Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত সয়াবিন ও সূর্যমুখির আবাদ হলেও ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখছে না

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২১, ৭:১৪ পিএম

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অপ্রচলিত তেলবীজ সয়াবিন ও সূর্যমুখির আবাদ হলেও তা ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে কোন অবদান রাখছে না। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার দেশে সূর্যমুখি ও সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধিও লক্ষে কাজ করলেও এসব তেলবীজ বিপননের সুষ্ঠু কোন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও এসব তেলবীজ বিভিন্ন পোল্ট্রির ফিড মিলের ফড়িয়াগন কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব তেলবীজ মানবিক প্রয়োজনের পরিবর্তে হাঁসÑমুরগির খাবারের উপকরন হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করে ভোজ্য তেল আমদানী হচ্ছে। এমনকি এখনো দেশে জোজ্য তেলের বাৎসারিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টনের ৮০ ভাগই আমদানী নির্ভর।
চলতি বছর দেশে প্রায় পৌনে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে সয়াবিন, সরিষা, চিনাবাদাম, তিল, তিষি ও সূর্যমুখির আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টনেরও বেশী তেল বীজ উৎপাদনের কথা। যা থেকে মাত্র ৫ লাখ টনের মত ভোজ্য তেল উৎপাদনের কথা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যে প্রায় ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে, তা থেকে উৎপাদিত দেড় লক্ষাাধীক টন তেল বীজের পুরোটাই যাবে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। অপরদিকে ১১ হাজার ৬০৩ হেক্টর লক্ষমাত্রার বিপরিতে দেশে চলতি মৌসুমে যে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টরে সূর্যমুখির আবাাদ হয়েছে, তা থেকে উৎপাদিত প্রায় ৩০ হাজাার টন তেল বীজ বিপনন ও মাড়াই-এ তেমন সুবিধা না থাকায় তাও পোল্ট্রি ফিডের কারখানায় চলে যাবার সম্ভবনা রয়েছে।
চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে সয়াবিন সহ বিভিন্ন ধরনের তেল বীজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু সয়াবিনেরই আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৯৫ হেক্টরে। যা থেকে প্রায় পৌনে ২ লাখ টন তেল বীজ উৎদনের সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫ হাজার ৩২৫ হেক্টরে সূর্যমুখির আবাদ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার ১২৬%। কিন্তু এ অঞ্চলে উৎপাদিত সয়াবিন ও সূর্যমুখি তেলবীজ ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কোন ভ’মিকা রাখছে না। বিপনন সহ তেল উৎপাদনের কারিগরি সুবিধার অভাবে বিপুল সম্ভবনাময় সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদেনেও কাঙ্খিত অগ্রগতি হচ্ছে না।
অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% পর্যন্ত তেল থাকে। যেকোন ডাল বা শুটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ বেশী। অথচ দাম কম। অপরদিকে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট তেল ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ তেল বীজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে বিবেচিত। সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে, অথচ এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হেক্টর প্রতি ফলনও ১.৭ থেকে ১.৯ টন পর্যন্ত।
অপরদিকে এখনো দেশে যে পরিমান ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশী সয়াবিন তেলের। যার প্রায় পুরোটাই আমদানী নির্ভর। কারণ দেশে আবাদকৃত প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে যে প্রায় দেড় লাখ টনের মত সয়াবিন তেলবীজ উৎপাদন হচ্ছে, তার পুরোটাই যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়।
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চ ফলনশীল প্রায় ৪০টি জাতের বিভিন্ন তেল বীজ উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে সয়াবিনের ৬টি এবং সূর্যমুখীর দুটি জাত রয়েছে। বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ-পিবি-১’, ‘বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ বা জি-২’, ‘বারি সয়াবিন-৫’ ও ‘বারি সয়াবিন-৬’ নামের একাধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উন্নতজাতের সয়াবিনের ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ টন থেকে সোয়া দুই টন পর্যন্ত। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী।
বারি এ পর্যন্ত ‘কেরানী-ডিএস-১’ ও ‘বারি সূর্যমুখী-২’ নামের দুটি উন্নত জাতের সূর্যমুখী ফুলের জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার তেমন কোন সম্প্রসারন ঘটেনি। কারণ উৎপাদিত সূর্যমূখি তেলবীজ বিপননের তেমন কোন সুযোগ এখনো তৈরী হয়নি দেশে। অথচ সূর্যমুখি তেল চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি অত্যন্ত উপকারী ভোজ্য তেল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ