Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হুমকির মুখে বরগুনায় নৌযোগাযোগ

নাব্যতা সঙ্কটে উপকূলীয় জেলা

জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, বরগুনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

সাগর উপক‚লীয় জেলা বরগুনার বুক দিয়ে বহমান খাকদোন, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক ডুবোচরের কারণে তিনটি নদীতে যাত্রীবাহী দোতলা লঞ্চ, কার্গো, মাছধরা ট্রলার ও সমুদ্রগামী জাহাজ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। জেগে ওঠা চরে স্থানীয় শিশু-কিশোররা বানিয়েছে ফুটবল-ক্রিকেট খেলার মাঠ। নব্যতা সঙ্কট কাটানোর জন্য কালেভদ্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করলেও খননকৃত বালু পুনরায় নদীতে ফেলায় পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। ফলে চরম ঝুঁকি ও অতিরিক্ত সময় ব্যয়ে নৌ-যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বাড়ছে বরগুনার সাথে রাজধানীসহ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অসন্তোষ।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা বরগুনা, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলা। বরগুনা ও আমতলীর মধ্যদিয়ে ৩ কিলোমিটার প্রসস্ততা নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে প্রমত্তা পায়রা নদী। এ নদীটি বরগুনা ও আমতলীর সীমানা ভাগ করে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ, লোহালিয়া ও লেবুখালী নদী হয়ে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। অন্যদিকে বরগুনার পশ্চিম সীমান্ত এবং পাথরঘাটার পূর্ব সীমান্তের মাঝখান দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিষখালী নদী। এ নদীটি বরগুনা ও পাথরঘাটার সীমানাকে বিভক্ত করে বামনা, কাঁঠালিয়া, বেতাগী, ঝালকাঠির সুগন্ধা হয়ে পিরোজপুরের বেকুটিয়া ও কচানদীর সংগে মিলেছে। খাকদোন নদ বিষখালী হতে সৃষ্টি হয়ে বরগুনা জেলা শহরকে ভেদ করে পায়রা নদীর সাথে মিলে সংযোগ শাখায় রূপান্তরিত ছিল। অব্যাহত নদী ভরাটে নদীটির পূর্বদিকের ১২ কিলোমিটার সম্পূর্ণই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে আছে। বাকি ৭ কিলোমিটার বরগুনা শহরের লঞ্চ প্রবেশের কারণে এখনো অস্তিত্ব হারাতে পারেনি। ব্যাপক ভরাট ও পাড় দখলদারিত্বের কারণে এক সময়ের বিখ্যাত খাকদোন নদ এখন মরাখালে পরিনত হয়েছে। নদী পথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চলাচলের জন্য এনদী ৩টির গুরুত্ব অপরিসিম। ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল পরিবহনের জন্য প্রতিদিন এ নদী দিয়ে এ অঞ্চলের অসংখ্য ট্রলার, কার্গো ও লঞ্চ চলাচল করে। বরগুনা, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটায় গড়ে উঠা জেলে পল্লী অসংখ্য মাছধরা ট্রলার প্রতিদিন নদী পাড়ি দিয়ে সাগরে মাছ ধরার জন্য যাতায়াত করে। পায়রা ও বিষখালীর মোহনায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শত শত ডুবো চরের সৃষ্টি হওয়ায় ভাটার সময় নৌচলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে। নিরূপায় হয়ে নদীর মাঝখানে জেলেদের নোঙর করে থাকার কারণে অধিকাংশ সময় নৌদস্যুরা নির্বিঘেœ জেলেদের মাছ-জাল-ট্রলারসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
প্রমত্তা পায়রা ও বিষখালী প্রলয়ঙ্কারী সিডরের পর থেকেই নাব্যতা হারাতে থাকে। সিডরের সময় বঙ্গোপসাগরের তলদেশের বালু ওপরে চলে এসে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার পানি আছড়ে পরে সাগর উপক‚লীয় আমতলী, বরগুনা ও পাথরঘাটার নদ-নদী, খাল-বিল, বিভিন্ন জনপদসহ ফসলি জমিতে। নদীর বুকে জমাট বাঁধে বিশাল বালির স্তÍূপ। এর ওপর ধীরে ধীরে পলি জমে বর্তমানে বিশাল এলাকা জুড়ে ডুবো চরের সৃষ্টি হয়েছে। এ চরের কারণে অনেক জায়গায় নৌচলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমতলীর ফেরিঘাট এলাকায় অসংখ্য ডুবো চরের সৃষ্টি হওয়ায় ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। ভাটার সময় প্রায় ২/৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘুরে ফেরি চলাচল করতে হয়। অনেক সময় চরে আটকে গিয়ে জোয়ারের জন্য ১/২ ঘন্টা অপেক্ষোয় থাকতে হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআইডবিøউটিএ) নদী রক্ষা কমিশন বরগুনার পায়রা, বিশখালী ও খাকদোন নদের নব্যতা সঙ্কট দূর করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে অচিরেই রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সাথে বরগুনাবাসীর স্বল্পখরচের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। যে হারে নদ-নদীতে ডুবোচরের বিস্তার ঘটছে তাতে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ ও কৃষির ওপর-এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে এ নদীগুলো কালের স্রোতে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ