Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৭ মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত, মৃত্যু আড়াই মাসে সর্বাধিক

দেশে করোনাভাইরাস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। শনাক্তের হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত রোগটিতে নতুন করে ২ হাজার ৮০৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এইদিনে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩০ জনের। যা সংখ্যা গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গতবছরের ২০ আগস্ট এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের ঘটনা ঘটে। ওইদিন নতুন করে ২ হাজার ৮৬৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সর্বশেষ আড়াই মাস আগে এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল গত ৭ জানুয়ারি। সেদিন ৩১ জনের মৃত্যু ঘটে। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে দ্রæত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন শনাক্ত ২ হাজার ৮০৯ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৭ জন হয়েছে। আর এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট ৮ হাজার ৭২০ জন। গতকাল সংক্রমনের হার বেড়ে দাড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতকাল রোববার শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২৯ ভাগ। এ পর্যন্ত মোট শানাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৪ ভাগ এবং মৃত্যুল হার ১ দশমিক ৫২ ভাগ।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে লকডাউন করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। তবে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে। তবে মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার চেয়ে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়লে চিকিৎসা দেয়া কঠিন হবে।
এদিকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সারাদেশের সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার করতে এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ঢাকায় পরিপূর্ণভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড দুই ধরনের রোগীরই চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এখনই দেখা উচিত, সামনে যে ঢেউ আসছে সেটি সামল দেয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে কিনা।

এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্র ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর’র উপদেষ্ঠা ও রোগতত্ত¡বিদ ড. মোশতাক হোসেন বলেন, এবারের করোনা সংক্রমণ আগেরবারের চেয়ে বা প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে কিছুটা আলাদা। দেশে করোনার প্রথম যে ঢেউ শুরু হয়েছিল সেই ঢেউ চ‚ড়ায় উঠতে অনেক সময় লেগেছিল। খুব ধীরে ধীরে সংক্রমনের হার ওপরে ওঠেছিল। অন্যদিকে এবার উঠছে খুব দ্রæত। দুই মার্চ রোগী শানাক্ত হয়েছিল ৫১৫ জন, ১০ মার্চ ১০১৮ জন, ১৭ মার্চ ১৮৬৫ জন এবং মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়ে দাড়িয়েছে ২৮০৯ জন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে কঠোরভাবে কোয়ারেন্টি ও আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। পাশপাশি আক্রান্ত রোগীদের কন্টাক ট্রেসিং নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে বিমানবন্দর ছাড়া কোথাও কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে না। এমনকি তাদের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি জনসাধারনের মধ্যে অনিহা দেখা যাচ্ছে। এসব সঠিকভাবে প্রতিপালন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর গত ৭ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ