বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা : শেরপুরে শারীরিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েও প্রতিপক্ষের মামলায় আসামী হয়ে কারাগারে যাওয়ার ৮ দিনের মাথায় মারা গেলেন শেরপুর জেলা শহরের শীতলপুর মহল্লার সবুজ মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। শারীরিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েও প্রতিপক্ষের মামলায় আসামী হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল সবুজ মিয়া (৪৫) নামে ওই ব্যক্তিকে, সেই ঘটনার মাত্র ৮ দিনের মাথায় ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। ওই নির্যাতন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়নের ধাতুয়া গ্রামের আব্দুস ছামাদের ছেলে। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার সকালে শেরপুর শহরের শীতলপুর মহল্লার মৃত শামছুল হকের পুত্র হানিফ মিয়ার বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটসহ হানিফ মিয়ার মা হাজেরা বেগম ও বোন হালি বেগমকে গুরুতর আহত করে প্রতিবেশি মৃত শাহ আলমের পুত্র চায়না মিয়ার লোকজন। ওইদিনই ঘটনার বিষয়ে হানিফ মিয়া বাদী হয়ে চায়না মিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলার জের ধরে ঘটনার ৩ দিন পর ২৮ আগস্ট প্রতিপক্ষের লোকজন হানিফ মিয়ার ভগ্নিপতি ডিপ্লোমা কৃষিবিদ সবুজ মিয়াকে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক ধরে তাদের বসতবাড়িতে নিয়ে বেধরক মারপিটে গুরুতর আহত করে। এক পর্যায়ে নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে প্রতিপক্ষের লোকজন চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো তার বিরুদ্ধেই হামলার অভিযোগ তুলে তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ২৯ আগস্ট প্রতিপক্ষ চায়না মিয়ার স্ত্রী তাহমিনা বেগম বাদী হয়ে হানিফ মিয়া ও তার ভগ্নিপতি সবুজ মিয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া ওই মামলার ঘটনাও দেখানো হয় একই দিনের, অর্থাৎ ২৬ আগস্ট।
এদিকে থানা পুলিশ প্রতিপক্ষের দেওয়া ওই মামলায় ২৯ আগস্ট সবুজ মিয়াকে গ্রেফতার এবং জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন। সেই থেকে কারাগারেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিল। সোমবার সকাল পৌণে ৭টার দিকে কারাগারের ক্যান্টিনে মালামাল কিনতে গিয়ে সবুজ মিয়া হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় সবুজ মিয়ার স্ত্রীর বড় ভাই মঞ্জু মিয়া জানান, আমাদের বসতবাড়িতে হামলার ৩ দিন পর প্রতিপক্ষের লোকজন সবুজ মিয়াকে আটকিয়ে রেখে ব্যাপক নির্যাতন করে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করে। তিনি দাবি করেন, ওইদিনের নির্যাতনের কারণেই তার বোন জামাই মারা গেছেন। তিনি আরও জানান, কারাগারের ভেতরেই সবুজ মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মো. রুকন উদ্দিনও জানিয়েছেন, পক্ষদ্বয়ের মধ্যে দু’টি মামলা রয়েছে। সবুজ মিয়া আহত থাকায় তাকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কারাগারের জেলার ইসমাইল হোসেন জানান, মারপিটের একটি মামলায় গত ২৯ আগস্ট জখম নিয়ে ওই আসামী কারাগারে আসেন। সোমবার সকালে সে জ্ঞান হারালে জেলা হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, হাজতী আসামী সবুজ মিয়ার মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ উঠলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে রিপোর্টে সে ধরনের কিছু আসলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এ নিয়ে গত কয়েক মাসে জেলা কারাগারের ৪ হাজতী আসামীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।