিখে প্রচার করুন দেখবেন এক গ্রামের একটি মৃত ব্যাক্তির নাম ঘোষণার জন্য পুরো গ্রাম সচেতন হয়ে যাবে। অন্যথায় এ জাতি এই মহামারী থেকে যতটা নিজেকে সচেতন ও নিরাপদ রাখা দরকার ততটা রাখবে না। বুঝতে হবে, যে দেবতা যেই ফুলে তুষ্ট তাকে সেই ফুল দিয়েই পুজো দেওয়া উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rakib Mollah ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এর কর্মকর্তা-মন্ত্রী এমপি দের বেতন সম্মানী যাই বলুক অর্ধেক করে দেয়া হোক কারণ লকডাউন এর কারণে শ্রমজীবী হতদরিদ্র মানুষ যাদের কঠোর লকডাউন এর কারণে কর্ম হারিয়েছে তারা না খেয়ে মারা যাবে তাই ওই অর্ধেক টাকা দিয়ে তাদেরকে ত্রাণ দিন। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রীয় সকল অনুষ্ঠান এর খরচ ত্রাণ তহবিলে যুক্ত করা হোক। সবাই বেঁচে থাকুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Kanon Das ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    নকডাউন কার্যকর করলে, নিম্নআয়ের মানুষর জন্য প্রণোদনার ব্যবস্হা করুক সরকার এই প্রত্যাশা করি! আর এই প্রণোদনা যেন, সুষ্টুভাবে পৌছায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Daudul Islam ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
    বিশেষ করে এই রোজায় লকডাউনের কারণে যদি মার্কেট গুলো বন্ধ রাখা হয়-তবে অনেক ব্যবসায়ী সর্বশান্ত হয়ে যাবে. অনেকে ঋণের বোঝা নিয়ে পালিয়ে থাকতে হবে. গত বছরের ঘা এখনও শুকায়'নি.
    Total Reply(0) Reply
  • Bonny ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
    মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ একটু খেয়াল রাখবেন যেন করোনা থেকে বাঁচাতে গিয়ে মানুষ কে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে না হয়। কারণ খুধার জ্বালা অনেক কষ্টের যা আপনাদের হয়তো কখনোই স্পর্শ করে নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ