পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনায় লকডাউনের মাঝেও দিন-রাত সার্বক্ষণিক সচল কর্মব্যস্ত চট্টগ্রাম বন্দর। দেশি-বিদেশি জাহাজের নাবিক, বন্দর ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে আন্তর্জাতিক মানসম্মত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে সারি সারি জাহাজের আমদানি পণ্যসামগ্রী খালাস কাজ চলছে। বেশিরভাগই রমজান মাসের খাদ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল। পোর্ট-শিপিং সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন রোজার পণ্য খালাস সম্পন্ন অথবা খালাসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, খেজুর, আদা-রসুন, মসলা ছাড়াও হিমায়িত কন্টেইনারে (রীফার) আনীত আপেল, কমলা, মাল্টা, কিসমিসসহ তাজা ফল-মূল। অধিকাংশ রোজার খাদ্যপণ্য চাহিদার চেয়ে গড়ে ৫০ ভাগ অতিরিক্ত আমদানি হয়েছে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি-বার্থ, রিভার মুরিং, বিশেষায়িত জেটি ১৪টি জাহাজে এবং বহির্নোঙরে অবস্থানরত ৭৬টিসহ ৯০টি জাহাজের মধ্যে ৬৫টিতে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্য ওঠানামা চলে। সিডিউল অনুযায়ী ভিড়বে আরও জাহাজবহর।
একের পর এক জাহাজে রোজার নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল খালাস অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টম হাউস ও বন্দর-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের পণ্য ছাড়করণ, খালাস ও ডেলিভারি-বান্ধব সবধরনের প্রস্তুতি, সহযোগিতা সত্বেও লকডাউন পরিস্থিতির কারণে বন্দর থেকে সড়ক-মহাসড়ক পথে কমছেই ডেলিভারি পরিবহন। পণ্য পরিবহনে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও অন্যান্য যানবাহনের ঘাটতি প্রকট। অপ্রতুল পরিবহন যাও চলছে তাতে ভাড়া দেড়-দুই গুণ বেশি আদায় করা হচ্ছে। আসছে ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হলে পরিবহন সঙ্কট আরও তীব্র হবে। এ অবস্থায় দেশের সকল প্রান্তে মালামাল পৌঁছানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারক, কনসাইনি, ইন্ডেন্টার, ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে রোজার নিত্যপণ্যের গোডাউনে পরিণত হওয়ার পথে ধাবিত হচ্ছে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম বন্দর। গতবছরও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অবশ্য এখন পর্যন্ত বন্দরে কন্টেইনার জট নেই।
এ প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও পোর্ট ইউজার্স ফোরামের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম গতকাল ইনকিলাবকে জানান, রোজার চাহিদা অনুপাতে আমদানি খালাস স্বাভাবিক রয়েছে। কোন পণ্যের সঙ্কট হবে না। তবে লকডাউনে ব্যবসায়ীরা আমদানি মালামাল নিয়ে যাবেন কোথায় কীভাবে? বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দরের খালাসকৃত পণ্য পরিবহনে সরকারের সমন্বয়ে দ্রæত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় পর্যাপ্ত আমদানি সত্বেও ভোক্তাদের কাছে সময়মতো রোজার পণ্য পৌঁছাবে না। অহেতুক কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হতে পারে। গতবছরের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে চেম্বার নেতা বৃহত্তর স্বার্থে বন্দরের বাড়তি স্টোর পেনাল রেন্ট (মজুদ-ভাড়া, দন্ড-মাশুল) মওকুফ রাখার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সার্বক্ষণিক বন্দর কার্যক্রম সচল আছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথানিয়মে কাজ করে যাচ্ছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে। পণ্য খালাসের পাশাপাশি ডেলিভারি প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীরাও সাড়া দিচ্ছেন। রোজার পণ্য আমদানি বৃদ্ধির সাথে জাহাজের আগমনও বেড়েছে।
তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণ অনুসরণ করেই যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বন্দরে প্রবেশকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য হলেই জরিমানা করা হয়। বিদেশি ও দেশি জাহাজের নাবিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিবিড় তদারক করছে।
বন্দর-শিপিং সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ২৬০ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ৪৪২ টিইইউএস কন্টেইনার। আগের দিনে ডেলিভারি হয় ৪ হাজার ৪৩৫ টিইইউএস কন্টেইনার। বর্তমানে জট নেই। ৪৯ হাজার ১৮ কন্টেইনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে এখন মজুদ স্থিতি রয়েছে ৩৭ হাজার ৬৯৭ টিইইউএস কন্টেইনার।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্ঘনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নাছির উদ্দীন ইনকিলাবকে জানান, লকডাউনের মধ্যেও বর্তমানে অনলাইনে অনুমতি, ছাড়পত্র ও সনদ ইস্যু কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এবং স্বাভাবিক কাজ চলছে। এরফলে আমদানিকারক-ব্যবসায়ীদের জন্য সেবা সহজতর হয়েছে। পঁচনশীল খাদ্যপণ্য ছাড়করণ দ্রæতায়িত হচ্ছে।
গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত রোজা উপলক্ষে আনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিত্য ও খাদ্যপণ্য ছাড়পত্র ইস্যুর হিসাব তুলে ধরে তিনি জানান, ওই সময়ে ৯ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন আমদানিকৃত খেজুরের জন্য ১১৩টি ছাড়পত্র, ২ হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন ছোলার ৯টি ছাড়পত্র, ৪ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন আপেলের ১১৯টি ছাড়পত্র, ৬ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন কমলা ও মাল্টা আমদানির বিপরীতে ১৫২টি ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় সংখ্যা ও পরিমাণগত হিসাবে বেশি। তাছাড়া আদা-রসুন, কিসমিস, মসলা প্রভৃতির ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
গতবছরের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণে রোজায় অধিক চাহিদার খাদ্যপণ্য খেজুর আমদানি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৯ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়। চলতি অর্থবছর ২০২০-২১ সালের গেল মার্চ মাস পর্যন্তই খেজুর আমদানি ও খালাস হয়েছে ৭৩ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে আমদানিকারক, ইন্ডেন্টার, ব্যবসায়ীমহলে এ মুহূর্তের বড় টেনশন চলমান লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে রোজার নিত্যপণ্য দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে অনায়াসে পৌঁছাবে। কী উপায়ে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি পরিবহন করা যাবে কারখানাসমূহের দুয়ারে। সাপ্লাই চেইন রাখা যাবে দ্রুত নির্বিঘ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।