পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির দিনদিন অবনতি ঘটছে। হাসপাতালে আসা জনস্রোতের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। গত তিন দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ছয় চিকিৎসকের নাম।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে দেশে এ পর্যন্ত (১০ এপ্রিল) দুই হাজার ৯০৮ জন চিকিৎসক, এক হাজার ৯৯৬ জন নার্স এবং তিন হাজার ২৯৩ জন অন্যান্য স্টাফসহ মোট আট হাজার ১৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স রয়েছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৩৭ জন চিকিৎসক এবং তিনজন ডেন্টাল সার্জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় দেশে প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের ১৫ এপ্রিল। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমদ (৪৭)। ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়েই সংক্রমিত হয়েছিলেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে চিকিৎসক সমাজসহ সব পেশাজীবী শ্রেণি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকায় যোগ হওয়া সর্বশেষ নামটি হচ্ছে ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। গতকাল শনিবার রাত দেড়টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
অল্প সময়ের ব্যবধানে এভাবে এত চিকিৎসকের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, করোনায় আমরা অনেক বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র চিকিৎসককে হারিয়েছি। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি হতে অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। তারা দেশের সম্পদ। কষ্টের মধ্যেও গর্বের বিষয় হচ্ছে, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সম্মুখসারির এই যোদ্ধারা পিছপা হননি, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা সাহানা বানু বলেন, চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যে সংক্রমণের হার পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বেশি। কারণ হলো, কোভিড ইউনিটে ডিউটি শেষে স্বাভাবিকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম থাকলেও আমাদের চিকিৎসক-নার্সদের এক সপ্তাহ বাসায় থাকার পর আবারও ডিউটিতে যেতে হচ্ছে। কারণ তাদের জায়গায় কাজ করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই। কারণ স্বাস্থ্যকর্মীরা এতই আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন, তাদের স্থলে ডিউটি করার জন্য আমরা কাউকে পাচ্ছি না। বাধ্য হয়েই স্বাভাবিক কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার আগেই অন্যদের ডাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট আমাদের চিকিৎসকদের জন্য বেশি ভালনারেবল ও রিস্কি হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য চিকিৎসক সংক্রমিত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে একটা সময়ে স্বাস্থ্য খাত তো পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। সুতরাং চিকিৎসকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, নতুন করে নিয়োগ দিয়ে সংখ্যা বাড়াতে হবে। যারা কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন বা সরাসরি ল্যাবে কাজ করছেন, তাদের যেন সংক্রমণটা কম হয়, সে লক্ষ্যে গ্যাপ দিয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক দিন কোয়ারেন্টিনে থেকে এসে যেন ডিউটি করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভাইরোলজিস্ট নেই, আমাদের বেশ কয়েকজন ভাইরোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় আমরা কোনোরকমভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে তো চলতে পারে না। আমি অনেকবার বলেছি ঢাকা মেডিকেলে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ভাইরোলজির স্টুডেন্ট নেওয়ার জন্য। সরকারের কাছ থেকে সাড়া পাওয়ার পরও কোথায় যে বিষয়টি আটকে আছে, বুঝতে পারছি না। এ বছরের মধ্যে যদি নিতে না পারি, তাহলে খুবই সিরিয়াস অবস্থার মধ্যে পড়ে যাব। কারণ আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ভাইরোলজিস্ট নেই।
তিন দিনে মারা গেছেন ছয় চিকিৎসক : গত তিনদিনে ছয় চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার মারা গেছেন দুজন। ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী ছাড়াও এদিন মারা যান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজাদ্দেদ মেহেদী। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।
এর আগে গত শুক্রবার করোনাভাইরাসে দুজন চিকিৎসক মারা যান। তাদের মধ্যে একজন গরীবের চিকিৎসক খ্যাত আব্দুল লতিফ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার দক্ষিণ পাড় এলাকার শিকলবাহায়। শুক্রবার মারা যাওয়া অন্য চিকিৎসক হলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মোহাম্মদ মুনীর।
গত বৃহস্পতিবার আরও দুই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের মধ্যে একজন হলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় মারা যান তিনি। অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ রামেকের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদিন মারা যাওয়া আরেকজন হলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মো. শওকত আলী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।