Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

এলজিএসপি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

মোশফিকুর রহমান সৈকত, নীলফামারী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, চাঁদখানা ও নিতাই ইউনিয়নে লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (্এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে খোদ পুটিমারী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাহেরা বানু।

অভিযোগ ও সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে লোকাল গর্ভনমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট এলজিএসপি-৩ প্রকল্প থেকে উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নে ১৭টি প্রকল্পে ২২ লাখ ১৬ হাজার ১৭১ টাকা, একই অর্থবছরে পিবিজি থেকে তিনটি প্রকল্পে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৪ টাকা। নিতাই ইউনিয়নে ২০টি প্রকল্পে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৪১ টাকা এবং চাঁদখানা ইউনিয়নে ১০টি প্রকল্পে ২১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজে এক নম্বর ইট ব্যবহারসহ প্রকল্প এলাকার জনসাধারণকে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করার জন্য তথ্য বিবরণ সংবলিত সাইনবোর্ড লাগানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রকল্পের সভাপতিরা তা না করে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করছেন। ফলে কাজ বাস্তবায়নের এক মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজে ভাঙনসহ ফাটল দেখা দিয়েছে।

পুটিমারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর প্রকল্পের কান্দুরার মোড় থেকে শুরু করে ছমেরের পাড়া যাওয়ার সড়ক সিসিকরণ কাজের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৪ টাকা। ঐ সড়কে গিয়ে দেখা যায় সড়ক নিমার্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু প্রকল্পে কেনো তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড নেই। ঐ এলাকার বাসিন্দা সোহানুর রহমান, লাকি বেগম, মোশফেকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবার রহমান বাদশা তড়িঘরি করে নি¤œমানের সালটু ইট দিয়ে সড়ক নির্মাণ করেছেন। এ কারণে নির্মাণের এক মাসের মধ্যেই সড়কটিতে ফাটল ধরেছে। একই ওয়ার্ডের খেজুরপাড়া থেকে কান্দুরার মোড় যাওয়ার সড়কে দেখা যায় এলজিএসপির অর্থে নির্মিত একটি কালভার্ট ধসে পড়েছে। এ বিষয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবার রহমান বাদশা বলেন, সড়কে কাজ আমি করিনি চেয়ারম্যান নিজে করেছেন। কালভার্ট ধসে যাওয়ার বিষয়ে বললে তিনি বলেন, এটি পূর্বের অর্থ বছরের।

নিতাই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর প্রকল্পে দুলাল মৌলভীর পুকুর পাড়ে কাঁচা সড়কের পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয় ২ লাখ টাকা। ঐ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ, বাদশা মিয়া, কেরামত আলী বলেন, চেয়ারম্যান মাহিন্দ্র ট্রাক্টরে করে দুই থেকে তিন ট্রলি ইট এনে তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে গেছেন। এছাড়াও নিতাই ইউনিয়নের কাচারীরহাট থেকে মৌলভীরহাট যাওয়ায় সড়কে নির্মিত একটি কার্লভাট নির্মাণ করার কয়েকদিনের মাথায় ভেঙে পড়েছে। এদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের শাহপাড়া মসজিদ থেকে শুরু করে নাপিতপাড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার জন্য এলজিএসপি প্রকল্পের জেলা ডিএফও বরাবর অভিযোগ জানিয়েছে এলাকাবাসী।

নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক বলেন, আমি স্বচ্ছতার সঙ্গে এলজিএসপির কাজ করছি। তিনি কাজে সকল অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাহলে কাজ করার কয়েক দিনের মাথায় কার্লভার্টের এলিং ভেঙে গেল কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রথমে নিজেদের পকেট থেকে প্রকল্পের কাজ করতে হয়। যদি কালভার্টের এলিং ভেঙে থাকে তাহলে পুনরায় মেরামত করা হবে।

পুুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। কেউ অভিযোগ দিলে আমার করার কী আছে। কাজ করার কয়েক দিনের মাথায় সড়কে ফাটল ধরল কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এগুলো দেখতে যাওয়া কী দরকার, আসেন কথা হবে’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, নীলফামারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এলজিএসপি প্রকল্পের নীলফামারী জেলা ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফও) আবু হেনা মোস্তফা বলেন, চাঁদখানা ইউনিয়নের এলজিএসপির কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে বিল বন্ধ রাখা হয়েছে। সব প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন সাপেক্ষে বিল প্রদান করা হবে। কাজে অনিয়ম হলে পুনরায় কাজ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ