Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজউকের নতুন চেয়ারম্যানের রহস্যজনক ছুটি

প্রতিমন্ত্রী কিছুই জানেন না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর নতুন চেয়ারম্যান পদে সাঈদ হাসান শিকদার যোগদান করেই ২১ দিনে ছুটিতে চলে গেছেন। এনিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমানোচনা। শুরু হয়েছে নানা ধরনের কানাঘুষা। অনুসন্ধানে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।

সাড়ে ১২শ’ প্লট বরাদ্দের জন্য চাপের কাছে নতিস্বীকার না করার কারণেই নতুন চেয়ারম্যানকে চাপের মুখে অনিচ্ছাকৃত ছুটিতে যেতে হয়েছে। এখন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পছন্দের একজন অতিরিক্ত সচিবকে রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত ফাইলটি সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)কের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কি কারণে নতুন চেয়ারম্যান যোগদানের পরে ছুটি নিয়েছেন তা জানা নেই।

এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারে সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
অপরদিকে রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান ড. সাঈদ হাসান শিকদার ইনকিলাবকে বলেন, সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দিবে আমি সেই দায়িত্ব পালন করব। তবে আমি কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করিনি। কি কারণে ২১ দিনের ছুটি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মনিটরিং অনুবিভাগ) মো. হেমায়েত হোসেন, বর্তমান নতুন চেয়ারম্যান ২১ দিনের ছুটিতে গিয়েছেন। সে কারণে আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তিনি রাজউক চেয়ারম্যান পদে আছেন। তিনি অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়েছেন। ছুটি শেষে স্বপদে ফিরবেন। আমি দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করব।

রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, রাজউকে যে সবর ঘটনা ঘটছে তা মন্ত্রণালয় থেকে করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে রাজউক এগিয়ে যেতে পারছে না। এছাড়া বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এক হয়ে এসব কাজ করছেন। তারা চান ভালো কোনো কর্মকর্তা এলেই তাকে বিদায় করার জন্য ব্যবস্থা থাকেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলমের বিদায়ের সময় সাড়ে ১২শ’ প্লট বরাদ্দ দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আদিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাটাগরির এসব প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতে রাজউকের বিভিন্ন সেক্টরের নকশা নিয়ে মামলা চলমান থাকায় সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম প্লট বরাদ্দের বিষয়ে বেশিদূর এগোতে সাহস পাননি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দিয়েছে তাই বাস্তবায়ন করেছেন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান পরিকল্পনা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব (শিল্প ও শক্তি বিভাগ) সাঈদ হাসান শিকদার। নতুন চেয়ারম্যান পদে যোগদানের আগে তিনি নতুন পদ নিয়ে কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন। কিন্তু এ মাসের প্রথমদিকে যোগদানের পরই রাজউকের সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত হন। তখনই সাড়ে ১২শ’ প্লট বরাদ্দের বিষয়টি জানতে পারেন। একই সঙ্গে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নিয়ে মামলা চলমান থাকার বিষয়টি জানতে পারেন। সাঈদ হাসান শিকদার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পর সাড়ে ১২শ’ প্লট বরাদ্দ নিয়ে মন্ত্রণালয় চাপ দেয়। পরে সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় নতুন চেয়ারম্যান পদে সাঈদ হাসান শিকদারকে বিভিন্ন ভাষায় কথা বার্তা বলা হয় এবং সভায় তাকে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলা হয়। তখনই নতুন চেয়ারম্যান ছুটিতে যেতে বাধ্য হন। রাজউকে বলাবলি হচ্ছে, নতুন চেয়ারম্যান পদে সাঈদ হাসান শিকদার যোগদান করলেও তিনি আর রাজউকে ফিরছেন না। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের আশীর্বাদপুষ্ট এক অতিরিক্ত সচিবকে রাজউকের চেয়ারম্যান পদে নিয়ে আসা হচ্ছে, তিনিই চেয়ারম্যান পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজউক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ