পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তানজিম তারবিয়াত নিতু বগুড়ার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। গত বছর করোনার প্রকোপ শুরুর পর কলেজ বন্ধ হলে অবসর সময় কিছু একটা করার চিন্তা মাথায় প্রবেশ করে। বাবা-মার সহযোগিতা নিয়ে বাড়িতেই গড়ে তুললেন ছোট্ট একটা ফল ও ফুলের নার্সারি। শুরু হল অনলাইনে বেচাকেনা।
প্রথম দিকে দিনে বিক্রি হত ১০ থেকে ১২টি চারা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০টি চারা। নিতুর বাবা আরিফুজ্জামান। বগুড়া শহরতলীর মাটিডালি এলাকায় বাসা। ব্যবসায়ী বাবার কথায়, গত বছর জুনে শুরু করে এ পর্যন্ত ফল, ফুল, অর্কিড, ও ওষুধি গাছ মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে চার লাখ টাকার। বিক্রির অর্ধেকেরও বেশি লাভ হয়েছে। প্রাথমিক সাফল্যে আরিফুজ্জামান মেয়েকে একটি শোরুম বানিয়ে দিয়েছেন যাতে অনলাইন অফলাইনে কেনাবেচা করা যায়।
নিতু বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ (কমার্স) শ্রেণীর ছাত্রী। তার একমাত্র ভাই রওশন আলী নবম শ্রেণীর ছাত্র। ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে নিতু ছোট বেলা থেকেই স্বাধীনচেতা। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পরও ভাবতে পারেননি যে শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন।
গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত নিতুও ঘরবন্দি হয়ে যায়। ঘরে বসে লেখাপড়া করার পরও তার প্রচুর সময় থাকতো। নিতু জানায়, অবসর সময় নষ্ট না করে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই নার্সারি ব্যবসায় হাত দেন। ছিল না কোনো প্রশিক্ষণ। তার সামনে শুধু বাসায় ব্যক্তিগত বাগান করার অভিজ্ঞতা ছিল।
বাগানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রথম দিকে শুধুমাত্র ফুলের চারা বিক্রি শুরু করেন। অনলাইনে শুরু করে দেখতে পান তাতে খরচ বেশি আয় কম। ফুলের চারা বিক্রিতে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের প্রায় ৫ বিঘা জমির অর্ধেক অংশে তিনি চারা উৎপাদন শুরু করেন। আর তার নার্সারি ব্যবসার নাম দেন ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারি। ফুলের পাশাপাশি, বিভিন্নজাতের ফল, ওষুধি, ক্যাকটাস, অকির্ড, মসলাজাতীয় চারা উৎপাদন শুরু করেন।
তিন মাস পর নিজের নার্সারি থেকে চারা ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রি শুরু করেন। বিক্রির এক পর্যায়ে তিনি আলাদা একটি দোকান বা কার্যালয়ের অনুভব করেন। এরপর তিনি মাটিডালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি চারা বিক্রির জন্য রীতিমত শোরুম দিয়ে বসেন। শোরুমের নামও দেন ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারি।
ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারির নির্বাহী পরিচালক হয়ে যান দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তানজিম তারবিয়াত নিতু। গত বছরের ডিসেম্বরে নার্সারি ব্যবসার প্রসার ঘটলে বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায় তিনি বাবার সহযেগিতা নিয়ে ১৬ বিঘা জমি ক্রয় করেন। কৃষি জমি কিনে তিনি সেখানে বিভিন্নজাতের ফল-ফুলের চারা করেছেন।
নিতু জানান, শুরুতে এতটা চিন্তা না থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদার কারণে বগুড়া, ঢাকার সাভার, যশোরের ফুলগ্রাম থেকে কিছু কিছু ফুলের জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে চারা করা হয়েছে। করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে পরিবারের সহযোগিতায় নার্সারি ব্যবসাটা শুরু করেন। নিজের গড়া নার্সারিতে এখন রয়েছে অর্ধশতাধিক জাতের ফুলের চারা। এর মধ্যে ২০ প্রকার গোলাপের চারা, ৩০ প্রকার ফলের চারা। রয়েছে বেশ কিছু মসলা, অর্কিড, ক্যকটাস ও ওষুধি চারা।
মান ও চারার বয়স অনুযায়ি তিনি সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় বিক্রি করেন। নার্সারিতে হাজার টাকা মূল্যের চারাও রয়েছে। নিতু তার প্রকল্প ঘুরিয়ে দেখানোর পর বলেন, সব মিলিয়ে এখন প্রায় ৫৫ হাজার চারা রয়েছে। যা প্রতিটি চারা গড়ে ৫০ টাকা করে ধরা হলে আর্থিক হিসাবে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা।
নার্সারি গড়ে সফল শিক্ষার্থী নিতু এখন স্বপ্ন দেখছেন সবুজ বাংলাদেশ গড়ার। এজন্য শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তার সাফল্য প্রমান করে সাহস ও উদ্যোগী মন থাকলে যে কোন পরিস্থিতিতেও মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।