পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের মধ্যেই দেশে হঠাৎ করে বেড়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা। তবে গত কয়েক দিনে অনেক ভিআইপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকের মৃত্যু হয়েছে। যারা আমাদের দেশ এবং জাতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। এমনকি ভ্যাকসিন নিয়েও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে গত ১১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেছেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী। গতকালই করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী সিএমএইচে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া আক্রান্তদের কেউ কেউ বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছেন। কেউ বা চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায়। এ তালিকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদল বিএনপির একঝাঁক শীর্ষ নেতাও রয়েছেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে কোভিড আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও তার স্ত্রী মাসকুরা হোসাইন দীনা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপির গাইবান্ধা জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জি-নাইন সদস্য খন্দকার আহাদ আহমেদ ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক ও এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর মিজানুর রহমান করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার দুই সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর একেএম গোলাম রব্বানী। এছাড়া প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার ১ মাস ৩ দিন পর গতকাল করোনায় আক্রান্ত হলেন মেহেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম মুরাদ আলী।
গত ৭ ফেব্রæয়ারি সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরুর পর প্রথম দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. খুরশীদ আলম। দেড় মাসের মাথায় টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার আগেই দু’দিন আগে তার শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বর্তমানে নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। তার শরীরে অন্য কোনো সমস্যা নেই বলে জানা গেছে।
এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল টিকা নেয়ার ১২ দিন পর। ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম টিকা নেয়ার এক মাসের মাথায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা সে সময় বলেছিলেন, যারা টিকা নিচ্ছেন, তাদের একটি অংশও আক্রান্ত হতে পারেন। সেটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে এবং সব ধরনের টিকাতেই তা হতে পারে। এছাড়া টিকার এক ডোজেও পুরোপুরি কাজ হবে না। দুই ডোজ দিতে হবে। দুই ডোজ দেয়ার পরই টিকা কতভাগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে তা বোঝা যাবে। টিকা নেয়া থাকলে আক্রান্ত হলেও সিভিয়ারিটি কমে যাবে। বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে- ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছিল, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে তাদের এই টিকা নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে এবং ৭০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবীকে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পেরেছে।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন নতুন শনাক্ত হয়েছে ১৮৬৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ২৬ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৬৮ জন। আর গতকাল পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৭ জন। ভ্যাকসিন গ্রহণে নিবন্ধন করেছেন ৬১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫২ জন। এদিকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও গত প্রায় এক মাসের মধ্যে টিকার নতুন কোনো চালান না আসায় কমে যাচ্ছে টিকার মজুদও। কবে নাগাদ পরবর্তী চালান আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকা ব্যবস্থাপনা) ডা. শামসুল হক টিকার বাকি চালান কবে আসবে জানতে চাইলে বলেন, এখনো আমার কাছে নিশ্চিত কোনো খবর নেই। দিনক্ষণ ঠিক হলে জানানো হবে।
হঠাৎ করেই সংক্রমণের পাশাপাশি রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় দ্বিগুণ বেড়েছে করোনা রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে করোনা। অ্যান্টিবডি তৈরির পরও সংক্রমিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই বলে মত তাদের। একই সঙ্গে দেশে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বেলায় একেবারেই উদাসীন মানুষ। হাট-বাজার থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। আর তাই করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানার জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে তিনটি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে বলেন, আমরা যেখানেই থাকি না কেন, টিকা দেয়া হোক বা না হোক, তিনটি প্রটোকল আমাদের অনুসরণ করা উচিত। অবশ্যই ফেসমাস্ক পরতে হবে, সর্বাধিক সতর্কতা বজায় রাখা উচিত এবং জনসমাগমের স্থান যেমন- বিনোদনমূলক স্থান বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতির সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, গত কয়েকদিন বিশেষজ্ঞেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই মুহ‚র্তে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা যাবে না, কারণ গত গ্রীষ্মেই সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ হয়েছে। তাই এই মাসগুলোতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে করোনায় ভিআইপিদের আক্রান্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জাপানি বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করেছেন। যার সঙ্গে বাংলাদেশের ভিআইপিদের করোনা আক্রান্তের কারণের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। তাদের মতে, ভিআইপি মানেই প্রতিদিন তার সঙ্গে অনেক লোকের সাক্ষাৎ। সেটি হতে পারে বাইরে, হতে পারে তার চেম্বারে, হতে পারে কোনো ফাইভ স্টার হোটেলে আবার হতে পারে তার নিজ বিলাসবহুল বাসভবনে। আর এ ভিআইপিদের ক্ষেত্রে ইনডোর মিটিং যেখানেই হোক না কেন, বেশিরভাগ স্থানেই এসি লাগানো থাকে, যেখানে বাইরের সঙ্গে ভেন্টিলেশন হয় না বা বাতাসের সরাসরি যাওয়া-আসা করার কোনো সুযোগ থাকে না।
বাংলাদেশের আবহাওয়া গরম হওয়ায় এসিরুমে ভেন্টিলেশন অনেকটাই অসম্ভব। তাই ভিআইপিদের রুমে যদি কখনও কোনো করোনা আক্রান্ত লোক প্রবেশ করে এবং তার কথা বা হাঁচি-কাশি থেকে ১০ হাজার ভাগের ১ ভাগ সাইজের কোনো থুথু বিন্দু বের হয়, তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকলেও সংক্রমিত হওয়ার অনেক বেশি আশঙ্কা থাকে।
কারণ ওই রুমের এসির বাতাসের সঙ্গে থুথু বিন্দু সারা রুমে ঘুরতে থাকবে এবং কোনো এক সময় ভিআইপির শরীরেও লেগে যাবে। সেখান থেকেই হতে পারে করোনার সংক্রমণ।
এক্ষেত্রে দেশের উচ্চ পর্যায়ের ভিআইপিরা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এর প্রতিকার না নিলে পরবর্তী সময়ে আরও হতে পারে। এক্ষেত্রে ভিআইপিদের এ বিষয়ে সতর্ক হয়ে নিজ নিজ রুম কিংবা যানবাহনের ভেন্টিলেশনের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যা বাংলাদেশের ভিআইপিদের করোনা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারে।
পাশাপাশি যারা এসিরুমে থেকে মিটিং, অফিস কিংবা কাজ করেন, যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন লোকের আসা-যাওয়া হয় ওইসব রুমে বেশিরভাগ সময় জানালা খুলে হাওয়া পরিবর্তন (ভেন্টিলেশন) করুন।
বিশেষ করে মিটিং কিংবা বাইরের লোকের আগমন হলে জানালা খুলে দিন এবং মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। এতে করে কথা বা হাঁচি-কাশি থেকে বের হওয়া থুথুর বিন্দুগুলো বাতাসের মাধ্যমে বাইরে চলে যাবে আর একে-অপরকে করোনা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যাবে।
সরেজমিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। অথচ মাঝে একেবারেই কমে এসেছিল রোগী। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ও সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাজ্যের করোনার যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছিল; সেটা যাতে না আসে অনেক পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে করোনার নতুন ধরনে ছয়জন শনাক্ত হয়েছে। এর মানে এক হাজার জনের বেশি ছড়িয়ে পড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।