Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

বাস লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে উপচে পড়া ভিড়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

গণমাধ্যমে লকডাউনের খবর প্রকাশের পর ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। ভিড় বেড়েছে বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে। গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকেই ছুটছে মানুষ। বিকালে সবখানেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় আগামীকাল সোমবার থেকে সারাদেশ এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন করতে যাচ্ছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণার পর রাজধানীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। এদিকে, যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট করেছিলেন তারা টিকিট ফেরত দেয়ার জন্য কমলাপুরে কাউন্টারে ভিড় করেন।

যাত্রীরা জানান, আগামী সোমবার থেকে লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তাই এখন বাড়ি না গেলে রাজধানীতে আটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগেভাগে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। গতকাল বিকালে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসছেন যাত্রীরা। এদের বেশিরভাগই কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কিশোরগঞ্জ ও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী। নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটে নিজ গন্তব্যে বাসে উঠছেন তারা। এর মধ্যে এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে বেশি ভিড় দেখা যায়।

যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডের একটি মেসে থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিহাব উদ্দিন। লকডাউন ঘোষণার পরপরই ব্যাগ গুছিয়ে তিনি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে চলে আসেন। যাবেন ফেনীর ছাগলনাইয়্যা। আলাপকালে তিনি বলেন, তিনি দুটি টিউশনি করে ঢাকা শহরে নিজের খরচ চালান। কিন্তু লকডাউনে সেই টিউশনিতে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই আগেভাগে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।

খিলগাঁও তালতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন জামালপুরের মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী সোমবার তার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সবাইকে নিয়ে বাড়ি রওনা হয়েছেন। আজ যেতে না পারলে রোববার অনেক ভিড় হবে। মহাখালী বাস টার্মিনালে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে এনা পরিবহন। এই পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রি করেন সাহেদ আলী। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে কয়েক দিন ধরে বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। এতে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। শনিবার লকডাউন ঘোষণার পর তুলনামূলকভাবে যাত্রীও বেশি আসা শুরু করেছে। আজ রোববার ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

গাবতলী বাস টার্মিনালের একাধিক পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, টিকিট কাউন্টারগুলো যাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলেন, গতকাল দুপুরে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা আসার পর থেকে নগরীর প্রতিটি বাস কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। কোনও কোনও কাউন্টারে দেখা গেছে উপচে-পড়া ভিড়। গাবতলী কাউন্টারে মানুষের ভিড় শামাল দিতে পারছেন না কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা। এই টার্মিনালের পুর্বাশা পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা নাইমুল ইসলাম বলেন, গাবতলীর প্রতিটি কাউন্টারে প্রচন্ড ভিড়। মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের কাউন্টারেও দীর্ঘ লাইন। সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, লকডাউনের ঘোষণা আসার পরপরই মানুষ টিকিটের জন্য ফোন করতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই কাউন্টারে এসে ভিড় করতে থাকে। অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কারণে আসন দিতে হিমশিম খাচ্ছি। একই অবস্থা সায়দাবাদ টার্মিনালেও। হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা ইকবাল উদ্দিন বলেন, আমাদের কাউন্টারে কোনও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয় না। এরপরও অন্যদিনের চেয়ে এখন যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। বাস আসার আগেই সব আসন বিক্রি হয়ে যায়। যেখানে অন্য সময় কিছু আসন ফাঁকাও যেতো। জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা বলেন, লকডাউনের কথা শুনে অনেকেই বাড়ি যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। যে কারণে অন্য সময়ের চেয়ে কাউন্টারে ভিড় ভাড়ার খবর শুনতে পাচ্ছি।

এদিকে, লকডাউনের খবরে কমলাপুর রেল স্টেশনেও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। বিকালে কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিটি ট্রেনে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। একটি আসন খালি রেখে ট্রেন চলাচল করার কথা থাকলেও আগেই অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করায় গতকালও তা মানা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন স্টেশনের কর্মকর্তারা। গণমাধ্যমে লকডাউনের খবর প্রকাশের পর রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যারা অগ্রিম টিকিট কাটতে এসেছিলেন স্টেশনেই অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েন। অগ্রিম টিকিট কাটতে আসা কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রী রবিউল ইসলাম জানান, সোমবারের অগ্রিম টিকিট কাটতে এসেছি। কমলাপুর এসেই লকডাউনের খবর শুনলাম। এখন আজই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিল্ক সিটির যাত্রী আব্দুল কাদের জানান, সোমবারের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম। তবে লকডাউনের সংবাদ শুনে দ্রæতই স্টেশনে চলে এসেছি। এই টিকিট দিয়ে আজই চলে যেতে চাই। তবে ৫ এপ্রিলের টিকিট দিয়ে আজ না যেতে পারলে সড়ক পথেই চলে যাব। পঞ্চগড়ের বাসিন্দা মেহেদী হাসান লকডাউনের খবরে কমলাপুরে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, আমার অসুস্থ ভাইকে নিয়ে গত তিন দিন আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এসেছি। ৫ তারিখে আমার ভাইকে নিয়ে পঞ্চগড় ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু লকডাউনের সংবাদ শুনে স্টেশনে এসেছি দুটি টিকিটের খোঁজে। তবে কাউন্টার থেকে আজকের কোন টিকিট নেই বলে জানাল। এখন অসুস্থ ভাইকে নিয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরব? বাসেও যাওয়া সম্ভব নয়। উপক‚ল এক্সপ্রেসের যাত্রী তারেক জানান, ৫ এপ্রিলের টিকিট নিয়ে শঙ্কায় আছি। লকডাউনের জন্য বাসা থেকে বের হতে পারব কি না তাও জানি না। তাই টিকিট ফেরত দিতে এসেছি। এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, লকডাউনের সংবাদ শুনে অনেক যাত্রী আমাকে ফোন করেছে। আবার অনেকেই স্টেশনে ছুটে এসেছেন। আমি কোনো সমাধান দিতে পারছি না।

একই অবস্থা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও। বিকালের পর হাজার হাজার যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় সদরঘাট। লঞ্চ মালিক সমিতির এক নেতা জানান, যাত্রীদের চাপে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও আগেও লঞ্চগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় নি। মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীদের চাপ সামলাতে সারারাতই লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ