Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রচারণার অভাব, রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নিচ্ছেন না

করোনা ফের শক্তিশালী হওয়ার কারণ জানালেন বিশেষজ্ঞরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশে গত কিছুদিন থেকে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অন্যদিকে দিনে দিনে মানুষের মধ্যে কমছে টিকা নেয়ার আগ্রহ। টিকা নিয়ে নানামুখী বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নিচ্ছেন না। আবার টিকা দিতে সুরক্ষা পোর্টালের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়। এই সুরক্ষা পোর্টালে চাহিদামতো সব সুবিধা না থাকায় টিকাদানে নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। আর তাই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও সুরক্ষা পোর্টালের জটিলতায় মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেনা। আর তাই টিকা নিয়ে সার্বিকভাবে মানুষের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে।

এছাড়া গত প্রায় এক মাসের মধ্যে টিকার নতুন কোনো চালান না আসায় কমে যাচ্ছে টিকার মজুদও। কবে নাগাদ পরবর্তী চালান আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণেও টিকার নিবন্ধন কমে যাচ্ছে। কেন নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণ কমে যাচ্ছে এবং কেনই বা টিকার চালান আসছে না-এসব প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম মাঠে নেমেছে টিকা কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে।

টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে নিবন্ধন জটিলতা বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীবান্ধব নিবন্ধনব্যবস্থা এখনো চালু না হওয়াকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য কেউ কেউ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহির্বিশ্বে টিকার নানা ধরনের বিভ্রান্তির প্রভাব পড়ছে বলেও মনে করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে করোনা টিকা দেয়ার প্রথম ধাপে ৪০ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী ও ফ্রন্টলাইনারদের মিলে তিন কোটি ৯৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৫৮ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন। আগের দিন যা ছিল ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ১৯৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় নিবন্ধন করেছেন ১ লাখের কিছু বেশি। যা ঘণ্টা হিসাবে ৪ হাজারের কিছু বেশি। অথচ গত মাসেও প্রতি ঘণ্টায় গড়ে পাঁচ হাজারের ওপরে নিবন্ধন হয়েছিল।

অন্যদিকে নিবন্ধনকৃতদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৯১ জন। যা আগের দিন ছিল ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫৪ জন। গত কয়েকদিন আগেও যেখানে প্রতিদিন ১ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিতেন এখন তা কমেছে। গতকাল তা কমে নেমেছে ৮৪ হাজারে ৪৩৭ জনে। যা গত মাসের তুলনায় অনেক কম।

রোগতত্ত¡ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘মানুষকে টিকার নিবন্ধন করানো ও টিকা গ্রহণে উদ্বুব্ধ করার কাজটি সরকারি পর্যায় থেকেই জোরদার করতে হবে। এর সঙ্গে সামাজিকভাবেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে নিবন্ধনজনিত জটিলতা; এখন পর্যন্ত আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীবান্ধব নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করতে পারিনি। ফলে বিষয়টিকে অনেকেই ঝামেলা মনে করছে।

অনেকেই নিবন্ধন করেও টিকা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহির্বিশ্বে সা¤প্রতিক সময়ে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ কিছু বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারে প্রভাব পড়েছে। যা দূর করার তাগিদ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, টিকা নেয়ার সংখ্যা কমে যাওয়া আমাদের জন্য একটা চিন্তার ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করছি প্রচার-প্রচারণা বাড়িয়ে যাঁরা এখন টিকা নিচ্ছেন না, তাঁদের টিকা নিতে উদ্বুব্ধ করার জন্য।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকা ব্যবস্থাপনা) ডা. শামসুল হক টিকার বাকি চালান কবে আসবে জানতে চাইলে বলেন, এখনো আমার কাছে নিশ্চিত কোনো খবর নেই। দিনক্ষণ ঠিক হলে জানানো হবে। একই সঙ্গে টিকা নেয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি দেখছি। কেন টিকা নেয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে, সেটাও দেখছি।

এদিকে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় দ্বিগুণ বেড়েছে করোনা রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে করোনা। অ্যান্টিবডি তৈরির পরও সংক্রমিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই বলে মত তাদের।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড ইউনিটেও মাঝে একেবারেই কমে এসেছিল চাপ। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাজমুল করিম মানিক বলেন, আগের চেয়ে সংক্রমণ বেড়েছে। আগে ৩০০-৩৫০ পরীক্ষা করে পজিটিভ আসতো ৩০ জন। এখন আসে ৪৫ জন।

সবশেষ ছয়দিনেই দেশে গড়ে ১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ফেব্রুয়ারিতে আড়াই শতাংশের নিচে নামা শনাক্তের হার এখন সাড়ে ৯ শতাংশ। হঠাৎই কেন বাড়লো সংক্রমণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের মতো এ বছরও একই মৌসুমে শক্তিশালী হয়ে বিস্তার ঘটাচ্ছে করোনা। টিকা নেয়ার পরও সংক্রমণ ঘটছে কি না, তা নিয়েও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ও সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাজ্যের করোনার যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছিলো; সেটা যাতে না আসে অনেক পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে করোনার নতুন ধরনে ছয়জন শনাক্ত হয়েছে। এর মানে এক হাজার জনের বেশি ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে, দেশে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বেলায় একেবারেই উদাসীন মানুষ। একজন জানান, দুই মিনিটের জন্য বের হয়েছি। সেজন্য মাস্ক নিয়ে আসিনি। শুধু এটাই নয়; হাট-বাজার থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। আর তাই করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানার জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।#



 

Show all comments
  • দুলাল ১৭ মার্চ, ২০২১, ৩:০৮ এএম says : 0
    টিকা না নেয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ