Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৫ বছরেও রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না জমি

বিপাকে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়াবাসী

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

জমির মালিক হলেও তা বিক্রির রেজিস্ট্রেশন বা হস্তান্তর করতে পারছেন না বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার অধিবাসীরা। গত ৫ বছর ধরে এমন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ভ‚মির মালিকরা। তা ছাড়াও মৌজা মূল্য নির্ধারণের জটিলতা থাকায় খতিয়ান হাতে পেলেও মাঠ রেকর্ডের ঝামেলায় রয়েছে অনেকেই। দৈনন্দিনের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মিটিয়ে দিচ্ছেন ধার দেনা করে। এতে করে দেনার অংক বেড়ে হচ্ছে অনেকের। অর্থনৈতিক সমস্যা হলেও বিক্রি করতে পাচ্ছেন না নিজস্ব জমি। এমতাঅস্থায় চরম বিপাকে রয়েছেন তারা।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহল আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ৭ হাজার ১১০ দশমিক ২ একর ভু-খন্ড তাদের সাথে যুক্ত হয়। তার মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার আয়তন সব চেয়ে বড়। এতে ৬৬৫ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে আবাদি জমি রয়েছে ৫৬৬ হেক্টর। এ সকল জমির ওপর নির্ভরশীল অধীবাসীরা। এখানে যা ফলন হয় তা নিয়ে কৃষকরা দৈনন্দিনের সমস্যা সমাধান করে থাকেন। এতে করে অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে পারেন না অনেকেই। বিক্রি করতে হয় জমি। কিন্তু অনেকের জমির মালিকানা থাকলেও রেকর্ড জটিলতা ও কাগজপত্র না পাওয়ায় তাদের জমির সংক্রান্ত মূল সমস্যাগুলো এখনো কাটছে না সহজেই।
তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি জরুরি টাকার চাহিদা দেখা দিলে জমির ওপর নির্ভর করতে হয় তাদের। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা, চাকরি, বিয়ে, পরিবারের কোন সদস্যের হঠাৎ অসুস্থতা জমি বিক্রি করা ছাড়া অর্থসংস্থানের অন্য কোন উপায় নেই। মৌখিকভাবে পারিবারিক জমিগুলো ভাগ-বন্টণ করে চাষাবাদ করছেন অনেকেই। তাদের মাঝে সমস্যা সৃষ্টি হলে পারছে না জমি বিক্রি করতে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থায় থাকায় বিপাকে রয়েছেন বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া অধিবাসীরা।
দাসিয়ারছড়া খড়িয়াটারী গ্রামের জায়দুল হক ও সমন্বয়টারীর মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, টাকার চাহিদায় জমি বিক্রি করতে পাচ্ছে না। ফলে মানুষকে স্বাক্ষী করে ধার দেনা করে অনেক টাকা নিয়েছি। এখন সে টাকা ফেরত দিতে পাচ্ছেন না। চরম বিপাকে রয়েছি আমরা।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, গত ৫ বছরে সরকার যেভাবে দাসিয়ারছড়ায় উন্নয়ন করেছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু দাসিয়ারছড়াবাসী জমি কেনা-বেচা করা থেকে এখনো বঞ্চিত। খতিয়ান পেয়েছি ঠিকই কিন্তু জমি কেনা-বেচা করতে না পারায় ছেলে-মেয়েদের বিয়ে, পড়াশুনার খরচ, বৃদ্ধ বাবা-মার চিকিৎসাসহ নানান সমস্যায় আছি।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের সহকারী ভ‚মি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. রোকনুজ্জামান তালুকদার জানান, দাসিয়ারছড়ায় অনেকেই জমির খাজনা দিচ্ছেন, কিন্তু জমি রেজিস্ট্রির না হওয়ার কারণে অনেকের খাজনা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফুলবাড়ী উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (চলতি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মাঠ রেকর্ডের পর দাসিয়ারছড়া প্রায় তিন হাজার ৩শ’ খতিয়ান সরবরাহ করা হয়েছে। আর যাদের খতিয়ানের সমস্যা হয়েছে, তারা এক বছরে মধ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানান, দাসিয়ারছড়ার প্রায় মৌজার আরএস খতিয়ান পাওয়া গেছে। এসব মৌজার মূল্য নির্ধারনের জটিলতা থাকায় দাসিয়ারছড়ায় জমি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না। তবে বিষয়টি উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশাকরি শিগগিরই দাসিয়ারছড়াবাসীর জমি ক্রয় বিক্রয়ের সমস্যা সমাধান হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ