বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নওগাঁর কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে সূর্যমুখীর চাষ। উত্তরাঞ্চলের শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। তাই দিনভর সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। কেউ ছবি তুলছে, কেউবা আবার পরিবার পরিজন নিয়ে বাগানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলার মোট ২৫০০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৩৫০ বিঘা, রাণীনগর উপজেলায় ৩০০ বিঘা, আত্রাই উপজেলায় ৩০০ বিঘা ও মান্দা উপজেলায় ৩৫০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি রবি মৌসুমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে এই অধিক লাভজনক সূর্যমুখী ফুল চাষ করা হচ্ছে। আগামীতে এই ফসলের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদি কৃষি বিভাগ।
সূর্যমুখী ফুলের মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চোখে পড়ার মতো। তবে বিশেষ করে আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের গোন্ডগোহালি অঞ্চলে এই দৃশ্য চোখকে কেড়ে নিচ্ছে। মাঠে বিশাল এলাকাজুড়ে রোপন করা হয়েছে কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। বর্তমানে বীজ থেকে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে। যা দেখতে দুর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগানে নানা বয়সী মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ ক্ষেতটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের একমাত্র দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হাজারো মানুষের ভিড়ে ক্ষেতটি রক্ষনাবেক্ষন করতে গিয়ে হিমশীম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও সৌন্দর্যপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে কৃষকেরা আগতদের তেমন কিছুই বলছেন না।
আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর চর এলাকায় বেলে ও দোঁআশ মাটিতে সেচের পানি এবং সার ব্যবহার করে একসময়ের পরিত্যক্ত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছেন। তেমনি মাঠজুড়ে প্রসার হচ্ছে এ আবাদ। এতে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি পরিত্যাক্ত জমি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন গরীব চাষীরা। বর্তমানে এই উপজেলার আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে ৫০-৬০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের কোড়া বড় হয়ে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। সূর্যমুখী ফুল চাষীরা এ ফুলের বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চান। তারা মনে করেন দেশে গড়ে উঠুক সূর্যমুখী বীজের তৈল উৎপাদনের কারখানা।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে নতুন এই সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে আগ্রহী করে তুলছেন। আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর তীর ঘেঁসে মদনডাঙ্গা, তারানগর, হরপুর, বাউল্যাসহ বিভিন্ন এলাকার চর এবং জমিতে এখন হলুদের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের গাছ। হাতছানি দিচ্ছে অবহেলিত এ উপজেলার কৃষকদের স্বপ্ন।
জেলার রাণীনগর উপজেলার কৃষক আলম, কামরুল হাসানসহ অনেকেই বলেন, এই অঞ্চলের কিছু মানুষ এমনিতেই কিছু জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতো। কিন্তু কয়েক বছর যাবত সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদাও বেড়ে গেছে। তাই এই অঞ্চলের মানুষ এখন বাণিজ্যিক ভাবে এই লাভজনক আবাদের চাষ শুরু করেছেন। আমাদের দেখাদেখি অনেকেই সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। আশা করছি বিগত সময়ের তুলনায় চলতি বছর সূর্যমুখীর ফলন অনেক ভালো হবে।
জেলার আত্রাই উপজেলার কৃষক শামছুর, ফারাজ আলী, লবীরসহ অনেকেই এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। গাছ মোটামুটি ভালো হয়েছে। এই গাছগুলোতে কুঁড়ি এসে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। তাদের আশা আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ও কোনো রকম রোগ-বালাই না হলে এবার সূর্যমুখী ফুলের বীজের বেশি ফলন হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন সূর্যমুখী বীজ একটি লাভজনক শস্য। তাছাড়া সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যসম্মত। এই তেলে অন্যান্য তেলের চেয়ে পুষ্টিগুন অনেক বেশি। দিন দিন সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। তাই বাজারে সূর্যমুখী বীজের অনেক চাহিদা থাকায় কৃষকরা সহজেই কম পরিশ্রমে ও কম খরচে সূর্যমুখীর চাষ করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন। তাই সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ জনপ্রিয় করার লক্ষ্য কৃষি বিভাগ কাজ করে আসছে। চাষীদের প্রশিক্ষণ, বীজ সরবরাহ করাসহ নানা পরামর্শ দিয়ে আসছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে চলতি বছর জেলায় সূর্যমুখী ফুলের বীজের ভালো ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।