পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি। সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর দৈনিক সংখ্যা বাড়ছে টানা ছয় সপ্তাহ ধরে। বাড়ছে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হারও। মার্কিন এক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার ফলাফল বলছে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে পরিস্থিতি। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ পরিস্থিতি চূড়ায় উঠতে সময় নিতে পারে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হারের বর্তমান প্রবণতার ভিত্তিতে সিয়াটলভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এ প্রক্ষেপণ দিয়েছে।
দেশে স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টদের মারাত্মক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা সংক্রমণের বর্তমান গতিপ্রকৃতি। প্রতিদিনই সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যার কোনো না কোনোটিতে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। আইএইচএমইর প্রক্ষেপণেও বলা হয়েছে, কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হলে মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দেড় লাখে উঠে যাওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। সেক্ষেত্রে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়াবে ৮০০-তে।
দেশের জনস্বাস্থ্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএইচএমইর এ প্রক্ষেপণে অতিরঞ্জন থাকলেও তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাদের ভাষ্যমতে, এখনই কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে চলে যাওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়। আশার কথা হলো, সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সেজন্য যথাযথ ও সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
সরকার গঠিত করোনা প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরিমর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামও মনে করছেন, আইএইচএমইর প্রক্ষেপণ যে একদম ভুল, তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওদের ধারণা ঠিকই রয়েছে। আমরা যদি এখনই কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারি তাহলে এমনটি হওয়া অবাস্তব নয়। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা ও যন্ত্রাংশের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। আজকে লকডাউন আর কালকে সীমিত-এমনটি করলে কোনো লাভ হবে না।
আইএইচএমই মনে করছে, মে মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণ চূড়ায় ওঠার পর দেশের হাসপাতালগুলোয় শুধু করোনা রোগীর জন্যই সাধারণ শয্যার প্রয়োজন পড়বে ৭৪ হাজার। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যার প্রয়োজন হবে সাত হাজারের মতো। ভেন্টিলেটরের দরকার হবে ১৭ হাজারের কাছাকাছি। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার। এসব চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৬০০। এছাড়া সারা দেশে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৩টি, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ১ হাজার ২২টি ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৮৯৭টি।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন ও টিকা গ্রহণকেই অপরিহার্য সমাধান হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও টিকা নেয়ার বিকল্প নেই। আমরা যদি ৭০-৮০ শতাংশ মানুষও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে নিশ্চিতভাবে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ সামাল দিতে পারব। টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে। দেশে বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটিই সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বর্তমানে সংক্রমিতদের ৮০ শতাংশই এতে আক্রান্ত। ভয়াবহ এ ধরনে সংক্রমণের সম্ভাবনা ৭০-১০০ শতাংশ। তবে আশার কথা হলো, পশ্চিমা কোনো সংস্থার প্রক্ষেপণ এ পর্যন্ত বাস্তবে দেখা যায়নি। এর কারণ হলো, ধারণা আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে। ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিটি দেশের জীবন ব্যবস্থা ও পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করা। আমাদের সমস্যা আমাদের মতো করে সমাধান করতে পারলে আমরা উচ্চসংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যত দ্রুত সম্ভব সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলার উপযোগী করে তুলতে হবে। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আইএইচএমই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়েই এমন প্রক্ষেপণ করেছে। এসব সংস্থা বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য করে, যাতে সেসব দেশ সাবধান হয়। বেশ কয়েকটি বিষয়ের সরলরৈখিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এমন প্রক্ষেপণ করা হয়। তবে পরিস্থিতি কিন্তু এমন থাকে না। সংশ্লিষ্ট মহল সাবধানতা অবলম্বন করে ব্যবস্থা নিলে অবস্থার উন্নতি হয়।
আইইডিসিআরের বর্তমান প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীরও বলছেন, এর আগেও এমন অনেক প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, অনেকগুলো শর্ত বিবেচনা করে এমন প্রক্ষেপণ করা হয়। এটা করা হয় সাবধানতার জন্য। আপনি যদি সেবা না বাড়ান ও যথাযথ ব্যবস্থা না নেন তাহলে এমনটি হতে পারে। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বসে থাকে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এসব মডেল করা হয় গাণিতিক বা জ্যামিতিক হারে। এমন প্রক্ষেপণের যে খুব বেশি বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন আছে এমন নয়। এক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে এমনটি হতে পারে বলে এসব পরিসংখ্যান দেয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিয়ে বসে থাকে না। মানুষ যদি সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে এমনটি হবে না। আর সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।