দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহান আল্লাহ মানুষ কে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। দিয়েছেন জ্ঞান,বুদ্ধি,বিবেক,বিবেচনা বোধ। প্রত্যেক সৃষ্টির আকার-আকৃতিতে ভিন্ন।নারী-পুরুষ ভিন্ন বৈশিষ্টের অধিকারী।উভয়ের মাঝে প্রেম,ভালোবাসা,মায়া-মমতা,অনুগ্রহ সুখ-শান্তি বিদ্যমান। এরশাদ হচ্ছে- ‘হে মানব সমাজ। তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর,যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত সম্পকিত আত্নীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক’।(আন নিসা)।
মহান আল্লাহ আল কোরআনে নারীর অধিকার আদায়ে ‘আন নিসা’ নামক একটি সুরা অবর্তীন করেছেন। সুরাটিতে নারী সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে নারী সর্ম্পকে জানা ও বুঝার প্রয়োজন। নারী কে? নারীর অধিকার কি ? পুরুষের বিপরিত লিঙ্গ হচ্ছে নারী। যা পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী। পুরুষের বিপরিতে নারী, আবার নারীর বিপরিতে পুরুষ। প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গে বিরাট পার্থক্য। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরিক্ষায় নারী পুরুষ উভয়ের উচ্চতায় পার্থক্য রয়েছে। নারীর গড় উচ্চতা ১২ সেন্টি মিটার। পুরুষের গড় ওজন ৪৭ কিলো গ্রাম, নারীর গড় ওজন ৪২.৫ কিলো গ্রাম। পুরুষের তুলনায় নারী দুর্বল। পুরুষ প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১১ ড্রাম কার্বন,নারী প্রতি ঘণ্টায় ছয় ড্রাম জ্বালাতে সক্ষম। আদি পিতা হযরত আদম (আ) প্রথম মানুষ।বেহেস্তে তার একাকিত্ব জীবন হয়ে উঠে আনন্দ হীন। তখন আল্লাহ তাআলা তার পাজরের বাকা হাড় থেকে মা হাওয়া (আ) কে নিধারিত গুনাবলী, ও বৈশিষ্ট দিয়ে সৃষ্টি করেন। নারী যখন নিধারিত মৌলিক গুনাবলি ও বৈশিষ্ট থেকে বের হোন, তখনই সঠিক পথ থেকে ছিটকে পড়েন। বিশ্ব নবী (দ) বলেন,‘নিশ্চয় নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাজরের হাড় থেকে। আর পাজরের হাড়ের সবচেয়ে বাকা হাড় হলো উপরি ভাগ। যদি তাকে ঠিক করতে যাও,তাহলে তুমি ভেঙ্গ ফেলবে,আর যদি তুমি তাকে দিয়ে সংসার করতে চাও, তাহলে বাঁকা অবস্থাতেই তোমাকে তার সাথে ঘর সংসার করতে হবে’।
যুগে যুগে মানুষ ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে অপ সংস্কৃতিতে ডুবছে।কালের আর্বতন-বিবর্তনে সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে। সময়ের চলমান স্রোতে গা ভাসিয়ে নারীরা তাদের আস্তিত্ব হারাতে বসেছে। জাহেলি যুগে সম্পদে নারীর অংশ ছিল না। তখন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দুত হযরত মোহাম্মদ (দ) নারীর অধিকার ঘোষনা করেন। একজন নারী মালিকানাধীন সম্পত্তি হস্তান্তর, পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদে তার অধিকার রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সর্ম্পকে আদেশ করেন,একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। আর যদি শুধু নারীই হয় দু’এর অধিক,তাহলে তাদের জন্য ওই ত্যাজ্য মালের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি একজনই হয়, তাহলে সে জন্য অর্ধেক’ (নিসা)। অন্য কোন ধর্মে স্বামীর সম্পদে নারীর কোন অংশ না থাকলেও ইসলাম ধর্মে স্বামীর সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-‘স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক চর্তুর্থাংশ যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ’(নিসা-১২)। শুধু স্বামীর সম্পদে নয়, ছেলের সম্পদে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-‘মৃতের কোন পুত্র থাকলে পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য (সন্তানের)ত্যাজা সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ । যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়,তবে মাতা পাবেন তিন ভাগের এক ভাগ’(নিসা-১১)। মহান আল্লাহ তাআলা এ ভাবে অধিকার বঞ্চিত নারীকে সম্পদে অধিকার দিয়েছেন।
নারীর অধিকার এখানেই শেষ নয়। সর্বক্ষেত্রে নারীর অধিকার রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেন,‘নারীরা তোমাদের পোষাক-পরিচ্ছদ এবং তোমরাও নারীদের পোষাক –পরিচ্ছদ’।বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘যাকে চারেেট জিনিস দান করা হয়েছে,তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের শ্রেষ্ঠ্য বস্তু দান করা হয়েছে। কৃতজ্ঞা আত্না,যিকির কারী রসনা,বিপদে ধৈর্য্যধারী শরীর ও বিশ^স্ত নারী’। তিনি (দ) আরো বলেন,‘পৃথিবীর সব কিছুই সম্পদ,সম্পদগুলোর মধ্যে নারীই হলো সর্ব শ্রেষ্ঠ সম্পদ’। জাহেলি যুগে নারীর কোন মর্যাদা ও সম্মান ছিল না। কন্যা সন্তানকে অত্যাচার করে হত্যা করা হতো। দেয়া হতো জীবন্ত কবর। বিশ্ব নবী (দ) বলেন,‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তানকে বয়োস প্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করবে সে ও আমি কিয়ামতের দিন এতটুকু কাছা কাছি থাকব’। বিশ্ব নবী (দ) বলেন,‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজের স্ত্রীর কাছে ভালো তারা ইসলামের কাছেও ভালো। আমি আমার স্ত্রীদের কাছে ভালো ব্যক্তি’।তিনি (দ) বলেন,‘সচ্চরিত্র ও স্বীয় স্ত্রীদের প্রতি সহৃদয় ব্যক্তি নিশ্চয় পুর্ণ ইমানদার’। ‘তুমি যখন খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে,তুমি যখন কাপড় পরবে তখন তাকেও পরাবে। তার দোষ খুজবে না’।‘যখন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সাথে প্রেমে ডুবছে। চাউনির বিনিময় করে,তখন আল্লাহ পাক উভয়ের দিকে করুনার দৃষ্টি দেন।অতপর যখন স্বামী-স্ত্রী হাত ধারন করে, তখন তাদের আঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে পাপ রাশি ঝরে পড়ে’। প্রত্যেক ধর্মে ‘মা’শব্দটি সম্মানের। ইসলাম ধর্ম সর্বদা মাকে সম্মান ও মর্যাদা নিমিত্তে উতসাহ দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে-‘তুমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না,এরং মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমাদের সামনে তাদের কেউ অথবা দু’জনেই বৃদ্ধাবস্থায় পৌছেন তবে তাদেরকে তোমরা কথা দ্বারা কষ্ট দেবে না। এবং তাদেরকে ভতসনা করবে না। বরং তাদের সাথে সম্মান সুচক ব্যবহার করবে। তাদের জন্য বিনয় ও ভদ্রতা সহকারে শ্রদ্ধার বাহু প্রসারিত করবে এবং আল্লাহর কাছে বলবে,হে প্রভু তাদের প্রতি আপনি সদয় হোন যেভাবে তারা আমার শিশুকালে দয়ার সাথে আমাকে প্রতিপালন করেছেন’। বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘বাবা- মা তোমার বেহেস্ত ও দোযখ’। এভাবে অসংখ্য কোরআন ও হাদীস দ্বারা নারী অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান সমাজে কতিপয় মুখোশ ধারি নেতার আবিভাব ঘটেছে। যারা নারীকে পর্দা থেকে বের করার পয়তারা করছে। পর্দার সুফল হলো ইহকাল ও পরকালে শান্তি,হিফাজত, নিরাপত্তা এবং সমাজ জীবনে শান্তি লাভ করা ।এরশাদ হচ্ছে-‘মহিলারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা তাদের চেহারা আবৃত করে রাখে’(নুর-৩০)। বিশ্ব নবী (দ) বলেন‘মহিলারা যেন তাদের পায়জামা পায়ের গোছা হতে এক বিঘত পরিমাণ নীচে নামিয়ে দেয়’। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে‘যখন তোমরা(পুরুষরা) নিজেদের ব্যবহারের জন্য তাদের (মহিলাদের) নিকট হতে কোন জিনিস চাইবে,তখন পর্দার আড়াল হতে চাইবে’(আহযাব-৫৩)। পর্দার হুকুম পালন করা ফরজ। অথচ,এক শ্রেনীর মানুষ রয়েছে,যারা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পর্দার বিধান কে অস্বীকার করেন। এরশাদ হচ্ছে-‘হে রাসুল! মুমিন পুরুষগণকে বলে দিন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই হলো তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা’। ‘হে রাসুল! আপন বিবি,কন্যা,এবং মুমিন মহিলাদের বলে দিন,তারা যেন তাদের পবিত্র শরীর ও মুখ মন্ডল হিজাব দ্বারা আবৃত করে রাখে। ইহাতে তাহাদিগকে চেনা সহজতর হইবে। ফলে তাহাদিগকে উত্ত্যক্ত করা হইবে না। আল্লাহ ক্ষমাহশীল,পরম দয়ালু’।(আহযাব-৫৯)। আল্লাহ আরো বলেন,‘মহিলারা তাদের পা মাটির উপর এমন ভাবে ফেলবে না,যাতে পুরুষদের নিকট তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশ হয়ে পড়ে’(নুর ৩১)। অপর দিকে বে-পর্দার কারনে ইহকাল ও পরকালে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। যারা নারী স্বাধীনতা, অধিকারের কথা বলে, তারাই তো নারীকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে।তারা জানে নারীর অধিকার কি ? নারী অধিকার কাকে বলে? তারা দেন মোহরের পরিবর্তে মোটা অংকের যৌতুক নিয়ে বিবাহ করেছে। যৌতুক নেয়া হারাম। কোরআনের আইন অমান্য করে সম্পদ ছেলেকে দিয়েছে।পর্দার মা-বোনকে মিটিং,সভা,সমাবেশ,মিছিলের সামনে রেখেছে।ঝড়-ঝাপটা,মারা মারি,শ্লীলতা,অসম্মান সব নারীর উপর পড়ছে। নারী অধিকার আদায়ে এসে, অধিকার হারিয়ে বাড়ি ফিরছে। এটা কোন ধরনের সভ্যতা? পুরুষ নাম সর্বস্ব নেতা মানুষটি রয়েছে পিছনে। পৃথিবী জুড়ে কোন ধর্ম, জাতি,গোষ্টি বা সম্প্রদায় নারীর অধিকার দিতে সর্বদা ব্যর্থ। একমাত্র শান্তির ধর্ম ইসলাম দিয়েছে নারীর পুর্ন অধিকার।
পরিশেষে বলতে চাই,ইসলাম শান্তির ধর্ম,সাম্যের ধর্ম। এ ধর্মে কোন ভেদা ভেদ নেই। সবার অধিকার সমান। নারী পিতা-মাতা,স্বামী,সন্তানের সম্পদে অধিকার রয়েছে। আবার বিবাহের সময় দেন মোহর নিধারিত।দেন মোহর ছাড়া বিবাহ বৈধ্য নয়। সর্ব ক্ষেত্রে নারীর বিরাট অধিকার বিদ্যমান। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানে আল্লাহর আইন অমান্য করা। আল্লাহর আইন অমান্য কারী কাফের। আমরা মুসলিম। নারী অধিকারের পাশা পাশি যেন সব অধিকার আদায় করার সুযোগ পাই। এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: প্রভাষক আরবী, পঞ্চগড় নুরুন আলা নুর কামিল মাদ্রাসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।