দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : আল্লাহতায়ালার এমন কিছু সৎকর্মপরায়ণশীল বন্ধু বা ওলী আউলিয়া রয়েছেন। যাদের তিনি কিছু দিতে পারলে খুশি হন। আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় মাহবুব ওলী আউলিয়াগণের ইচ্ছা আখাংকা পূরণের জন্য তিনি সব সময় রহমতের পাত্র হাতে নিয়ে বসে থাকেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সূরা আ’রাফ:৬৫)। যেহেতু আল্লাহর রহমত বরকত তাদের নিকবর্তী। তাই তাদের সঙ্গী হওয়া জরুরী। কারণ মিষ্টি যে স্থানে থাকে সেখানেই পিপঁড়েরা জমায়েত হয়। এজন্যে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে সৎকর্মশীল সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সূরা তাওবাহ:১১৯)।
আমাদের ভয় এবং ইবাদত উভয় আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে হতে হবে। আর ওলী আউলিয়াগণ আল্লাহর বন্ধু। তাই তাঁর রহমত ওলী আউলিয়াগণের নিকটবর্তী। দুনিয়াতে ওলী আউলিয়াগণের সঙ্গী হতে পারলে পরকালে নাজাত লাভের আশা করা যাবে। আর যারা ওলী আউলিয়ার সঙ্গী হবে না। তাদের উভয় জাহানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যারা অতীতে সৎকর্মপরাণশীল তথা ওলী আউলিয়ার সঙ্গী হননি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্ত তারা নয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।’ (সূরা আসর:২-৩)।
যারা আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে তারাই ওলী আউলিয়া। তারা হিদায়াত প্রাপ্ত। আল্লাহতায়ালা তাদের সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রভ‚র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তাঁকে ডাকে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না।’ (সূরা কাহাফ:২৮)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,‘যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহবান করে তাদের প্রতিপালকে বলে এখানে বোঝানো হয়েছে আসহাবে সুফফাকে। তাঁরা সর্বহারা ছিলেন। রাসূল (সা.) তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন মসজিদের বারান্দার এক কোণে। তাঁদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সাতশত পর্যন্ত পৌছেছিলো। ওই সকল নি:স্ব সাহাবীগণ সারাক্ষণ জিকির আজকারের মাধ্যমে সময় কাটাতেন। এক ওয়াক্তের নামাজ শেষে প্রতীক্ষা করতেন পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজের। (তাফসীরে মাযহারী:৭/২৫১)। হযরত আবূ মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষের হাশর তার সঙ্গে হবে যাকে সে ভালবাসে। যে যাকে ভালবাসে তাকে তার সঙ্গী, তার অনুগামী হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি হাশর-কিয়ামত-পুলসিরাত জান্নাত বা জাহান্নাম পর্যন্ত সে তারই সঙ্গের সঙ্গী হবে। সুতরাং কেউ যদি ভাল হতে চায়, ভাল ঠিকানা পেতে চায়, আল্লাহপাকের সন্তুুষ্টি অর্জন করতে চায়; সে যেন আল্লাহর পথের পথিকদের, নেকাকারদের, ওলী-আলিম-মুত্তাকীদের সাহচর্য গ্রহণ করে এবং তাদের ভালবাসা অর্জনের চেষ্টা করে।’ (রিয়াদুস সালেহীন: ১/৩৭১)।
হাশরে মাঠে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘এবং তোমরা বিভক্ত হইয়া পড়িবে তিন শ্রেণীতে। ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান তারা। এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগ্য তারা। আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই।তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত। নিয়ামতপূর্ণ উদ্যানে।’ (সূরা ওয়াক্বিয়াহ:৭-১২)। ইসলাম, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্যভাজনতার দিকে ওলী আউলিয়াগণ অগ্রগামী। কারণ তাঁরা আল্লাহর হুকুমের তাবেদারী করেন এবং আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের অনুসরণ করে থাকেন। এজন্যেই আল্লাহর রহমত ওলী আউলিয়াগণের নিকটবর্তী। পরকালীন অনন্ত অসীম জীবনে নাজাত পেতে হলে ওলী আউলিয়াগণের সঙ্গী হওয়া একান্ত আবশ্যক। ওলী আউলিয়াগণকে ভালবাসলে ও অনুসরণ করলে হাশরের মাঠে অগ্রবর্তীদের দলে থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা তৌফিক দান করুক। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ। ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।