বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
আল ফাতাহ মামুন
আর কদিন পরই আমাদের মাঝে হাজির হবে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এদিনের মূল কার্যক্রম হলো পশু কোরবানি করা। বনের পশুর সঙ্গের মনের পশুত্বকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রতীকী পশু কোরবানির বিধান দিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে পশুর হাট। এসব হাট থেকে পশু কেনার সময় দেখেশুনে ভালো ও সুস্থ পশু ক্রয় করতে হবে। কোরবানির জন্য দেখতে সুন্দর ও সুঠাম পশু নির্বাচনের নির্দেশ রয়েছে রাসূল (সা.)-এর মুখ নিঃসৃত বাণী পবিত্র হাদিসেও।
অনেকে মনে করেন, মোটাতাজা পশু মানেই ভালো ও সুস্থ পশু; এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশুকেই কৃত্রিম ওষুধ প্রয়োগ করে মোটাতাজা করা হয়। বিভিন্ন খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির বিশ-ত্রিশ দিন আগে থেকেই গরুকে মোটাতাজা করার জন্য স্টেরয়েড ও ডাইক্লোফেন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব মেডিসিন প্রয়োগের অল্প দিনের মাথায় গরু সুঠাম দেহের অধিকারী হয়ে ওঠে। ফলে ওই গরু সাধারণ (ওষুধ প্রয়োগহীন) গরুর চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। ‘স্টেরয়েড ও ডাইক্লোফেন’ মেডিসিন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মত হলো, এ দুটি মেডিসিনই মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মেদ, অন্ধত্ব, পেশির দুর্বলতা, হাড় ক্ষয়, চুল পড়াসহ নানান জটিল সমস্যা দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয় এই স্টেরয়েড হরমোন। আর ডাইক্লোফিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্টেরয়েডের চেয়েও ভয়ংকর। আগে পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেন ব্যবহার করা হতো। এ মেডিসিন প্রয়োগকৃত গরু মারা যাওয়ার পর ওই গরুর মাংস খেয়েছে, এমন শকুন দুই থেকে তিন দিনের মাথায়ই মারা যেত। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনা মেডিসিনের গবেষক ড. লিন্ডসে ওঁক-এর গবেষণায় চাঞ্চল্যকর এই তথ্যটি বেরিয়ে আসে। এর পরপরই বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হতে থাকে জীবন ঘাতক এ ওষুধ। আমাদের দেশেও নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেন। ডাইক্লোফেন দ্বারা মোটাতাজাকৃত পশুর মাংস খেলে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধমনী বিকল হয়ে হৃদরোগ এমনকি ব্রেনস্ট্রোকও হতে পারে। কিডনি ও লিভার বিকলসহ পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও থাকে এ ধরনের পশুর মাংস খেলে।
তাছাড়া, আমাদের দেশের জনমনে ভুল ধারণা রয়েছে, কোরবানির মাংস বেশি খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। এ ভুল ধারণার কারণে কোরবানির ঈদের সময় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বেশি মাংস খেয়ে পেটের পীড়া এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হন। স্টেরয়েড ও ডাইক্লোফেন প্রয়োগকৃত পশুর মাংস খেলে হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তবে কোরবানির পশু বিশেষ করে গরু কেনার সময় ক্রেতারা সতর্ক থাকলে অবশ্য এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা গরুর পাঁজরের হাড় দেখা যায় এবং দুই হাড়ের মধ্যে একটা ঢেউয়ের ভাব থাকে। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংসল স্থানে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে অনেক দেবে যায় যা স্বাভাবিক গরুর ক্ষেত্রে হয় না। কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরুর মধ্যে ঝিমানো ভাব থাকবে, যা স্বাভাবিক গরুর ক্ষেত্রে থাকে না।
অন্যদিকে কৃত্রিমভাবে পশু মোটাতাজা করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। উচ্চ আদালত হরমোন প্রয়োগে পশু মোটাতাজাকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীদের অবৈধ-অসৎ কার্যক্রম। পশুর দেহে ক্ষতিকর হরমোন বন্ধে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল। গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন হাট ও খামারে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অসাধু খামারি ও বিক্রেতাকে গ্রেফতারসহ বড় অংকের জরিমানা করেছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলে এ সংবাদ প্রচার হয়েছে। অনেক হাটেই সুস্থ ও অসুস্থ গরু শনাক্তের জন্য পশু বিশেষজ্ঞ থাকেন। তবে এ ধরনের হাট খুবই কম। ক্রেতারা সচেতন হলে পশু মোটাতাজাকরণে জীবনঘাতক ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ হবে। একটু সচেতন হলেই সুস্থ পশু ক্রয় সম্ভব হবে।
কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটাতাজা করে বিক্রয় করা ধর্মের দৃষ্টিতেও ভয়াবহ অপরাধ। প্রথমত, এটি প্রতারণার শামিল। আর প্রতারণা সবসময়ই হারাম। ব্যবসায় প্রতারণাকারীদের উদ্দেশে রাসূল (সা.) সবচেয়ে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সহি মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ দ্বিতীয়ত, পশুর দেহে ক্ষতিকর হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে ওই পশুর দ্বারা যারা উপকার লাভ করবে তাদের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। এটিও ঘৃণ্য অপরাধ। সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষকেই হত্যা করল।’ সূরা নিসার ৯৩নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত বর্ষিত হতে থাকবে। আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’
লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।