পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলতি মাসে দেশে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও তিন হাজার ৫৫৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গত সাড়ে আট মাসের মধ্যে এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই এক দিনে চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। সংক্রমণে ২০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে রোগী। আইসিইউতে খালি নেই শয্যা। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে করোনা সংক্রমণ। তাই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি জমায়েত পরিহার করার তাগিদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনার সংক্রমণ নেমে আসে ২ দশমিক দুই ছয় শতাংশে যা ছিল এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর ২৪ দিন পর অর্থাৎ ৯ মার্চ বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে পৌঁছে যায় ৫ দশমিক এক তিন শতাংশে। এর দুদিন পর ৬ শতাংশ পার হয়ে সর্বশেষ গতকাল ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর প্রভাব স্পষ্ট রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোতেও। ফেব্রুয়ারির পর থেকে কোভিড রোগী প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগীই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ আক্রান্তরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শ্বাস কষ্টসহ খারাপ অবস্থায় চলে যাচ্ছে।
আর তাই নতুন করে করোনা সংক্রমণের দেশের চিকিৎসা খাতে সবচেয়ে বড় সংকটের নাম আইসিইউ। খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য থেকেই চোখে পড়ে বিশেষায়িত এ চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার বিষয়টি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর ৬৪ শতাংশে নেই কোনো আইসিইউ সুবিধা। ৩৬ শতাংশ হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য এ সেবা থাকলেও তার সবই বিভাগীয় শহরে। আইসিইউ সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে মোট সরকারি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা ৯৬। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬১টিতেই নেই আইসিইউ। যে ৩৫টি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা আছে, সেখানে শয্যা সংখ্যা মোট ৩২৮।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক বলেন, এক সপ্তাহ বা দশ দিনের কথা বললে আমরা ক্রিটিক্যাল রোগী পেয়েছি। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খারাপ রোগীগুলো আমরা পাচ্ছি। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরও। হাসপাতালগুলোকে নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার আহŸান জানালেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রোগ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে যে ধরনের শিষ্টাচার ছিল; সেটা গত কয়েক মাসে মানুষ ভুলে গিয়ে এক ধরনের উৎসবে মেতেছিল। এর প্রভাবটা এখন দেখতে পাচ্ছি।
এদিকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। টিকা নেয়ার পরেও অনেকে সংক্রমিত হওয়ায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার জোর তাগিদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গতকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫৪৯টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২৬৭ ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪৫টি।
চট্টগ্রাম মহানগরী বাদে চট্টগ্রাম বিভাগে করোনা পজিটিভ রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১১টি সরকারি হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর সবই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বিভাগের ১১ জেলার নয় জেলায় সরকারিভাবে আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। ফলে সেসব জেলার জটিল রোগীর চাপ এসে পড়ে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম শহরের সরকারি হাসপাতালে। এতে তাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের মতো দেশের বাকি সাত বিভাগের অবস্থাও অনেকটা একই রকম।
বিভাগীয় পরিচালকদের (স্বাস্থ্য) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর বিভাগে করোনা রোগীদের জন্য ১৬টি সরকারি হাসপাতাল নির্ধারিত রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের নয়টি হাসপাতালের তিনটিতে আইসিইউ রয়েছে ৪১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি হাসপাতালের একটিতে ১০টি আইসিইউ রয়েছে। সিলেটের ছয়টি হাসপাতালের দুটিতে ২১টি আইসিইউ এবং ঢাকা বিভাগের (মহানগর বাদে) ১৫টি হাসপাতালের আটটিতে ৬০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।
রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে শুরু থেকেই আইসিইউ শয্যা নেই। বাকি আটটি হাসপাতালে ১১৭টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, করোনা রোগীদের জন্য শিগগিরই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় সেখানে আইসিইউ স্থাপন সম্ভব নয়।
বিভাগভিত্তিক হিসাবে আইসিইউ শয্যা সংখ্যায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এ বিভাগের করোনা রোগীরা সাতটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। এর মধ্যে কেবল বরিশাল শহরের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।
বরিশাল বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, এ বিভাগের একটি মাত্র সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তা অপ্রতুল। বিভাগের সব জেলার সংকটাপন্ন রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। ফলে পথেই রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ মুহুর্তে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আছে ৫৪৯টি আইসিইউ শয্যা। গতকাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী দেশের সরকারি হাসপাতালে আইসিইউর শয্যা সংখ্যা ৬৮৮। এছাড়া অক্সিজেনের সিলিন্ডার সংখ্যা ২৪ হাজার ৭১১, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ৭২৭, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৯১৩ ও ভেন্টিলেটর রয়েছে ৬২০টি।
গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর ১০টি সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ১০৩টি আইসিইউর মধ্যে ৯২ টিতেই রোগী ভর্তি ছিল। আর রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালের ১৬৪টি আইসিইউ শয্যায় ভর্তি ছিল ১১৮ জন করোনা রোগী। সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জটিল করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আইসিইউ সংকট প্রকট হচ্ছে। সারা দেশের ৫৪৯টি আইসিইউ শয্যার ৩০৬টিতেই বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে।
করোনা বিষয়ে সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থাপনা ভালো করতে পারেনি। বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে। আইসিইউ রোগীদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হলেও তা এখন মহার্ঘ্যে পরিণত হয়েছে। আইসিইউ সংকটের কারণে মৃত্যুসংখ্যা বাড়তে পারে। জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের কর্মকান্ড দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকার আইসিইউতে রোগীর চাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়লেও প্রান্তিক পর্যায়ে বাড়েনি। ঢাকায় যত রোগী আসে, তার বেশির ভাগই সংকটাপন্ন। এর কারণ হলো, এসব রোগী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে। আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যেখানে আছে, সেখানেই চিকিৎসা করালে ভালো হবে। অযথা ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এর মধ্যে আমরা কিছু আইসিইউ শয্যা বাড়িয়েছি। আইসিইউ স্থাপন সময়সাপেক্ষ বিষয়। করোনা সামলাতে গিয়ে অনেক কাজই আমরা করতে পারছি না। তবে চেষ্টায় কোনো ত্রæটি রাখা হচ্ছে না বলেও জানান এ কর্মকর্তা।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।