Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাড়া আদায়ে ‘ডাকাতি’

রাজধানীর বাসে শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার ঘোষণা দেয়। এ সময় প্রতি সিটে একজন করে যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে শতকরা ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ২ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ ভাড়া বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে গণপরিবহনগুলোতে ভাড়া আদায়ের নামে ডাকাতির মহোৎসব চলছে।

রাজধানীর কাজলা থেকে গুলিস্তান ও কাজলা থেকে মতিঝিল ভাড়া ছিল ১০ টাকা। শনিরআখড়া থেকে একই ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে কাজলা থেকে গুলিস্তান ভাড়া ২০ টাকা এবং শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একই বাসে চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৬০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হিমালয়, শ্রাবণ নামের গণপরিবহনে এই ভাড়া আদায় করা হয়। এ ছাড়াও এই রুটের ঠিকানা, মেঘলা, রজনীগন্ধা, লাভলি, অনাবিল নামের বাসে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ প্রতিটি বাসেই যাত্রী নিচ্ছেন প্রতিটি সিটেই।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আতাউর রহমান। প্রতিদিন রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান আসেন শ্রাবণ পরিবহনে। তিনি জানালেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে শতকরা ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। অথচ গণপরিবহনগুলো সব সিটে যাত্রী তুলেও দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছেন। গুলিস্তান টু মিরপুর, সায়েদাবাদ টু গাজীপুর, আবদুল্লাহপুর টু সদরঘাট, সারুলিয়া টু গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি টু মিরপুর চিড়িয়াখানা, যাত্রাবাড়ি টু গাবতলী রুটের প্রতিটি বাসে একইভাবে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীদের অভিযোগ করোনার নাম করে ভাড়া বৃদ্ধির নামে বাসের ড্রাইভার কন্টাকটরা যাত্রীদের কাছে জোর করে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছে। এটা দিনে-দুপুরে ডাকাতির নামান্তর।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি গতকাল এক বিবৃতিতে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ডাকাতের মতো টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সংস্থাটি বলছে, বাড়তি ভাড়ার কারণে সংকটাপন্ন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।
গতকাল রোববার সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শনিবার (৩ এপ্রিল) লকডাউনের ঘোষণা আসার পর থেকে দেশে বাস-টার্মিনাল ও বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রী চাপ বাড়তে থাকে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে গণপরিবহন চালানোর সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দূরপাল্লার যাত্রা পথে অধিকাংশ গণপরিবহনে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে যত সিট তত যাত্রী বহন করাই দেশের যাত্রী সাধারণ অস্বাভাবিক ভাড়া ডাকাতির শিকার হচ্ছে।
বলা হয়, সরকার বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করলেও সিটি সার্ভিসের গণপরিবহন মালিকরা সরকারি তালিকার পরিবর্তে তাদের ওয়েবিল নির্ধারিত পূর্বের ভাড়া ওপর ১০০% যোগ করে ভাড়া আদায় করায় এ ভাড়া কোথাও কোথাও সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার ১৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
গতকাল রাজধানীর মনঞ্জিল পরিবহনের বাসে শনির আখড়া থেকে মালিবাগ সাড়ে ৯ কিলোমিটার যাত্রা পথে ২৪ টাকার ভাড়ার স্থলে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় হয়েছে। চট্টগ্রামে মুরাদপুর থেকে সিএন্ডবি রাস্তার মাথায় ৪ কিলোমিটার রাস্তায় মিনিবাসে পূর্বের ৫ টাকা ভাড়ার স্থলে ১৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে। কোনো বাসেই করোনার স্বাস্থ্য বিধি মানতে সিট খালি রাখা হয়নি। কোনো কোনো বাসে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে বহন করতেও দেখা গেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে চন্দনাইশের কলেজ গেইট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার দূরত্বে ৫০ টাকার ভাড়ার যাত্রাপথে গতকাল ১৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী প্রতিটি হিউম্যান হলার, অটোটেম্পু, অটোরিকশায় বিদ্যমান ভাড়ার চেয়ে কোথাও দ্বিগুণ আবার কোথাও তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ স্বাস্থবিধি বা অর্ধেক যাত্রী বহনের সরকারি নির্দেশনার দোহাই দিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও যাত্রী তোলার পর ভাড়া আদায় শেষে মাঝপথে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহনে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, বচসা, হাতাহাতি, মারামারি চলছে। সংকটে পতিত দেশের সাধারণ মানুষের ওপর গণপরিবহনগুলোর এরকম অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জুলুম থেকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
এদিকে গতকাল রাজধানীর গুলশান থেকে মতিঝিল-কমলাপুর রুটের বাসে দেখা গেছে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করতে। স্বাস্থ্যবিধি মানার দোহাই দিয়ে এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসগুলোতে সিট ফাঁকা রাখা হয় না। তবে যাত্রী যেখানে কম সেখানে আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে দেখিয়ে দ্বিগুন ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সোনারগাঁও থেকে মতিঝিল আসা এক যাত্রী তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৫০ টাকার ভাড়া ১১০ টাকা দিয়ে এসেছেন। অন্য যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে বিতর্ক করলে পথে গণপরিবহনের মালিকদের ‘গুন্ডা বাহিনী’ দিয়ে যাত্রীদের শায়েস্তা করা হয়। একই অভিযোগ করেছেন যাত্রবাড়ি থেকে মিরপুর রুটের যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ দ্বিগুন ভাড়া গণপরিবহনে নেয়া হচ্ছে; অথচ সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। বেশিরভাগ সিটে দু’জন করে যাত্রী বসানো হচ্ছে; আর দু’টারটি সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে। করোনার নামে গত কয়েকদিন ধরে গণপরিবহনে ভাড়া আদায়ের নামে ডাকাতি চলছে। জানতে চাইলে ঠিকানা পরিবহনের ড্রাইভার ইদ্রিস বলেন, সরকার বেঁধে দেয়া ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সব সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে আমাদের করার কিছু নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ