পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনার বিস্তার। চলতি মাসের শুরু থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। নতুন সংক্রমিতদের বেশিরভাগই তরুণ। যাদের অনেকেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। নতুন শনাক্ত রোগীরা শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ জটিল সমস্যায় পড়ছেন। অধিকাংশেরই প্রয়োজন পড়ছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড, কেবিন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। হঠাৎ করে রোগী এবং করোনার ভয়াবহতা বাড়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালগুলো বিপাকে পড়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে। এমনকি সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডেও ভর্তি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী। গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সারা দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে এই চাপ।
এদিকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এ মাসের মাঝামাঝিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশের অন্তত ১০ জন রোগীর মাঝে শনাক্ত হয়েছে। আর এই উচ্চ সংক্রামক যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইনটি এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে বিপদ আরো বাড়বে, যা আগেই বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, এরপরও যথাযথ সতর্কতা নেই। অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, হঠাৎ করে ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের মতে, আগের রূপের চেয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইনটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি মারাত্মক। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি আরো বাড়িয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় এই স্ট্রেইনটি ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি দ্রুত সংক্রমিত করছে। এছাড়া গত কয়েকমাস করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে থাকায় মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। সবাই বেশ গা-ছাড়াভাবে দেখেছেন ভাইরাসটিকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মতে, এসব কারণেই নতুন করে আবার সংক্রমণের হার বাড়ছে।
সূত্র মতে, করোনার সা¤প্রতিক পরিস্থিতিতে কুর্মিটোলায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ১৯২ জন রোগি ভর্তি আছে। রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও একই চিত্র। এছাড়া সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৫০টি আইসিইউ বেড খালি আছে। এরমধ্যে সরকারিতে মাত্র ৫টি বেড খালি আছে। এদিকে প্রতিদিন ভোররাত থেকে করোনা টেস্টের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে লাইনে দাঁড়াচ্ছে কয়েকশ’ মানুষ। তবে তাদের বেশিরভাগই টেস্ট করাতে না পেরে করোনার উপসর্গ নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। অনেকে আবার একাধিক দিনে এসেও টেস্ট করাতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন। দুই দিন ভোর রাতে মুগদা হাসপাতালে গিয়েও টেস্ট করাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে যাত্রাবাড়ীর মিলন খান বলেন, রাত সাড়ে ৩টায় মুগদা হাসপাতালে লাইনে দাঁড়ালেও টেস্ট করাতে পারিনি। হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে, হাসপাতাল থেকে টেস্টের জন্য প্রতিদিন ১৮০ জনের টোকেন দেয়া হয়। যা লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যায় না। দুই দিন গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। এখন টেস্ট করার চিন্তাই বাদ দিয়েছে। বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে তাতে করোনা পরীক্ষার হার বাড়ানো উচিত।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো ৩৯ জন। গত প্রায় সাড়ে তিন মাসের মধ্যে এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এক দিনে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছেন আট হাজার ৮৬৯ জন। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো তিন হাজার ৬৭৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে রেকর্ড ২৪৭২৬ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪৬৬৪ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। টানা পাঁচ দিন ধরে দৈনিক সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৩ মার্চ তিন হাজার ৫৫৪ জনের, ২৪ মার্চ তিন হাজার ৫৬৭ জনের, ২৫ মার্চ তিন হাজার ৫৮৭ জনের ও ২৬ মার্চ তিন হাজার ৭৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জন। গত ১৪-২০ মার্চ তুলনায় ২১-২৭ মার্চ সপ্তাহে নুমনা সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ, শনাক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে কি-না এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন ইনকিলাবকে বলেন, কিছুটাতো ছড়িয়েছেই। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে না বরং মানুষ করোনা নিয়ে খামখেয়ালি আচরণ করছে। যা সংক্রমণ বাড়াতে কাজ করছে। সংক্রমণ কমাতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোরালো পদক্ষেপ- জমায়েত বন্ধ করা, মাস্ক পরতে বাধ্য করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তাই করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ডা. তাহমিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। কারণ এটা খুবই ব্যয়বহুল। দেশে যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন কী পরিমাণে ছড়িয়েছে তা জানার জন্য আরো বেশি জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলার অনীহা এবং ‘টিকা নিলে আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই’ বলে যে প্রচলিত ভুল ধারণা, তার কারণেও ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। প্রফেসর সায়েদুর রহমান বলেন, দেখতে পাচ্ছি, সংক্রমণের হার, হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই জিনোম সিকোয়েন্সিং ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা বুঝতে পারব টিকা কতটা ভালো কাজ করছে।
আচমকা কেন এতটা বাড়ছে সংক্রমণ এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক, গ্লাভস কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো নিয়মগুলি বর্তমানে অনেকটাই ব্র্যাত্য হয়েছে দেশে। আর সে কারণেই আরো দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস।
বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তা চলমান থাকলে কি মৃত্যু আরো বাড়তে পারে? ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী? এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, বর্তমানে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে করোনায় মৃত্যুও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ইউকে ভ্যারিয়েন্টটা আমাদের দেশে এসেছে। বাংলাদেশে যেভাবে ফ্লাইট চলাচল করছে, যে কোনো দেশ থেকে যে কেউই আসতে পারছে, তাদের কোয়ারেন্টিনও যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে না। যে কারণে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলোও আমাদের এখানে আসার তীব্র সম্ভাবনা আছে। ইউকে ভ্যারিয়েন্টে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হয়, এটার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। আমাদের যারা শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে কতজন ইউকে ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন সেটা কিন্তু আমরা জানি না। কিন্তু, অবশ্যই কিছুসংখ্যক হলেও তো ইউকে ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যারা আইসিইউতে আছেন। গত কয়েকদিনের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, সংক্রমণ কী পরিমাণে বাড়ছে। তাদের মধ্যেই তো অনেকের অবস্থা গুরুতর। কাজেই প্রতিদিনই যদি এটা বাড়ে, তাহলে সামনের দিনগুলোতে মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রথমেই সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে, বাংলাদেশে এখন পরিস্থিতিটা মারাত্মক। ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা উচিত। দ্বিতীয়ত, এটা ঘোষণা দেয়ার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে মানুষের কাছে প্রতীয়মান হয়, পরিস্থিতি গুরুতর, সরকার এতে গুরুত্ব দিচ্ছে ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকারের উচিত এখনই একটি জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বসে আপদকালীন পরিকল্পনা তৈরি করা। সেই পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। যেমন- আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সংক্রমণ কমিয়ে আনা; হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা; হাসপাতালে যারা ভর্তি হবে তাদের সিভিয়ারিটি কমিয়ে আনা ও মৃত্যু কমিয়ে আনা। এখন এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে সংক্রামক আইনও ব্যবহার করতে হবে। যাতে সরকারের উদ্যোগ দ্রæত কার্যকর করা যায়।
প্রফেসর বে-নজির আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে এখনো সভা-সমাবেশ হচ্ছে। এগুলো কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। বইমেলা চলছে। সরকার যদি ঠিক এই মুহূর্তে বই মেলাটা বন্ধ করে দিত, তাহলে প্রমাণ পাওয়া যেত, সরকার সিরিয়াস এবং উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। বাজার-ঘাট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যাতে প্রয়োজনের বাইরে সেখানে ভিড় না হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয়ভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আরেকটা বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে এবং সেই কমিটিকে ক্ষমতা দিতে হবে। যাতে তারা যেটা বলবে, সব মন্ত্রণালয়-প্রতিষ্ঠান সেটাই বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হবে। এখন যে জাতীয় পরামর্শক কমিটি আছে, সেটার মধ্যে হতাশা আছে। কমিটি তাদের মতো করে পরামর্শ দিচ্ছে। পরবর্তীতে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, যেটা আসলে কার্যকর হচ্ছে না। আর অবশ্যই কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে হবে। হাসপাতালে করোনা শয্যা ও আইসিইউ ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। সর্বোপরি মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পরিস্থিতিটাকে গুরুতর হিসেবে নিতে হবে। অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা ও তাদের পরিবার বুঝতে পারে, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে, জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাই ভ‚মিকা রাখতে পারবে। ঢিলেঢালাভাবে চলার কোনো সুযোগ নেই।
এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে কতজন যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইনে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন প্রফেসর বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, এই কাজটা আমাদের অবশ্যই করা দরকার। যখন সমস্যা হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে কিন্তু সমস্যাটা আর বাড়ে না। যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি একসময় খারাপ ছিল। এখন তারা রিকভার করছে। এখন তাদেরকে ইউরোপের মডেল বলা হচ্ছে। আমরা কেন তাদের অনুসরণ করছি না? আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে অবশ্যই ইউরোপে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসবে, তারা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করবে। আমাদের এখানে থ্রি-জিন কিট দিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করলে কতজন যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইনে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা বোঝা যাবে। আরো আগে থেকেই থ্রি-জিন আরটি-পিসিআর পরীক্ষা চালু করা দরকার ছিল। এখন যত দ্রুত সম্ভব সেটা চালু করা দরকার।
সংক্রমণ বাড়ায় করণীয় :
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এখন জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এই উদ্যোগগুলো হলো- অপ্রয়োজনীয় সব ধরনের জনসমাগম প্রতিরোধ করতে হবে। যেমন- সভা-সমাবেশ, মিটিং, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ-মাহফিল, বইমেলা-এগুলো বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ আরো বাড়বে। এগুলো করতে প্রয়োজনে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামাতে হবে। একইসঙ্গে কন্টাক্ট ট্রেসিংও করতে হবে। করোনা কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেই সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। যাতে মানুষ এটাকে গুরুতরভাবে নেয়। অন্যথায় মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানবে না। আর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এছাড়াও কিছু দিকে ফোকাস করতে হবে। যেমন- বাংলাদেশে হাসপাতালের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। কারণ, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, ক্যাপাসিটি না বাড়ালে যারা গুরুতরভাবে আক্রান্ত হবে, তাদেরকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। হাই-ফ্লো নেজাল ক্যানোলার সংখ্যা পাঁচ থেকে ১০ গুণ বাড়াতে হবে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আইসিইউ শয্যা বাড়াতে হবে। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও যথাযথভাবে এই কার্যক্রমের আওতায় আনতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো যাদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসবে তাদের যেমন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি যাদের পিসিআরে নেগেটিভ আসবে কিন্তু উপসর্গ আছে, সিটি-স্ক্যান ও এক্স-রেতে মনে হচ্ছে পজিটিভ, তাদেরকেও আলাদাভাবে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে করোনা রোগীর মতোই চিকিৎসা দিতে হবে। সবমিলিয়ে সরকারকে এখনই দ্রæত উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
বরিশাল ব্যুরো জানায় : দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে অনেকটাই উদ্বেগজনক। গত বছর এ সময়ে জনগণের মাঝে যতটা সচেতনতা ছিল এবার সেখানে উদাসীনতাই লক্ষণীয়। গত ৪৮ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ৫৮ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। যার মধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২২ জন। আর গত ৪৮ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৭ জন।
শনিবার এ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১০৬৯ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০৮ জনের। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবনুযায়ী গতকাল সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় সুস্থ হয়েছেন ১০৫৭০ জন। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় এখনো শীর্ষে বরিশাল মহানগরী। বরিশাল জেলায় মোট আক্রান্ত ৫০৮৪ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯০ জনের। গত ৪৮ ঘন্টায় এ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪ জন।
পটুয়াখালীতে গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৭৭০ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৪১ জন। ভোলাতে এ সময়ে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১। এ দ্বীপ জেলায় ১০৫৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ১১ জন। পিরোজপুরেও গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন ৭ জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩৪ জন। মারা গেছেন ২৫ জন। ঝালকাঠিতে এ সময়ে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ৮৭১ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন। আর বরগুনাতে গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন একজনের আক্রান্তের খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে জেলাটিতে এ পর্যন্ত ১০৫৬ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের।
দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে গড় শনাক্তের হার এখন প্রায় ১৪%। সুস্থতার হার প্রায় ৯৬%। আর মৃত্যুহার এখন প্রায় ১.৮৯%। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে এখনো বরিশাল মহানগরী ‘করোনার আতুর ঘর’ হয়ে আছে। এ নগরীতে জনসংখ্যার তুলনায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনেকগুণ বেশি। কিন্তু এরপরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে কোন আগ্রহ লক্ষনীয় নয়। এমনকি নতুন করে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করলেও তা নিয়ে কোন সতর্কতামূলক প্রচারণাও নেই।
বগুড়া ব্যুরো জানায় : বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত শুক্রবার বগুড়ার দুটি সরকারি-বেসরকারি পিসিআর ল্যাবে ১৯৬ টি নমুনা পরীক্ষা শনাক্তের পর ২৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায় ।এতে সংক্রমণের শতকরা হার ১২ শতাংশের সামান্য বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে তা উদ্বেগজনক লক্ষণ। দীর্ঘ বিরতির পর করোনায় আরো ১ জনের মৃত্যু হল বগুড়া সদরে। শুক্রবার মারা যাওয়া এই ব্যক্তির নাম সুকুমার দাশ (৫৬)। বগুড়ায় এখন মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৫৫ জনে।
চট্টগ্রাম : গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩৫৩ জনের শরীরের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদিন নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২ হাজার ৯৫৬টি। তবে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। গতকাল শনিবার সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় ৩৫৩ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে নগরে ২৯৪ জন এবং উপজেলায় ৫৯ জন। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত ৩৯ হাজার ১০৮ জন। সর্বমোট মৃত্যু হয়েছে ৩৮৪ জনের।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা জনসাধারণের। এখনই সচেতন না হলে এ সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।