পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা নতুন ভবনের আইসিইউ ইউনিটে অগ্নিকান্ডে তিন রোগীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। তবে আগুনে পুড়ে কারও মৃত্যু হয়নি, আইসিইউ থেকে স্থানান্তরের সময় ওই রোগীদের মৃত্যু হয়। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে নতুন ভবনের আইসিইউতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট কাজ করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী বলেছেন, ওই ইউনিটে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা ও আগুন লাগার পর স্থানান্তরের সময় অক্সিজেনের অভাবে মুমূর্ষু রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। ঢামেকের এনেসথেইসওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফ্ফর হোসেনকে প্রধান করে ৩সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। যাদের করুণ মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন-রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা কাজী গোলাম মোস্তফা (৬৩), পিতা কাজী বেলায়েত হোসেন। গত ১২ মার্চ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি আইসিইউর ৯ নম্বর বেডে ছিলেন। মানিকগঞ্জ সদর থেকে আসা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৮), পিতা আব্দুস সাত্তার মিয়া। গত ৪ মার্চ থেকে ভর্তি ছিলেন আইসিইউর ১১ নম্বর বেডে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা কিশোর চন্দ্র রায় (৬৮), পিতা বাদিরা লাল রায়। তিনি ৯ মার্চ ভর্তি হন। আইসিইউ’র ৮ নম্বর বেডে ছিলেন তিনি।
ঢামেকের উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আইসিইউতে থাকা রোগীদের স্থানান্তরের সময় ওই তিন রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের শরীরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি লাগানো ছিল। আগুন লাগার পর রোগীদের যন্ত্রপাতি খুলে স্থানান্তর করায় এবং সব জায়গায় ওইসব যন্ত্রপাতির সাপোর্ট না থাকায় রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। আগুনে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধারণা করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. নাজমুল হক বলেন, রোগীদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঢামেক করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ১৪ জন রোগী ছিলেন, বাকিদের অবস্থা ভালো।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা পরিদর্শক কামরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সকাল ৮ টা ১০ মিনিটের দিকে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে আমাদের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নতুন ভবনের চার তলার এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তিন রোগীকেকে আইসিইউ থেকে আমরা বের করে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাদের অবস্থা তখন সংকটপন্ন ছিল। আগুন সম্পূর্ণভাবে ৯ টা ৩০ মিনিটে নেভানো হয়েছে।
নিহত ওয়াটার অ্যান্ড ফায়ার ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির (ওয়াপদা) অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার কাজী গোলাম মোস্তফার ছোট ভাই কাজী শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার রাতে আমার ভাইকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তখন ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে তার কিছুটা ডেভেলপমেন্ট আছে। তখন তার অক্সিজেনের লেভেল ১০০ এর কাছাকাছি ছিল। আমরা সবাই একটু আশ্বস্ত ছিলাম যে, আমাদের রোগীর অবস্থা ভালো রয়েছে। তবে সকালে যখন আগুন লাগে, তখন পুরো রুমটি ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। ইউনিটের ভেতরে কোনও ফায়ার প্রোটেকশন ছিল না। এখনও আপনারা গেলে দেখতে পারবেন কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, আমি বাইরের প্রতিটি হাসপাতালে দেখেছি যে, ফায়ার স্টিংগার থাকে। কিন্তু এখানে কোনও ব্যবস্থা নেই। এঅবস্থায় রোগীগুলো মারা গেছে। আমার ভাই স্মোকের (ধোঁয়া) কারণে মারা গেছেন।
কিশোর চন্দ্র রায়ের স্বজন সুজন বলেন, আমার চাচা ৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন ১২ নম্বর বেডে আগুন লাগে। আগুনটা মুহূর্তেই অক্সিজেন হাইপার মনিটরে চলে যায়। তখন সবাই যার যার রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমাদের অনেক মানুষকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অক্সিজেনের অভাবে আমাদের রোগী মারা গেছেন।
আগুন লাগার একেবারে শুরুর দিকের চিত্র পাওয়া গেল ইসলামুলের কথায়। তিনি বলেন, ১২ নম্বর বেডের রোগির সামনে থাকা একটি পাইপ থেকে হঠাৎ সিগারেটের ধোঁয়ার মতো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। রোগীর সাথে থাকা একজন অভিভাবক হাত দিয়েই ওই ধোঁয়া নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন হঠাৎ করেই আগুন জ্বলে উঠে সেন্ট্রাল এসিতে চলে যায় এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে যায়। এর পরের মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সবাই ছুটোছুটি শুরু করল। ডাক্তার-নার্স, ওয়ার্ড বয় সবাই বের হয়ে যায়। যেসব রোগীর স্বজন ভেতরে ছিল তারাই তাদের রোগীদের কোলে এবং কাঁধে করে বের করেন। পাশে কোনো হুইল চেয়ার বা ট্রলি ছিল না। আমরা রোগীদের নিয়ে বের হয়ে পাশের সিসিইউতে যাই। তবে সেখানেও কোনো ডাক্তার ছিল না। সবাই রোগীদের নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। আমার মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে আমি আইসিইউয়ের খোঁজে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলি। তারা বলেছে যে, বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে দেবে, কিন্তু দেয়নি।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আইসিইউয়ের বেড প্রতি খরচ ধরেন প্রায় ২০ লাখ টাকা। যদি ১০ লাখ টাকা করেও ধরি তাহলে সবমিলে এতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক দুই কোটি টাকা। এ আইসিইউ এই মুহূর্তে চালানোর মতো অবস্থা নেই। ঘটনা তদন্তের পর নতুনভাবে, আরও উন্নত করে এই আইসিইউ চালু করা হবে। তবে সেটা সময়সাপেক্ষ। করোনার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই আইসিইউয়ে বেড ১৪টি। তাতে ১৪ জন রোগীই ছিলেন। তাদের সবাইকে আলাদা ১০ বেডের একটি আইসিইউ আছে সেখানে ও মানসম্পন্ন কিছু এইচডিইউ আছে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। কেউ কিন্তু আগুনে মারা যাননি। স্থানান্তরের পর অনাকাঙ্খিতভাবে তিন রোগী মারা যান।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের করোনার ব্যাপক কার্যক্রম। বলা যায় সারা দেশের করোনা আক্রান্ত অর্ধেক রোগীর চাপ সামলাই আমরাই। আমাদের মোট আইসিইউ ২৪ বেডের। এর মধ্যে ১৪ বেডের আইসিইউতে আগুন লাগে। এছাড়া আমাদের রয়েছে মানসম্পন্ন এইচডিইউ। কবে নাগাদ এই আইসিইউ চালু করা সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলে, এটা চালু করা এখনই সম্ভব নয়। এটা আমরা নতুন করে সুন্দর করে তৈরি করবো।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের ডিডি দেবাশিষ বর্ধন জানান, আইসিইউতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) নূর হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক ছাড়াও একজন ডিএডি ও দুজন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদেরকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আইসিইউর রোগীদের হাই ফ্লু নেজাল ক্যানোলা থেকে এই আগুনের সুত্রপাত হতে পারে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে। আইসিইউতে ফোম, প্লাস্টিকের বিভিন্ন আইটেম থাকায় ব্যাপক ধোয়ার সৃষ্টি হয়। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে আইসিইউ প্রস্তুত করা হবে। উল্লেখ্য, করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে গত বছরের ২৭ মে করোনা ইউনিটে অগ্নিকান্ডে ৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।