পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লকডাউন। সংক্রমণ ঠেকাতে এ কঠোর বিধি-নিষেধ। এতে চট্টগ্রামের জনজীবনে নানামুখী প্রভাব পড়েছে। ছন্দপতন ঘটেছে জীবনযাত্রায়। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার এ সুযোগে কোথাও কিছুটা স্বস্তি। এ ব্যবস্থা আবার অশেষ জনভোগান্তির কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে। তবে গেল বছরের মতো জনমনে উদ্বেগ-শঙ্কা তেমন প্রকট নয়। ওই বছরের টানা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে এখন যেন জীবন নয়, জীবিকাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাল দিক হলো-মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
লকডাউনের মতো কড়া বিধি-নিষেধের কারণে ফের আর্থিক মন্দার শঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে। চিন্তার ভাঁজ খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের কপালে। বেকার হওয়ার শঙ্কায় অনেকে। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, সেইসাথে মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন পাঁচজন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯৪ জন। করোনার লাগাম টানতে সর্বশেষ সোমবার থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী লকডাউন। সমন্বয়ের অভাবে লকডাউন কর্মজীবী মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে লকডাউনের উদ্দেশ্যই বিঘিœত হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল দ্বিতীয় দিনেও শ্রমিকসহ কর্মজীবীদের রাস্তায় নেমে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গণপরিবহন বন্ধ রেখে কল-কারখানা খোলা রাখায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও চালু আছে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় রাস্তায় নেমে দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয় এসব কর্মজীবীদের। নগরীর অক্সিজেন থেকে পতেঙ্গা, হালিশহর থেকে কালুরঘাট নানা প্রান্তের মানুষ কর্মস্থলে আসা-যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সকাল হতেই মোড়ে মোড়ে অফিসমুখী মানুষের ভিড় জটলা। গণপরিবহন না থাকায় অনেকে রিকশায়, অটোরিকশায় এমনকি হেঁটে কর্মস্থলে ছুটেন। এসব পরিবহনে আদায় করা হচ্ছে গলা কাটা ভাড়া। কারখানার নিজস্ব ও ভাড়া করা বাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এতে বিঘিœত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে-এমন অভিমত ব্যক্ত করে নগর ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইপিজেড, কল-কারখানা খোলা রাখায় এসব এলাকার গণপরিবহনও সচল রাখা দরকার ছিলো। তাহলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
চট্টগ্রাম বন্দর সচল। এর সাথে সচল কাস্টম হাউসসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান। আমদানি-রফতানি পণ্য ও মালামাল পরিবহন খাতও সচল রয়েছে। সীমিত আকারে খেলা ব্যাংক। সচল আছে জরুরি সেবার খাত। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মী ইমতিয়াজ রাব্বি বলেন, প্রতিদিন ডকুমেন্ট নিয়ে মহানগরী এবং মহানগরীর বাইরে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে যেতে হয়। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি। কাজের ক্ষেত্রে আর্থিক খরচ এবং সময় দুটোই বাড়ছে। শ্রমিকরা বলছেন, যাতায়াত খাতে যা ব্যয় হচ্ছে তাতে বেতনের বেশিরভাগ শেষ হয়ে যাবে।
গণপরিবহনের পাশাপাশি সরকার মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে অনেকে এই ঘোষণা মানছে না। পেটের দায়ে বাইক নিয়ে রাস্তায় নামছেন যুবকেরা। আছে পুলিশের মামলা দেওয়ার ভয় তবুও জীবিকার তাগিদে তারা সড়কে। বাইকচালক বাবলু জানান, নিষেধাজ্ঞার পরও রাস্তায় নেমেছি। এছাড়া উপায় নেই। আমার একজনের আয়ে গোটা পরিবার চলে। বসে থাকলে সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে।
সরকারি নির্দেশনা মেনেই নগরীর মার্কেট, বিপণী কেন্দ্র ও শপিং মল বন্ধ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, মার্কেট বন্ধ থাকলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ঈদ সামনে রেখে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। মালামাল কিনেছেন। বেচাকেনা না হলে কর্মচারীদের ছাটাই করতে হবে। গত বছরের যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার শুরুতে এমন বিধিনিষেধে তারা রীতিমত দিশেহারা।
লকডাউন নিশ্চিতে মাঠে আছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের ২০টি টিম মাঠে সক্রিয়। তারা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। লকডাউনের মধ্যেও মাস্ক ছাড়া লোকজনকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। আছে সড়ক মোড়ে পাড়া-মহল্লায় অহেতুক ভিড়, জটলা, আড্ডাবাজি। এমন অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। পাড়ায়-মহল্লায় ভিড়, জটলা বন্ধে পুলিশকে তেমন তৎপর দেখা যায়নি।
তবে লকডাউনের কারণে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে। কারণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে। গণপরিবহন আর পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভিড় জটলাও নেই। এতে সংক্রমণের হার কমে আসবে এমন প্রত্যাশা অনেকের। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. আবদুর রব বলেন, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা গেলে সংক্রমণের হারও কমে আসবে এটা স্বাভাবিক। সরকারের বিধি-নিষেধ কতটুকু কার্যকর হচ্ছে এবং মানুষের ব্যক্তিগত আচরণ কতটুকু পরিবর্তন হচ্ছে তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।