বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফরিদপুর সদর থানার ঈশানগোপালপুর ইউনিয়নের ডিক্রিরচর বারখাদা গ্রামে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কৃষি জমির মধ্যে চলছে ইটভাটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর ডুবছে ধুলায়। বিগত ৫ বছর যাবৎ অবৈধভাবে মোঃ জাকির হোসেন সিদ্দিকী (জুয়েল) স্বত্বাধিকারী এ.আর.বি ইটভাটা চললেও এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এই ইটভাটার স¦ত্ত্বাধিকারী মোঃ জাকির হোসেন জুয়েল দাবি করছেন ইটভাটা করতে আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র সবই আছে কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে তার পরিবেশের ছাড়পত্রই নেই। এছাড়া এই ইটভাটা সংলগ্ন রয়েছে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে শুধুমাত্র কোমলমতি শিশুরাই লেখাপড়া করে। করোনকালীন পরিস্থিতির মধ্যে স্কুলের পাঠদান বন্ধ থাকলেও নিয়মিত ধুলার স্তুপে বিদ্যালয়ের টেবিল চেয়ার ডুবে আছে। সরকারের দায়িত্ব পালনের স্বার্থে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রতিদিন আসলেও তারা চেয়ার টেবিলে বসতে পারতেছে না, শুধু ধুলার কারনে। উল্লেখিত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেন ইনকিলাবের এই প্রতিবেদক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ আর বি ব্রিকস তিন ফসলি জমির পাশে এবং জনবসতি এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া ইটভাটা সংলগ্ন রয়েছে ডিক্রিরচর বারখাদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি চলছে এই ভাটার জন্য তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। ভাটা থেকে ১/২ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী সদরের খানখানাপুর ইউনিয়নের ডিক্রিরচর চাঁদপুর গ্রামের ফসলির জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কেটে এআরবি ব্রিকসের নিজস্ব কতগুলো ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়া হচ্ছে ভাটায়। এতে যেখানে-সেখানে মাটি পড়ে ধুলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে।
এলাকাবাসীরা জানান, আপনারা বিষয়টি নিয়ে নিউজ করেন। আমরা আর এলাকায় টিকতে পারতেছি না। ধুলো-বালির সাথে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে। আপনারা আমাদের বিছানায় গিয়ে দেখেন, সেখানেও ধুলাবালিতে ভরে গেছে। খাবার খেতেও কষ্ট হচ্ছে, হাড়ি-পাতিলও ধুলাবালিতে ভরে যায়। এই ভাটার মালিক খুব প্রভাবশালী। তিনি ফরিদপুর শহরের টেপাখোলার বাসিন্দা। আমরা প্রতিবাদ করলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও মাস্তানদের ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখায়।
এ সময় ইট ভাটার মালিক মোঃ জাকির হোসেন সিদ্দিক (জুয়েল) মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের কর্কট ভাষায় বলেন, আমার সব কাগজপত্র আছে। আপনাদের সমস্যা কি?
এআরবি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়াপত্র আছে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ.এইচ.এম রাসেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এই ইট ভাটাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ভাটার মালিক মোঃ জাকির হোসেন সিদ্দিকী (জুয়েল) ছাড়পত্রের জন্য গত ২০/১০/২০১৬ তারিখে প্রথমবার আবেদন করেন। তার আবেদনে কাগজপত্র সম্পূর্ণ না থাকায় তাকে দু’বার চিঠিও দিয়েছি। এছাড়া আমরা ইট ভাটাটি কৃষি জমির উপর স্থাপিত কি-না সে বিষয় যাচাইয়ের জন্য সদর উপজেলা কৃষি অফিসারকে গত ২/৪/২০১৮ ইং তারিখে প্রথমবার এবং চিঠির কোনো জবাব না পাওয়ায় গত ৩১/১২/২০১৮ইং তারিখে দ্বিতীয়বার চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু আজ অবধি সদর উপজেলা কৃষি অফিসার চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। কৃষি অফিসার জবাব না দেওয়ায় আমরা ছাড়পত্রের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু এই ইট ভাটাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সেহেতু এটা অবৈধ বলা যায়। আমরা এই ইট ভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ইটভাটার ধুলায় পরিবেশ এবং মানবদেহের কি কি ধরনের ক্ষতি সাধিত হতে পারে এবং কোমলমতি কি কি রোগে ভুগছেন সে বিষয়ে কথা বললেন ফরিদপুরের ডাক্তার আবজাল হোসেন। তিনি ডাক্তারি ভাষায় ধুলায় আক্রান্ত রোগীদের বর্ণনা দিয়ে বলেন, শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে মানব দেহের পাকস্থলিতে প্রতিনিয়ত ৩ মাসের ধুলা জমে থাকলে সেখানে অবশ্যই বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্ট হয় এবং শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-আবাল বনিতা নিয়মিত শ্বাস কষ্টের রোগী হয়ে যান। অতিরিক্ত শ্বাস কষ্টের কারনে রক্ত কাশি, হোপিং কাশি সৃষ্টি হওয়ায় ধীরে ধীরে ঐ রোগী মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম অনুযায়ী জানা যায়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি এবং তিন ফসলির জমি থেকে আশপাশের ১ কিলোমিটারের ভেতর ভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৯৯৫ এর ১২ ধারা অনুযায়ী ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই চলছে এই ইট ভাটাটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।