বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নে তাছলিমা বেগম নামের এক গৃহবধূকে বাড়ি ছাড়া ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ ওঠেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর এই মামলার কারণে সে বাড়ি ছাড়া।
জানা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের মধ্য কেরামতপুর গ্রামের দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন ওই গৃহবধূ। স্বামী চট্টগ্রামের চাকরি করার সুবাদে তাকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল একই এলাকার কেফায়েত উল্যাহ ও বাহার উদ্দিন। এর সূত্র ধরে গত বছরের ৮ আগস্ট সকাল ১০টায় তার বাড়িতে এসে ঘরে ডুকে কেফায়েত উল্যাহ ও বাহার গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। গৃহবধূর চিৎকারে তার বাবা এগিয়ে আসলে কেফায়েত ছুরির হাতল দিয়ে গৃহবধূর মাথায় আঘাত করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এসময় বাহার ও কেফায়েত তার বাবা সাহাব উদ্দিনকেও মারধর করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে ওই নারী গত ১০ আগস্ট জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় একাধিক তদন্ত হওয়ার পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রæয়ারি পুলিশ কেফায়েত উল্যাকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সে জেলা কারাগারে রয়েছে।
গৃহবধূর অভিযোগ, মামলা করার পর থেকে কেফায়েত ও বাহারের লোকজন মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিতে থাকে।
কিন্তু কেফায়েত গ্রেফতারের পর তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নিরুপায় হয়ে গত দুই মাস আগে এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। ভুক্তভোগীর বাবা সাহাব উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় দোকানপাটে আমাদের কাছে কোন পণ্য বিক্রি করতে নিষেধ করে দিয়েছে তারা। আমাদের বাচ্চাদের মসজিদ, মোক্তবে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি আমাকে গত ১২ মার্চ জুম্মার নামাজ পড়তে গেলে মসজিদ কমিটির লোকজন আমাকে মসজিদে যেতেও নিষেধ করে দেন। কেরামতপুর আহমদিয়া আরাবিয়া মাদরাসা মসজিদের ইমাম বলেন, তাদেরকে সকল ধরণের সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণে নিষেধ করা হয়েছে তবে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়নি। এলাকায় ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। সড়কের পাশে সিমের বীজ বপনকে কেন্দ্র করে তাদের দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এই মহিলা মামলা করে এলাকাকে কলঙ্কিত করেছেন। সমাজের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের একঘরে করা হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোলেমান সওদাগর বলেন, ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে এটা শুনিনি। আমরা শুনেছি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। সেজন্য সামাজিকভাবে তাদের একঘরে করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চরক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। দ্রæত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গৃহবধূর মামলার আইনজীবী মো. সাইফ উদ্দিন কামরুল বলেন, মামলায় বিচার বিভাগীয় দুটি তদন্তে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে আদালত। মামলায় অভিযুক্ত ১ নং আসামি কেফায়েত উল্যাহকে গ্রেফতারের পর থেকেই ভিকটিমের পরিবারের ওপর মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ও চাপ আসতে থাকে। মামলা তুলে না নেয়ায় ভিকটিমের স্বামী সাইফুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই আলা উদ্দিনকে আসামি করে মামলার ২নং আসামি বাহার উদ্দিনের স্ত্রী প্রিয়া বেগম একই আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ধর্ষণের মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তা খারিজ করে দেন। সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনুল হাসান ইভেন জানান, বিষয়টি জানার পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সমাজচ্যুত করাটা কোন আইনগত প্রক্রিয়া নয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।